জমানো
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
রান্না ঘরের এক কোণে পড়ে থাকা বিরাট গা ফুটো মাটির জালাটার ওখানে থাকার তেমন কোন দরকার নেই। তবুও আছে। তিন পুরুষের না না না তিন নারীর আমলের ব্যবহৃত বলে। এখন বৌমা ওটা শুধু মাঝে মধ্যে সাফ করে। একটু ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে গা, কানা মোছে মাত্র। মাকড়সার জাল, ঝুল, ধূলো পড়ে তো। বৌমার শাশুড়ী ওর ভেতরে পাকা তেঁতুল গাছ থেকে লোক উঠিয়ে পারিয়ে তা চাঁদের আলোয় উঠোনে খেঁজুর পাতার চ্যাটা মিলে পা ছড়িয়ে বসে বোঁটিতে কেটে কেটে কেটে বীজগুলো বের করে নিয়ে সেই তেঁতুল ওই জালায় জমিয়ে রাখতো। আর সারা বছর নিজের ও পাড়ার সবার কাজে লাগতো। যার যখন দরকার পড়ত এসে চেয়ে নিয়ে যেত। আর সে উদার হস্তে তা দান করত। বীজগুলো গরুর গোবরের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে বলত ঝিকে ও তা দিয়ে ঘুঁটে দিতে বলত। এতে করে ওই ঘুঁটে খুব ভালো জ্বলে। এবার তারও আগের - তার শাশুড়ী ওর ভেতরে নানান বীজ জমা করে রাখত। ওটার নাম ছিল, বীজের জালা। সবাই ও বীজ চেয়ে নিয়ে গিয়ে গাছ করত। তার ফুল, ফল সব্জী নিজেদের সংসারের কাজে লাগাত। সে নিজের পরিবারের কাজেও লাগাতো। শখের বাগান ছিল যে তার। এ যেন নোহার গল্পের মত। এক কথায় জালাটি সংরক্ষণ কার্যে ব্যবহৃত হত। এবার এই বৌমা এতে কিছুই রাখে না। খালি পড়ে আছে। গায়ের ফুটোগুলো দিয়ে পিঁপড়া ভেতরে ঢোকে। তাই একদিন ও ওটি বাড়ির ঝিকে দিয়ে দিল। সে বলল, "আমি এটি নিয়ে কি করব? তুমিই রেখে দাও!" তো বৌমা ওটার ভেতরে পুরোনো আমলের রজত বর্তনগুলি রেখে দেয়। জালার মুখটায় একটা বিরাট পিতলের হাঁড়ি বসিয়ে রেখেছে। ওটায় রোজ রান্নার চাল থাকে। ওটার মুখেও ঢাকা দেওয়া। হঠাৎ একদিন জালাটা নিজে নিজেই ভেঙে গেল। পরে টুকরোগুলি বৌমা ফেলতে গিয়ে দেখল, তাতে আটকে রয়েছে প্রচুর হীরে। অবাক। ও বুঝলো না কীভাবে এ সম্ভব? জালাটা তো কুমোর প্রথমে মাটি দিয়ে বানায়। তারপর তো সেই কাঁচা জালা আগুনে পুড়িয়ে পাকা করে। কিভাবে হীরেগুলি ওটার গায়ে আটকে গেছে? তবে ও বুঝলো যে এ ধন তিন নারীর আগের রক্ষিত। বীজ সংরক্ষণ করত যে সে - ই এই সম্পদের অধিকারিণী ছিল। যাক, ও সেগুলি খুলে নিয়ে নিজের আলমারীর লকারে জমিয়ে রাখলো। কেউ জানলো না। এবার সে বৃদ্ধা হল। মারা গেল। তার বৌমা লকার থেকে ওগুলি নিয়ে গয়না গড়িয়ে পড়ল।
================
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
দিল্লী