উত্তীর্ণা
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
জীবনের প্রতিটি পদে লড়াই করতে হয়েছে অগ্নিকে। কখনো কোন কিছু সহজে বা অনায়াসে পায়নি সে। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুরা যখন একগাদা পকেটমানি পেত আর ফুর্তি করত; তখন সে কলেজের খরচ মেটাতে দু'বেলা টিউশনি করত। এমনই একটি টিউশনি করতে গিয়ে উর্নার সঙ্গে পরিচয়। ওর ভাইকে অঙ্ক শেখাত। তারপর আলাপ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হলো। একে অপরকে জানল, বুঝল। আর এটাই বুঝল যে, দু'জনের চিন্তা, ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে আলাদা। কাজেই দু'জনের সম্পর্ক আর এগোয়নি। নিস্পৃহভাবে কিছুদিন টিউশনিটা করলেও, অস্বস্তি দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল। কাজেই সেটা ছাড়তে হলো। অগ্নির অবশ্য অন্যত্র টিউশনি জুটে গেল।
তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। ওসব এখন ইতিহাস। পড়া শেষ করে অগ্নি আজ চাকরিতে জয়েন করবে। ইতিমধ্যে পৌছে গেছে কোম্পানির সদর দপ্তরে। অগ্নি সেন। নতুন আই . টি ম্যানেজার। রিপোর্ট করবে এইচ. আর হেডের কাছে। বসে আছে তার চেম্বারের সামনে। হঠাৎ চমকে ওঠে অগ্নি। কে ঢুকল ওই চেম্বারটায়! কাছে গিয়ে নেমপ্লেটে দেখল ইউ.গাঙ্গুলী, এইচ.আর. হেড। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কি করবে, ভাবতে ভাবতেই বেয়াড়া ডেকে পাঠাল অগ্নিকে।
জড়তা কাটিয়ে ঢুকল- ' মে আই কাম ইন? '।
' ইয়েস প্লিজ ।' ব'লে চোখে তুলে তাকাতেই অগ্নি দেখল, হ্যাঁ উর্নাই তো! কালো চশমা পড়া।
খুব ফর্মাল কয়েকটি কথা হলো। নেহাতই কাজ বিষয়ক। দু'একবার যে অগ্নি অবাক হচ্ছিল না, তা কিন্তু নয়। কিন্তু উর্নার স্বভাব মনে ক'রে চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করল।
বাইরে এসে অগ্নি কিছু কাগজে সইসাবুদ করছে। হঠাৎ দেখল উর্নাকে বেরিয়ে যেতে।
আশ্চর্য, সঙ্গে একটি মেয়ে হাত ধরে যাচ্ছে।
সে আর কৌতূহল চেপে রাখতে পারল না। ডেস্কে জিজ্ঞাসা করে বসল।
কয়েক বছর আগে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ওনার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। এমনকি পুরনো অনেক স্মৃতিও সে ভুলে যায়। কিন্তু কাজের ব্যাপারে সে একইরকম তুখোড়, আজও। তাই সুস্থ হবার পর কোম্পানি তাকে আবার কাজে নেয়, সসম্মানে।
অবাক হয়ে যায় অগ্নি । সত্যি সময় আবার তাদের মেলাল। তাও এভাবে!
অগ্নির মনে হয়, সামনে তাহলে আবার লড়াই। এক নতুন লড়াই!
---------------------------------
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহার
9434169796