ছোটগল্প ।। দুলালী ।। শংকর লাল সরকার
দুলালী
শংকর লাল সরকার
খাবার দেখলেই দুলালীর নোলা লকলক করে উঠে। ক্ষিদেতে চকচক করে উঠে ওর সরল নিস্পাপ চোখের তারা। মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকে, বাপটা কবে যে ফিরবে। লোহার লাইন কাঁপিয়ে ঝমঝম করে ট্রেন চলে গেলে ঝুপড়ি ঘরটা কেঁপে উঠে ভূমিকম্পের মত। দুলালী তার ক্ষিদেয় কাতর চোখ মেলে দেখত ধূধূ ধুলো উড়িয়ে মেলট্রেনটা চলে গেছে। ঝুপড়ি থেকে বাইরে এসে আতিপাতি করে খোঁজে বাবুদের ফেলে দেওয়া ঠোঙায় মোড়ানো বাসি খাবার, জ্যাম বা মাখন লাগানো আধখাওয়া পাউরুটি।
দুলালীর চারবছরের ছোট ভাই মঙ্গল তোতাপাখির মতো কথা বলে। তার কথা এত আধোআধো, নরম আর মিষ্টি যে দুলালী ক্ষিদে ভুলে হাঁ করে ওর কথা শোনে।
দিদিরে ভোখ লাগে, দে না কিছু খাবার। সেই কখন থেকে কিছু খাইনি, পেটের মধ্যে হড়হড় করছে। দুলালী মঙ্গলের কচি পেটে কান পেতে শুনতে পায় গুড়গুড় একটা আওয়াজ। ক্ষিদে লাগলে পেটও রাগে গরগর করে, কুঁকড়ে যায়, কৃমিজল কাটে এটা সে হাড়ে হাড়ে টের পায়।
মফস্বল শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে রেললাইনের ধারে গজিয়ে উঠা পাঁচ সাতটা ঝুপড়িতে ওদের মতো হাড়হাভাতে কিছু লোকের বাস। খেটে খাওয়া মানুষের বস্তি। স্টেশনও এখান থেকে মাইলখানেকের পথ। স্টেশনের ধারে ওরা পাত্তা পায়নি। যতবারই সেখানে দুলালীর বাপ, লালন ঝুপড়ি বেঁধেছে ততবারই পুলিশ এসে ঘর ভেঙে দিয়েছে।
ঝুপড়িগুলো থেকে জোয়ান মরদেরা সকালে ভিজে ভাত পুটুলিতে বেঁধে চলে যেত দূরের গ্রামগুলোতে মুনিষ খাটতে। কিন্তু গত দুবছর সেখানেও কাজের ভীষন অভাব।
দুলালীর বাপ ট্রেনে চেপে অনেকদূর দেশে গেছে। সেখানে নাকি অনেক কাজ, কিন্তু কাজের লোকের অভাব। যে মানুষটা ওকে নিয়ে গেল, সেই লোকটাই যাবার সময়ে দুলালীর হাতে তিনশ টাকা দিয়েছিল ঘরখরচের জন্য। টাকাটা হাতে নিয়ে দুলালীর মনে হয়েছিল এমন মানুষই দেবতা। লালন চলে গেল লুঙ্গী, কোদাল আর একটা গামছা নিয়ে। যাবার সময়ে সে দুলালীর মাথায় হাত রেখে বলে গেল ভাইকে দেখিস, আর মন খারাপ করবি না। সময় পেলেই আমি চলে আসব। তখন আবার খাইখরচের কিছু টাকা দিয়ে যাব। কোথায় কতদূর যাচ্ছে সে সম্পর্কে লালনের কোন স্পষ্ট ধারনা ছিল না। দুলালীকেও তাই সে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারলনা। বলল যেখানে যাচ্ছে সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর চুড়ি পাওয়া যায় বাড়ি আসার সময়ে দুলালীর জন্য বেশকিছু চুড়ি কিনে নিয়ে আসবে। লালন বলল তোর হাতের ঐ ফাটা চুড়িটাই খুলে দে, মাপ না থাকলে চুড়ি কেনা আবার খুব ঝামেলার।
মথুর ওদের সর্দার। রাজমিস্ত্রীর কাজের পাশাপাশি সাইটে লেবার সাপ্লাই দেয়। বেশ ভালো টাকা কমিশন এই কাজে। ট্রেনে গাদাগাদি করে গোটা একদিন চলবার পর লালনদের একটা স্টেশনে নামানো হল সেখান থেকে আবার একটা ম্যাটাডোরে চাপিয়ে সাইটে নিয়ে যাওয়া হল। বিরাট বড়ো বড়ো বাড়ি তৈরী হচ্ছে, লালনের মতো লোকেরা সেখানে লেবারের কাজ করবে।
মথুর বলল এটা দিল্লির কাছাকাছি নয়ডা বলে একটা জায়গা। দিল্লি হল আমাদের দেশের রাজধানী।
লালন ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল দিল্লি থেকে ওদের দেশ কত দূর।
মথুর বলেছিল অনেক, ট্রেনে প্রায় একদিনের পথ।
আর হেঁটে গেলে- বোকার মত শুধিয়েছিল লালন।
হাসতে হাসতে মথুর বলেছিল হেঁটে যেতে দশ বারো দিন লাগবে।
সারাদিন হাড়ভাড়া খাটুনির পর সন্ধ্যার সময়ে যখন নিজেদের অস্থায়ী ঝুপড়িতে আসত তখন শরীর আর চলতে চাইত না। দুলালী আর মঙ্গল কী করছে? ওদের মা মারা যাবার পর থেকে লালন ওদের আগলে রেখেছিল। বাপকে ছাড়া কখনও একটি রাতও ওরা কাটায় নি। আর এখন - চিন্তায় লালনের ঘুম আসতে চায় না।
দুলালীকে লালন বলত তুই আমার মালক্ষ্মী। তোর মতো মেয়ে এই আকাট চাষার কপালে জুটবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। লালনের মালক্ষ্মী, আজকাল রেললাইনের ধারে খুজে বেড়ায় ট্রেন থেকে ছুড়ে দেওয়া আধখাওয়া বাসি উচ্ছিষ্ট খাবার। মঙ্গল খাবার জন্য দিনরাত ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদে আর জিজ্ঞাসা করে 'এই দিদি বাপ কবে আসবে রে? ওর জন্য আমার কান্না পায়।' মঙ্গলের কেন দুলালীরও তো কান্না পায়। তিনশ টাকাতে কয়দিনই বা চলে কিন্তু তবু এটা সেটা দিয়ে পাক্কা ত্রিশ দিন চালিয়ে দিয়েছে দুলালী। বাবার এখনও দেখা নেই। প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলে গেলে কত লোক হেঁটে যায় গ্রামের পথে –দুলালী হাপুস নয়নে চেয়ে থাকে। ওর শূন্য দৃষ্টিতে সেই চেনা শরীরটা কখনও ধরা দেয় না।
বাড়ি যাবার ইচ্ছা করলেও লালন ফিরবে কেমন করে। পুরো একমাস কাজ করলে তবে মজুরী পাওয়া যাবে। মজুরী বাবদ যে কটা টাকা পাওয়া যাবে সেটা না নিয়ে বাড়ি গেলে সেখানেও নিশ্চিত উপবাস। ক্ষিদে বড়ো বালাই। বুকে পাথর চাপা দিয়ে লালন দিন কাটাতে থাকে। একমাসের খাইখরচ বাবদ দুলালীর হাতে মাত্র তিনশ টাকা দিয়ে এসেছে। ঐকটা টাকায় দুজন মানুষের একমাস চলতে পারেনা। দুলালীর মুখটা লালনের মনে পড়ে। মেয়েটা দেখতে একদম মায়ের মতো। দুলালীর ম্লান, ক্ষুধায় কাতর মুখটার কথা ভেবে লালনের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কান্নার একটা ডেলা গলার কাছে আটকায়। দুলালী আর মঙ্গলকে হয়তো ভিক্ষা করে পেট চালাতে হচ্ছে।
আচমকা একদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। দুলালীর হল সর্বনাশ। সারাদিনে প্রায় দশবারোটা মেল ট্রেন যাতায়াত করত পাশাপাশি দুটি লাইন দিয়ে। খুজেপেতে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলা কিছু উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহ করা যেত। কিন্তু এখন সে পথ একবারে বন্ধ। ঝুপড়ির সবাই বলাবলি করতে লাগল করোনা মহামারির জন্য সারা দেশে সবকিছু বন্ধ। ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে বাপটা ফিরবে কিভাবে? এক সর্বগ্রাসী বিষন্নতা দুলালীর সমস্ত সত্ত্বাকে গ্রাস করে নেয়।
মাসকাবার হবার আগেই আচমকা লালনদের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। মথুর বলল করোনা মহামারির জন্য সারা দেশে লকডাউন ঘোষিত হয়েছে। এখন আর কোন কাজ হবেনা। কন্ট্রাকটর সাহেব সবাইকে কিছু কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে দিলেন। আপাতত তাই নিয়েই ফিরতে হবে। অনেকেই এই পরিস্থিতিতে বিষন্ন হয়ে পড়ল। তাদের ভয় হল, বোধহয় কাজ গেল। বকেয়া মজুরী কবে পাওয়া যাবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। বিষন্নতার এই পরিবেশে কিন্তু লালনের মনে একটা খুশির চোরা স্রোত বইছিল। কতদিন পরে সে দেশে ফিরে দুলালী আর মঙ্গলকে দেখতে পাবে। যেকটা টাকা হাতে পাওয়া গেছে তাতে দেশে ফিরে বেশ কিছুদিন ভালোভাবেই চলে যাবে। আসার সময়ে একটা পুটুলিতে বেঁধে লালন প্রয়োজনীয় কয়েকটা জিনিষ এনেছিল। এখন ওর একটা বাড়তি ব্যাগ হয়েছে। মঙ্গলের জন্য একটা নতুন জামা আর দুলালীর জন্য লাল রঙের একটা চুড়িদার কিনেছে। রঙচটা ছেড়া চুড়িদারটার বদলে এই নতুন চুড়িদারটা পরলে দুলালীকে কেমন সুন্দর লাগবে সেই কথা ভেবে লালনের চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আর দুসেট রঙিন চুড়ি। দুলালীর ফাটা চুড়িটার মাপ দিয়ে কেনা ঝলমলে চুড়িগুলোকে একটা ন্যাকড়ায় জড়িয়ে, যত্ন করে ব্যাগে ঢোকাল লালন।
লালন ভেবেছিল তার মন খারাপের দিন বুঝি শেষ হল। কিন্তু বাসস্ট্যাণ্ডে এসে পৌছতেই খুশির নীল আকাশটা দুশ্চিন্তার কালো মেঘে পুরোপুরি ছেয়ে গেল। হাজার হাজার মানুষ সেখানে এসে জড়ো হয়েছে। করোনার জন্য সবকিছু বন্ধ, কাজ হারানো খেটে খাওয়া মানুষেরা ঘরপানে যেতে চায়। কিন্তু যাবে কিভাবে? আচমকা দুদিন আগে থাকতেই লকডাউন শুরু হয়েছে। কোন আগাম প্রস্তুতি ছিলনা। এরকম ভাবে যে আচমকা সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে সেটা কেউই আঁচ করতে পারেনি। কোন বাস চলবে না। ট্রেন চলাচলও পুরোপুরি বন্ধ।
লালনরা জনা পনের লোক কিছুদূর হাঁটবার পর একটা লরি পেয়ে গেল। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে লরিওয়ালা ওদের নিয়ে যেতে রাজী। খুশির ভাবটা লালনের আবার ফিরে এসেছে, বেশ ফুরফুরে একটা আনন্দ হচ্ছিল ওর। কতদিন পরে ছেলে মেয়ে দুটোকে দেখতে পাবে। ব্যাগটাকে সাবধানে কোলের উপর রেখেছে। হাত ঢুকিয়ে ন্যাকড়ায় জড়ানো চুড়িগুলোকে একবার স্পর্শ করল। দূলালীর হাসিমুখটা ওর কল্পনায় ভেসে উঠল।
কিন্তু ওদের খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলনা। পুলিশের একটা গাড়ি ওদের লরিটাকে আটকাল। এতলোক একসঙ্গে থাকা ঠিক নয়। পুলিশের একজন লোক রাগত স্বরে মথুরকে কিসব বলতে লাগল। দুএকটা শব্দ ছিটকে কানে এল লালনের -সোসাল ডিসট্যান্সিং, কোয়রান্টিন, আইসোলেশন সেন্টার। কিন্তু কথাগুলোর মানে বুঝতে পারলনা। লালনরা হতাশ হয়ে দেখল ওদের লরিটাকে ঘুরিয়ে দেওয়া হল। কিছুদূর গিয়ে লরি পৌছাল একটা বড়ো বাড়ির সামনে। মথুর বলল এখন চোদ্দদিন এই ইস্কুল বাড়িতে ওদের থাকতে হবে যাতে করোনা মহামারি ছড়িয়ে না পড়ে। সবাইকে নামিয়ে দিয়ে লরিটা চলে গেল। পুলিশের লোকগুলো ওদের কড়া স্বরে বলল আইসোলেশন সেন্টারে সোসাল ডিসট্যান্সিং মেনে সবাইকে চোদ্দদিন কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। থাকা খাওয়ার জন্য কোন খরচ লাগবেনা।
লালনের মাথায় কিছু ঢুকল না। লরিতে ওরা মাত্র পনেরজন একসঙ্গে ছিল তাই ওদের কত ধমকাল অথচ এই স্কুলবাড়িতে সত্তর আশি জন লোক ঘেঁসাঘেঁসি করে রয়েছে। তবে কি সোসাল ডিসট্যান্সিং মানে কিছু লোককে সমাজ থেকে আলাদা করে আটকে রাখা!
ভিক্ষা করতে গেলেই দুলালীর বাপের কথা মনে পড়ে। লালন বলত তোর বাড়ন্ত শরীর। ভিক্ষা চাইতে গেলে বিপদে পড়বি। লোকে হাতে কটা টাকা গুজে দিয়ে ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকাবে। কিন্তু আজ দুলালী বেপরোয়া। গত দুদিন প্রায় কিছুই খাওয়া হয়নি। কাল সকালে পাশের ঝুপড়ির যমুনার থেকে চেয়েচিন্তে আনা সামান্য একটু আটা গুলে খেয়েছে ভাই বোনেতে। তাতে পেটের আগুন নেভার বদলে আরও দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে। রাতের বেলায় না খাওয়া, আজ এতটা বেলা অবধি কিছুই জোটেনি। খাঁখা রোদে পুরো স্টেশন চত্ত্বরটা ধূধূ করছে। কেউ কোথাও নেই। স্টেশন পার হয়ে ভাই বোনেতে হোটেলটার দিকে চলল। ক্ষিদেটা এখন যেন তালুতে ঘা মারছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। মঙ্গল বলল দিদি হোটেলটার সামনে দাড়িয়ে ভিখারিদের মতো চেঁচিয়ে বলি 'এ বাবু দুটো খেতে দে না, আজ সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি।' কথাটা শুনে দুলালীর মনটা হাহাকার করে উঠল।
হোটেলটার কাছাকাছি আসতেই দুলালীর ভয় লাগল। কিন্তু ভয় পেলে তো পেট মানবে না। হোটেলের সামনের বড়ো বটগাছটার তলার বাঁধানো চত্ত্বরে বসে একটা লোক বিড়ি ফুঁকছে। পায়ের শব্দ পেয়ে লোকটা ফিরে তাকায়। রোদে পোড়া তামাটে চেহারা। দুলালীকে দেখে হাঁ করে চেয়ে থাকে লোকটা। লোকটার পায়ের কাছে একটা মুখ বাঁধা বস্তা। ওর ভিতরে কী চাল? চোখদুটি চকচক করে উঠে দুলালীর। অতটা চাল কোথায় পেল লোকটা। ওদের দেখে লোকটা হাসল। ইশারায় দেখাল বস্তাটার দিকে। মঙ্গলের দিকে তাকিযে কী বুঝল কে জানে, পকেট থেকে একটা দশ টাকার নোট বের করে বলল যা খোকা বিস্কুট কিনে খা। লকডাউনে এদিককার সব দোকান বন্ধ, বাজারের দিকে গেলে দোকান খোলা পাবি।
মঙ্গল দুলালীর দিকে তাকাল, টাকাটা কী ও নেবে? দুলালী কিছু না বলাতে সাহসীর মতো হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে এক দৌড়।
মঙ্গল চলে যেতেই লোকটা দুলালীকে বলল চাল নেবে?
দুলালী এতটা আশা করতে পারেনি। কতদিন ওরা পেট ভরে খেতে পায়নি। মঙ্গল খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।
লোকটা উঠে দাড়িয়ে দুলালীর দিকে তাকিয়ে হাসল। দুলালী কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। লোকটা ওর হাত ধরে বলল চাল দেবো অনেক চাল, আয়- লোকটা দুলালীকে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে গেল।
মঙ্গল ফিরে এসে দেখল দুলালী শূন্য খাঁখাঁ করা স্টেশনের একটা বেঞ্চে বসে আছে। কোলে প্লাস্টিকের প্যাকেট ভর্তি চাল। আজ পেট ভরে খাব- খুশিতে লাফিয়ে উঠল। পরমুহুর্তে দুলালীর চুড়িদারের কোমরের দিকে তাকিয়ে দেখে রক্ত। দিদি রক্ত বের হল কিকরে?
দুলালী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল পেট ভরে ভাত খেতে হলে রক্ত দিতে হয়।
রাত্রে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে লালনের ঘুম ভেঙে গেল। একটা গভীর বিষন্নতা বোধ ওর সমস্ত সত্ত্বার ভিতরে যেন চারিয়ে গেছে। দুলালীর কথা ভেবে বুকটা হাহাকার করে উঠছে। অস্থির লাগল লালনের। পুটুলিটা মাথায় চাপিয়ে আর ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে চুপিচুপি বেরিয়ে পড়ল কোয়রান্টিনের বাড়িটা থেকে। বড়ো রাস্তায় পৌছে জোর কদমে হাঁটতে লাগল। একটা না একটা ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে।
মাইলখানেক যাবার পর লালন আচমকা দুজন পুলিশের চোখে পড়ে গেল। বাইকে করে ওরা রাস্তায় টহল দিচ্ছিল। ফাঁকা শূনশান রাস্তায় লালনকে পরিযায়ী শ্রমিক বলে চেনা কঠিন ছিল না। বাইক থামিয়েই একজন হাতের লাঠি চালাল লালনকে লক্ষ করে।
শালা, সরকার বিনা পয়সায় থাকতে দিচ্ছে খেতে দিচ্ছে তাতেও গুখোরদের শান্তি নেই। এই শয়তানের বাচ্ছাগুলোর জন্যই করোনা ছড়িয়ে পড়বে। ব্যাটাদের মেরে হাড়গোড় গুড়িয়ে দেওয়া উচিত।
দুবার লাঠির ঘা পড়তেই লালন আর দাড়িয়ে থাকতে পারলনা। ওর পরিশ্রান্ত বিষন্ন দেহ আর সহ্য করতে পারলনা। হাত থেকে ব্যাগটা ছিটকে পড়ল। লাল সবুজ চুড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ল রাস্তায়। দুচোখ অন্ধকার হয়ে এল লালনের। কালো পিচের রাস্তাটা যেন প্রচন্ড বেগে ছুটে এল ওর দিকে। নিজে ভেঙে পড়বার আগে দেখল খানকতক কাঁচের চুড়ি পুলিশের বুটের তলায় পড়ে গুড়িয়ে গেল।
***
শংকর লাল সরকার
8637852643
E Mail. shankarlalsarkar@gmail.com
Address:
34, Mearber (Sil Bagan)
Chinsurah, Hooghly- 712101