Click the image to explore all Offers

রম্যরচনা ।। আম্ফান বর ।। রণজিৎ হালদার


আম্ফান বর

 রণজিৎ হালদার 



বেশ কিছুমাস ধরিয়া  ভগবান শ্রীবিষ্ণু বড়  চিন্তিত রহিয়াছেন। রোগ ,ব্যাধি , অর্থ সঙ্কটে পীড়িত ভক্তকুলের কাতর ডাকে তার হৃদয় ব্যথিত । "ঠাকুর  তুমি দেখো, এর বিচার কোরো।" , " হে কৃপাসিন্ধু , হে দয়াল আর কত সইব তুমি দেখ ঠাকুর !"
প্রতিনিয়ত একের পর এক প্রার্থনায় বিষ্ণুলোকের কম্পিউটার  ভরিয়া যাইতেছে। যে কোন সময় সিস্টেম হ্যাঙ করিয়া যাইতে পারে। যদিও ওয়ার্ক ফ্রম হোম । শেষ কবে তিনি এ মর্তলোকে আসিয়াছিলেন তাহা   স্মরণে নাই।  তবে মানুষ গুলো বড় ভাল, দেখা না পাইলেও ভক্তিতে ভাঁটা পড়ে নাই । ভগবানের ওপর তাহাদের অগাধ বিশ্বাস আর অসীম প্রত্যাশা। তবে ভগবানের ও বয়স বাড়ে ।  একা কত সামলাইবেন।  তাহাছাড়া ,সবাইকে সব কিছু দেওয়া কি সম্ভব? এই কয়েক মাসে শুধু ঊনকোটী দরখাস্ত আসিয়াছে । ধরিতে গেলে সব কথাই এক ।"চাকরি টা যেন হয় প্রভু , হাত খালি হে  দয়াল ঠাকুর , হে পতিত পাবন টাকা দিন , হে গোবিন্দ দোতলার ঘরগুলো যেন এবার প্লাস্টার করে নিতে পারি,  হা ঈশ্বর আমার বউ ,ছেলে মেয়ে ,নাতি, পুতি ,শ্বশুর বাড়ির সবার ব্যাঙ্ক একাউন্ট আর কবে ভরে যাবে !"

 অনেকেই দাবি জানাইতেছেন, ব্যাঙ্কে তিন পুরুষের বসে খাবার মত অর্থ ..........।
পড়িতে পড়িতে ভগবানের মুখ  গম্ভীর হইল । মা লক্ষীকে ডাকিয়া কহিলেন " দেবী সবাই  তো আপনার প্রসাদ চাহিছে, আপনি দেখুন। " 
ইদানিং রেফারাল কেস প্রচুর আসিতেছে । তাই দেবী কমলা কহিলেন  " হে নাথ এত ধনসম্পদ  সকলকে প্রদান করা অসম্ভব। মর্ত্যবাসী সহসা অর্থ লাভে কেন এত আকুল! " 
" তা তো জানা নাই দেবী । তবে  তাদের প্রার্থনা না মঞ্জুর হইলে সমূহ বিপদ। আমার দেবত্বের আসন টলমল হইবে । বিষ্ণুলোক ছেড়ে বৃক্ষ- তলে  স্থান হইবে। তাহাছাড়া ..."
"   কি প্রভু? "
" দেবশ্রী নারদ জানিয়েছেন।  দীর্ঘ দিন ভক্তরা গৃহবন্দী,  বিশ্বকর্মা বিশ্রামে আছেন,  অন্ন বস্ত্র অর্থের বড় হাহাকার।  দেবাদিদেব মহেশ্বর সকল নিয়ম নীতি অমান্য করিয়াছেন, হাজার হাজার ,লাখ লাখ ভক্ত মৃত। বম্ভ্রার বরে করোনাসুর যে মহা পরাক্রমশালী। 
" সত্যই বড় বিপদ । তবে আমি দেখিতেছি প্রভু ।আমি থাকিতে আপনার সিংহাসন নিয়ে চিন্তার  কারণ নেই "।
" কি করিবেন দেবী ? নতুন করিয়া কোন বর দেবেন না।  সমস্ত বর অপচয় হইয়াছে। একটিই মাত্র বর সম্বল।" 
" প্রয়োজন হইলে সর্বত্র দরবার করিতে হইবে।"
অতঃপর দেবী কমলা দেবরাজ ইন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা পুর্বক এমন এক কৌশল লইলেন যে এক ভয়ঙ্কর ঝড়ে সবকিছু তছনছ হইল। বহু মনিষ্যি গৃহহীন হইল।

তাহার পর দেবীর মাহাত্ম্য সকলে বুঝিলেন।সকলের সব দাবী মিটিল । কেবলমাত্র  যাহারা অট্টালিকায় বসিয়া প্রকৃতির রুদ্ররূপ উপভোগ করিলেন তাহারাই বেশি বেশি দেবীর কৃপা পাইলেন।
বিষ্ণুদেব আরও চিন্তিত হলেন, ভক্তরা তাহাকে বাদ দিয়ে,  না দেবী কে আরও বেশি বেশি ভক্তি -শ্রদ্ধা করতে থাকে।


*****************

রণজিৎ হালদার।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.