আনিছ মামা আর্মির চাকরি শেষ করে গ্রামে ফিরেছেন। স্কুল জীবনে তিনি সবার মামা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
চাকরি শেষে সবাই তাকে আর্মিআনিছ বলে সম্বোধন শুরু করে।কিছু জমানো টাকা,অবসরের ফাণ্ড দিয়ে মাছের খামার শুরু করলেন। তারপর নামেরও পরিবর্তন ঘটলো।
আর্মিআনিছ এখন মাছআনিছ।
সারাদিন শিং,থাই কৈ,পাঙাশের ব্যারেল নিয়ে রাজধানী টু মফস্বল। মাছের পোনা,মাছের রেনু,তাদের খাবার নিয়ে মহা টেনশানে দিন পার।পেটের খিদে, মনের বিনোদনের ফুসরত নেই।অনলাইন,অফলাইন দুটোতেই সমান বিজি।
রাতেও ফোনে ওয়েবসাইট,গ্রুপ, পেইজ---আর এনালগ কাস্টমার তো আছেই।
শাহানার পাশে শুয়েও সারারাত ফোনে বকবক----না ভাইজান,আরেকটু মনডা নরম করেন।দ্যাহেন দিলডারে একটু ডিল দ্যান ভাইজান, আমার আসল খরচাডা উটলেই আমার আর কিছুই লাগবনা আল্লার রহমত।
ওপাশ থেকে লোকটাও অনড়।সেও ঘাগু।
দরকষাকষি চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
লাভের অংকে দুইজনেরই ঘরে।তবুও বলে,আসলটাই নাকি উঠবেনা। না হলে ষোল লাখ টাকায় মাছআনিছ বাজারে জায়গা কিনে ফেলেছে পাঁচ মাসের মাথায়, ভাবা যায়?
আর এবারের দানটা বসাতে পারলে মিসেসের নামে ফ্লাটের বায়নার টাকাটা অন্তত দিতে পারবে নিশ্চিত।
কিন্তু মিসেস শুয়ে শুয়ে এসব কী বলছে? যার জন্যই জীবনটা কয়লা করছি,সে কিনা বলে---মাছের ব্যবসা,মাছের খাদ্যের ব্যবসা ছেড়ে দিতে?
কিন্তু, কেন শাহানা,সেটা বলবে তো?
তোমার শরীরের মাছের গন্ধটা! ওফ্ আর নিতে পারছিনা---!তুমি অন্য কোনো ব্যবসা ধরো। স্কুলের গার্জেনরা আমাকে বলে কিনা --মাছআনিছের বৌ!
ব্যস্।
মাথার ওপর দিয়ে একটা জঙ্গি বিমান চলে গেল মনে হয়।
বলে কি মহিলাটা!মাছের গন্ধটা নিতে পারছেনা! এত কষ্ট করে ব্যবসাটাও দাঁড় করিয়েছি।
মনে মনে বিশাল একটা কষ্টের পাহাড় নিয়ে ঘোরে আনিছ।
প্রিয়াঙ্কা ফার্মেসী থেকে স্যাকারিনের ফাইল স্যাকসুইট কিনে টেবিলে রেখেছিল সে।ওটা পড়ার পর শাহানা একরকম ধরেই বসলো--তুমি আজকাল সেক্সের ওষুদ খাচ্ছো!
কে বললো তোমাকে?
আমি দেখেছি। টেবিলে রাখা ছিলো।
ও হ!আরে, ওটা তো সেকসুইট।ডায়াবেটিসের রোগিরা চিনির পরিবর্তে চায়ে মিশিয়ে নেয়। আমি ডায়াবেটিক প্যাসেন্ট,তুমি জানোনা?
একরকম চাপা উত্তেজনায় দিন পার করে ওরা। এক পর্যায়ে আনিস ডিসিশন নিয়েই ফেললো--অন্য ব্যবসা ধরবে।
মাস দুয়েক চললো। প্রমা ফিশ ফিড এন্ড হ্যাচারির সাইন বোর্ড নেমে যাচ্ছিল। এদিকে ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাক্তাররা রোগ খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
পরীক্ষা নীরিক্ষা,ডাক্তার বদলানোর পড়ও হতাশ। শেষে সবার ঠেলাধাক্কায় মাদ্রাজ নেবার পরিকল্গনা করছিল সবাই।
যাবার দিন বেঁকে বসলো তুষার। সে মাদ্রাজ যাবেইনা। কারো রিকোয়েস্ট সে শুনছেনা।
মুশকিলে পড়া গেলো।
ওর টিচার মাহিন অনেক বলে কয়ে মানালো। তবে শর্ত একটাই ---বাবা যদি মাছের পুকুরগুলো আবার শুরু করে। ওখানকার লেকের মতো পানি,চারপাশে পেয়ারা বাগান,ফুলের বাগান খুবই পছন্দ।
------------
Sent from my Samsung Galaxy smartphone.