|| প্রেমের চিঠি ||
চন্দন চক্রবর্তী
সন্ধ্যায় অফিস করে রজতের বাড়ি যাচ্ছি ওর প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে নিমন্ত্রন রক্ষা করতে ।
গল্পের খাতিরে রজতের বাড়ি পৌঁছনোর আগে ওর সম্পর্কে দুই একটা কথা বলে নি ।
রজতের বাড়ি যদিও কলকাতাতে । ওর বাবার চাকরির কারণে রজত ঝারখণ্ডে ছোট থেকে বড় হয়েছে,হিন্দি মিডিয়ামে পড়েছে,স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে ।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় রজত কলকাতাতে চলে আসে । তখন থেকেই ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। পরে দুজনে একই কোম্পানিতে জয়েনও করেছি । ওর বাবা চাকরিতে অবসরের পেয়ে এখন কলকাতায় ।
এবার কাজের কথায় আসি ।
রজতের বাংলা কথায় হিন্দি টান । বাংলা লেখাটা ভালো আসে না । আর সেখানেই বিপত্তি । আসছি সেই কথায় ।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই রজত মল্লিকার প্রেমে পড়ে হাবুডুবি খাচ্ছিল । কিন্তু মুশকিল হয়েছে ওই ভাষা নিয়ে ! মানে মেয়েটি নাকি একটু কবি স্বভাবের ! ওর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রজতের নিজেকে খেলো মনে হয় ! নিদেনপক্ষে এক আধটা হিন্দি সায়েরও যদি জানা থাকতো ! প্রেমিক হলে একটু আধটু লাগে বৈকি । আর তাতেই মল্লিকাকে ওর করিশমা দেখাতে গিয়ে আমার শরণাপন্ন হতে হয় !
আমায় একটা প্রেম পত্র লিখতে হবে !
মোবাইলের যুগে প্রেম পত্র ! উপায় নেই । যেমন রোগ তেমন দাওয়াই । কবি স্বভাবের মেয়ে পটাতে হবে যে !
অগত্যা নিচের কথাগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে একটা প্রেম পত্র লিখে দিলাম । লাইনগুলো কিভাবে লিখেছিলাম মনে নেই । তবে নিচের কথাগুলোর মত অনেকটা ছিল :
তুমি আমার সন্ধ্যার মেঘমালার তুল / তুমি আমার পদ্মবনের প্রথম ফোটা ফুল / তোমার কথা ভেবে আমার রাত হয়ে যায় ভোর / তোমার ভাবনায় কাটে সারাদিন লেগে থাকে মনে ঘোর /
তোমারেই আমি চাহিয়াছি প্রিয়ে জন্ম জন্মান্তরে / শত রূপে এসে দাঁড়াও হে প্রিয়ে আমার নয়ন পরে । ইত্যাদি ।
রজতের বাড়ি পৌঁছলাম । রজত,মল্লিকা, দুই জনেরই বাবা মায়েরা এসেছেন । প্রনাম করে আলাপ সেরে আমরা তিনজন এক ঘরে বসে গল্প করছি ।
মল্লিকাই বেশি বলছে । আমি তাল দিচ্ছি । রজত হু হা করে যাচ্ছে । কথা বলতে বলতে কখন মল্লিকা বৈষ্ণব পদাবলীতে চলে গেছে ! সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে । নিজেও বেশ মুখে মুখে রচনা করছে । খুব ভালো লাগছে । বুঝলাম মেয়েটা কবি হয়েই জন্মেছে ।
প্রসঙ্গত আমি দুচার কলম লিখতে পারি । কিন্তু মল্লিকার কথাগুলো ! আহা কি সুন্দর ! একটা আবেশে মন জুড়িয়ে যায় !
ওর কথাগুলো গিলে যাচ্ছি !
হঠাৎ মল্লিকা থেমে গিয়ে রজতকে বললো কিছু বলতে ! রজত বলার জন্য প্রস্তুত হল ।
একটা চিঠি মুখস্ত করে পড়ছে মনে হল ! উচ্চারণ মোটামুটি ভালো । অবাক হয়ে গেলাম !
প্রসঙ্গ চেঞ্জ করে হঠাৎ এসব কি বলছে ।
লাইনগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে ! কি আশ্চর্য্য ! আমি কিন্তু বলতে পারব না কী কী লিখেছিলাম । আর ওর সব মুখস্ত !
বুঝলাম এটা মল্লিকার চেষ্টায় হয়েছে । আমার মনের কথা বুঝে মল্লিকা এখন মিটি মিটি হাসছে !
পড়া শেষ ।
এবার মল্লিকা আমাকে যা বললো,"সৌমেনদা যেটুকু আপনাকে দেখেছি, আমি কিন্তু আগেই বুঝেছিলাম চিঠিটা আপনার লেখা । বন্ধুপ্রীতির জন্য ধন্যবাদ । ওর কবিতা আসে না । ভাষার জোর কম । কিন্তু ভাবের ঘরে সবাই অল্প বিস্তার কবি হয় । চেষ্টা করছি সেটাকে জাগিয়ে তুলতে । অন্তত ও একজন ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুক । আর চিঠিটার জন্য আপনার একটা ধন্যবাদ পাওনা । আপনার চিঠি দিয়েই ওকে আমি কয়েক মাস আগে থেকে ট্রেনিং দিচ্ছি । সুন্দর লেখা । আমার কাছে একটা মূল্যবান দলিল" ।
ক্যাটারিংয়ের ছেলেটা খাওয়ার জন্য ডাকছে। এবার খেতে যাব।
সুন্দর একটা নতুন স্বাদের বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠান কবি মল্লিকার কাছে উপহার পেয়ে মেয়েটাকে মনে মনে সেলাম ঠুকলাম ।
সবাই খেতে চললাম ।
-----------