বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

অণুগল্প।। বেটি ছাওয়াল।। বিশ্বনাথ প্রামানিক




           বেটি ছাওয়াল


                   বিশ্বনাথ প্রামানিক

 

তখনো ভোরের আলো ভাল করে ফোটেনি। ভাদ্দরের আকাশ কালো করে মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। মনে হয় এখনই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামবে। মাটির ঘরের বারান্দা থেকে নেমে কোমরের লুঙ্গিটা শক্ত করে বাঁধতে বাঁধতে বছর পঞ্চাশের রজব আলী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে- আমাগো তহমিনার কথা তুমার মনে আছে বাপজান!
-তহমিনা! রোগা গিরগিটির মতো চেহারা, টানাটানা চোখ!
-হ, হ..
-কথায় কথায় দাঁত বের কইরে কইরে হাইসতো?
-হ, হ,ঠিক কইছেন,
বারো না তেরো হতি না হতেই......
-হ,সাজানের বেটার সঙ্গে পলায়ে গেল, সাদি করলো, কত কাইদলাম, ওর আম্মা তো খালি খালি মুচ্ছা....রজব আলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
-হ, তা কী হ‌ইল কী আবার তাগো? তুমরা তো সব মেনে-গুনে নিছো।
-মেনে গুনে লয় বাপজান, মেনেগুনে লয়, মানতি কি আর পারি বাপ! তবে কিনা বাপ মায়ের জান তো, থেকে থেকে হু হু ক‌ইর‍্যা উঠে।
-তা তো বটে,  এ্যদ্দিন পর হঠাৎ  কি হ‌ইল যে এই ভাদ্দরের ম্যাঘলা বেলায় ছুটি এয়েচ! আইছা,কয় বচর য‍্যন হ‌ইল? চার-পাঁচ বচর নি?
-হ,এই আছিন মাস এলি পর পাকা ছ'বচর  হবে বাপ।
-তা,তার কথা আবার উঠে কেনে?
- রজব আলী ইতস্তত করে, না জামাই আমার  ভালো,তাগো কোনো দোষ নাই, তবে কিনা বড়ো ছেলেমানুষ তো ....
-অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে হাসেম মাস্টার- কি হয়েচে চাচা? ঝপ করে খুলে বল তো, অত নুকোচুরি কর ক্যান?
-সহসা হু হু করে কেঁদে ওঠে রজবআলী, ফোঁপাতে ফোঁপাতে সে বলে ওঠে- আইজ ভোরবেলা বদি পাড়ার খালে...
-খালে.....
-আমার তহমিনা বেটির শরীলটা ভাইস‍্যা উঠেছে বাপজান, হগলে দ‍্যাখছে, হগলে ...হা হা হা.... কান্নায় ভেঙে পড়ে রজব আলী।
হঠাৎ শকড খাওয়া মানুষের মতো চমকে ওঠে হাসেম। হগ্গলে জানছে, আর সে ...,দ্রুত সামলে নিয়ে বলে- ও,তা আমারে কি করতি বল? থানায় যাবা? ডাইরি নেকাবা? এই তো?
কত কি যেন চিন্তা করে রজব আলী বলে ওঠে- না‍, তাতে আর কি নাব হইব বাপ?
ক্ষণিক চুপ  থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলে- থানা পুলিশের চক্করে পড়ি জান নে টানাটানি, সুইসথ মানুষে অসুসথ হয়ি পড়ব, কার কি নাব তাতে! মাঝখান থেইকা ওগোর ছ'মাসের দুদের পোনাটা মারা পড়ব।
-তাইলে....
-আমি ভাইবছিলাম..,কথাটা ক‍্যামনে পাড়ি বাপ, বুক যে আমার ফাটি যায়।
-আহা  কি বলবে বলেই ফেলও না চাচা, তুমার দুঃখ আমার দুঃখ না?
-হা তা তো বটে, তোমরা হ‌ইলে গিয়ে আপনজনা, তুমার বাপজান আমাগো কত প‍্যার করত! 
হাসেম আর কথা বাড়ায় না, চাচার মতলবটা কি?
মৌনতা ভেঙে রজব আলী বলতে থাকে-আমার ছোট মাইয়াটারে তো তুমি দ‍্যাখছ বাপ, য‍্যামন গার রঙ, তেমনি চলন বলন..
-হ
-ভাইবছিলাম যদি ওটারে আবার ...... ,না  মানে আমার তহমিনার যে আর কিছুই র‌ইলনি, ঐ বেটি ছাওয়াটা যদি বাঁচে.....
-হাসেম মাস্টার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়ে।  তার পাঠশালার সব থেকে মেধাবী ছাত্রীটির জন্য তার চোখ জলে ভরে ওঠে।
ভাদ্দরের আকাশ কালো করে মেঘ ডেকে ওঠে। বোধহয় বৃষ্টি আসবে। চোখ মুছে হাসেম মাস্টার বলে,
-তুমি এখন বাড়ি যাও চাচা, তুমার তহমিনারে যে গোর দিতে হবে ....

------------ 

          ৫/৩/১৮
               সন্ধ‍্যা
 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.