Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প ।। সোনা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া


সোনা 


 

অঞ্জনা গোড়িয়া 


আর একটু পথ  যেতে পারলেই  পৌঁছে  যাবো। ক্লান্ত হলে,  চলবে না।  আরও  শক্তি  দাও। সাহস দাও। আমাকে পারতে ই হবে। একা। সুনশান  রাস্তায় আমি  একা।
চারিদিকে  অন্ধকার।মোবাইলে চার্জ   সামান্য।  টর্চের আলো নিভো নিভো। ছড়িয়ে  ছিটিয়ে  পড়ে গাছের ডালপালা। আস্ত একটা  গাছ উপড়ে আছে রাস্তায়।  পার হতে গিয়ে  হুমড়ি খেয়ে  পড়লাম  ফাটল ধরা গাড্ডায়।
 উঃ পা কেটে রক্ত ঝরছে।  সারা গায়ে নোংরা  জল কাদা ।  তার ই মধ্যে  হাতের কনুই এ রাস্তায় পিচের ঘর্ষণে দগদগে ঘা। 
 পা আর চলছে না। উঠে  দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই।  তবু যেতেই  হবে। বাড়িতে  যে প্রিয়া অসহায় । আর আছে ছোট্ট সোনা ছেলে। এতক্ষণে  ঘুমিয়ে পড়েছে  নিশ্চয়। 
হাঁটতে  পারছি না আর। এখনো  দু'ঘন্টার পথ। 
অফিস থেকে ১২কিলোমিটার   একা হেঁটে  আসছি আমি। 
কে যেন ডেকে বলছে।  স্পষ্ট  শুনতে  পাই সে কন্ঠস্বর। "বাবা " কোথায় তুমি?  বড্ড ভয় করছে। ঝড় উঠেছে।  সব ভেঙে  পড়ছে। ওই দেখো বাবা, বাড়ির  পিছনের তাল গাছ টা আমাদের ঘরের ছাদে। দেখতে  পাচ্ছি দুটো  পাতা  উড়ে আসছে বারান্দায়।  তুমি কোথায়  বাবা? ফিরে এসো। বড্ড ভয় করছে।  এই বুঝি  ভেঙে যাবে আমার পাখির ঘর। তাড়াতাড়ি  ফিরে এসো বাবা। আমি জেগে আছি এক কোণে।
 মা ও  যে তোমার পথ চেয়ে।  
কথা গুলো  স্বপ্নের মতো  শোনাচ্ছে। কেউ কি ডাকছে আমায়?  ওরা কি করছে? বাড়ির  পিছনে  সারি সারি  তাল নারকেল।  বাড়ি টাও নড়বড়ে।  বারবার  বারন করে ছিল,আজ যেও না। ঝড় আসবে। ফিরবে কি করে? 
কথা শুনিনি। কোনো দিন ও কথা রাখি নি। এ আমার  দোষ।  নিজে যা ভালো  মনে  করি তাই করি। সবার অবাধ্য হয়েই এসেছি অফিস। 
   সেই সকালে বেরিয়েছি। দুটো  ভাত খেয়ে। আজ  অফিসে ভার্চুয়াল মিটিং। আরও  কত কাজ। আপতকালিন  ঝড়ের মোকাবিলায়  কি কি করণীয়?  তার ই নোটিশ দেওয়া  হচ্ছে। তাই ছুটি  নেওয়ার প্রশ্ন ই নেই।  
একসপ্তাহ  আগে থেকে  খবরে জানতে  পেরেছি ঝড় আসছে। তুমুল ঝড়। আমপান ঝড়।  তবু অফিস  খুলে  রাখতে  হবে।  ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় দান, তাদের আপতকালিন সাহায্য  করতে জরুরি বিভাগে খুলে  রাখতে হবে।   দুটো  পর্যন্ত  কাজকর্ম সারলাম  নিরাপদে।  তারপর ই  শুরু হলো  তান্ডব। কাছাকাছি  যাদের বাড়ি,জলদি বেরিয়ে পরল  বাড়ির দিকে।  একে একে  সবাই  কাজ গুছিয়ে চলে গেল। অফিসের গাড়ি টাও ফিরে গিয়েছে।
এবার ফিরতে  হবে বাড়ি। রাস্তায় কোনো  গাড়ি নেই।  হাঁটতে  শুরু করলাম। একপ্রকার  দৌড়তে লাগলাম।  
 ঝড়ের দাপট  শুরু হলো।   ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে।  সোজা হয়ে  দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই।  তার ই মধ্যে  বাড়ি থেকে  ফোন।  ফিরে এসো বাবা। ঝড় উঠেছে।  এবার  ফিরে এসো। এই শেষ  কথা।
তারপর ই  নো টাওয়ার  নো নেট ওয়ার্ক। এক মুহুর্তের জন্য  মনে হলো  আমি বুঝি সারা  জগৎ থেকে  বিচ্ছিন্ন। 
ঝড়ের দাপট  আরও  বাড়ছে। প্রতিটি মুহুর্ত  বিপদ হাতছানি  দিচ্ছে। বাতাসের শোঁ শোঁ  আওয়াজ  কান তালা ধরে  যাচ্ছে।  সন্ধ্যা  তখন ৫-৩০। ঘড়ির  কাঁটায়।
চোখ দুটো  ধোঁয়া  হয়ে আসছে। হটাৎ ই মনে হলো  কিছু  একটা  জোরে  আঘাত  করছে কোমরে। প্রচন্ড   যন্ত্রনায় কাতড়াচ্ছি। তারপর ই  পড়ে গেলাম। ব্যস জ্ঞানশুন্য। আর কিছু  মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল দেখলাম  বাড়ির  বিছানায় শুয়ে।  ঘড়িতে রাত ২ টা।
 মাথার পাশে বসে আছে আমার প্রিয়া। সোনা ছেলের চোখ দুটো  ছলছল করছে।
"বাবা' ডাকে চোখদুটো  খুলে গেল। 
প্রিয়া গরম দুধ নিয়ে হাজির। খেয়ে নাও। আরাম পাবে।  কাল না হয় আবার অফিস  যেও। আজ এটুকু কথা শোনো।
 আঁচল দিয়ে  মুখ ঢেকে  কি যেন লুকানোর চেষ্টা  করছে। 
হা হা হা হেসে উঠলাম।  পাগলি কোথাকার। ছেলের সামনে  কাঁদতে  আছে?  এই তো  আমি জীবিত।  এত সহজে  আমার মরন নেই। দেখো কেমন ফিরে এসেছি তোমাদের ভালোবাসায়। 
হুমড়ি খেয়ে পড়ে ছিলে পাকা রাস্তায়।   কি যেন ভেবে ঠাকুরপো কে পাঠিয়েছিলাম খুঁজতে।  ঠাকুর  সহায় ছিল বুঝলে।  তাই এ যাত্রায় বেঁচে  এলে।
 এবার রেহাই দাও।  আর পারছি না তোমার  সংসার সামলাতে।  
লেখকের  মুখে হাসির ফোয়ারা।
 তুমি না সংসার সামলালে আমি  লিখবো  কি  করে?  অফিস  করবো কি করে?  আমায় ছেড়ে কোথায় যাবে গো প্রিয়া? পারবে আমায় না দেখে থাকতে? 
এসো কাছে এসো।  বসো পাশে। একটা  গান শোনাও দেখি?
কত দিন  শুনিনি  তোমার  গান?
মরন? একটু ঘুমাও। ভোর হয়ে আসছে। কাল ই ডাক্তার  দেখাতে হবে।  তোমার  সারা গায়ে ক্ষত। বিশ্রাম  নাও।
আর কিছু  হবে না  প্রিয়া। তুমি পাশে আছো।  
তুমি ই আমার মনোবল। আমার ভালোবাসা। তাই তো  ফিরে এলাম আবার   তোমার কাছে। 
 ভোরের ঝলমলে আলোয়  চারিদিকে  সোনা ঝরছে।  ভালোবাসায় ঝলমল করছে রাশি রাশি  সোনা।
----------- 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.