সে কী করে সম্ভব !
গোবিন্দ মোদক
ক'দিন ধরেই খুশবু শুনতে পাচ্ছে সপ্তর্ষির দিদির আসন্ন বিয়ের কথা ! বন্ধুদের সবাই খুব উৎসাহী --- খুব মজা হবে ! খুশবু-ও খুব উত্তেজিত --- এই একঘেঁয়ে মেডিকেল ক্লাস থেকে ক'দিন মুক্তি আর দেদার মজা ! তার ওপর সপ্তর্ষির দিদির বিয়ে বলে কথা ! আর খুশবু তো শুধু সপ্তর্ষির ফ্রেন্ড নয় তার চেয়ে আরও অনেকটা বেশি-ই !
কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুশবুকে হতাশ হতে হলো। ও জানতে পারলো প্রায় সবাইকেই নেমন্তন্ন করা হয়ে গেছে সপ্তর্ষির ! কার্ড না দিলেও সকলকে মুখে বলেছে, নেমন্তন্ন করেছে। এমনকি ওই সীতা মূর্মু নামক পুরুলিয়ার মেয়েটিকেও বলেছে, নেমন্তন্ন করেছে ! অথচ খুশবু-কে একটিবারও বলবার সময় হলো না সপ্তর্ষির ! নাকি ভেবেছে স্পেশাল কোনও মুহূর্তে বলবে ! কথাটা মনে হতেই গাল লাল হয়ে উঠল খুশবুর ! না কি ও ভেবেছে খুশবু- কে আলাদা করে নেমন্তন্ন করবার কিছু নেই, কারণ ও তো ওর একান্তই কাছের বন্ধু...! কে জানে ! তোলপাড় হতে থাকে খুশবুর মন ! কারণ সে যে মনে মনে প্লান করে ফেলেছে সপ্তর্ষির দিদির বিয়ের দিন কোন ড্রেসটি পরবে, কেমন ধারা হেয়ার ডিজাইন করবে বা কোন মেহেন্দি লাগাবে ! আর বিয়ের পর দিন এবং বৌভাতের দিনেও কেমন সাজবে তাও ভেবে রাখতে তার ভুল হয়ে যায়নি ! অথচ আসল মানুষটাকেই নেমন্তন্ন করবার কথা বলতে ভুলে গেছে সপ্তর্ষি ! কেমন ছেলে কে জানে !
শেষ পর্যন্ত আর থাকতে পারল না খুশবু। ক্লাসের শেষে সপ্তর্ষিকে একা পেয়ে ধরলো --- কি রে, বললি না তো আমায় এখনও !
অবাক চোখে তাকালো সপ্তর্ষি --- কি বলব ?
--- কি বলবি মানে ! দিদির বিয়ে ! সবাইকে বলা হয়ে গেল ! নেমন্তন্ন হয়ে গেল ! অথচ আমাকে এখনও বলবার নাম-গন্ধ নেই ! খুশবু ঈষৎ অভিমানহত স্বরে বলল।
--- আরে দাঁড়া দাঁড়া ! নেমন্তন্ন ? তোকে ? কেন ?
সপ্তর্ষি ইয়ার্কি মারছে, নাকি তাকে রাগিয়ে দিতে চাইছে, নাকি সত্যিই অভিনয় করছে --- বুঝতে পারলো না খুশবু। তাই দ্বিধান্বিত স্বরে বলল, -- কেন মানে ? সবাই নেমন্তন্ন পেলো, আর আমাকে বলবি না ?
--- সে কি করে সম্ভব ? তুই না মহামেডান ?
সপ্তর্ষির কথাটা ধক্ করে এসে বুকে বাজলো খুশবুর ! কিন্তু বিশ্বাস হলো না সপ্তর্ষি-ই বলছে কথাটা ! তাই অবাক-বিস্ময়ে বললো, --- আর য়ু সিরিয়াস ?
--- ইয়েস ! সিরিয়াস ! এতে অবাক হবার কি আছে ? তুই কি ভেবেছিলি তোকে আমাদের বাড়ির অনুষ্ঠানে নেমন্তন্ন করব ? তুই কি পাগল হলি ! আরে, আমরা ব্রাহ্মণ ! আর তুই হলি মহামেডান ! তুই কি করে ভাবলি যে আমাদের বাড়ির এই শুভ কাজে তুই যোগ দিবি ! হ্যাঁ !
খুশবু টের পেল একগাদা কাঁচের বাসন-পত্র ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ওর বুকটার ভেতর, আর তীব্র রক্তক্ষরণে ভিজে যাচ্ছে মনের নরম কোণটা ! একটা তীব্র কষ্টের দলা গলা বেয়ে উঠে আসছে আসতে চাইছে মুখের দিকে ! সে কি ঠিক শুনছে ! খুশবু প্রাণপণ চেষ্টায় নিজেকে সংযত রাখতে চেষ্টা করছিল ! কাজেই পরবর্তীতে সপ্তর্ষি যে কথাগুলো বলতে লাগল তা তার কানে গেল না --- সে শুধু টের পেল তার এতদিনের গড়ে তোলা পৃথিবীটা ভেঙ্গে চুর-চুর হয়ে ভেঙে যাচ্ছে ! সে সম্বিত ফিরে পেল সপ্তর্ষি চলে যাবার পর !
ওই তো সপ্তর্ষি চলে যাচ্ছে অথচ এই ছেলেটি গত বছর সরস্বতী পুজোতে খুশবুর সাজের প্রশংসা করেছিল ! এমনকি একসময় নিরিবিলিতে পেয়ে খুশবু-কে আষ্টেপৃষ্ঠে চুমু খেয়েছিল। খুশবু বাধা দেয়নি। তারপর চুম্বনের তীব্র স্বাদ নিতে নিতে সপ্তর্ষি যখন পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিল, তখন খুশবুর মনে নেশা জেগেছিল। খুশবু- ও সপ্তর্ষির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে আশ্লেষে চুমু খেয়েছিল --- দু'জনের মুখই লালাময় হয়ে উঠেছিল। প্রথম চুম্বনের সেই স্বর্গীয় স্বাদে দু'জনেই একসময় অবসন্ন হয়ে পড়েছিল যেন । আর একদিন সপ্তর্ষি আরও সাহসী হয়েছিল --- চুমুর পরই খুশবু-র বাঁদিকের বুকে হাত রেখেছিল! এক সময় কাঁপা-কাঁপা হাতে অন্তর্বাস খুলে স্তনবৃন্ত চুষে দিয়েছিল । খুশবু-ও প্রথম যৌবনের বসন্তের ডাকে উপভোগ করেছিল মুহূর্তগুলো । একসময় সপ্তর্ষি আরো সাহসী হবার আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল খুশবু। মনে মনে খুবই আহত হয়েছিল সপ্তর্ষি। খুশবু-ও কম কষ্ট পায়নি ! কিন্তু সহজাত মেয়েলি প্রবণতায় সে নিজেকে ঠিক রেখেছিল। তারপরেও বহুবার চুমু বিনিময়ের সুযোগ হয়েছে দু'জনের --- প্রত্যেকবারই চুমুর পরেই যেন পাগল হয়ে যেত সপ্তর্ষি ! "আমার খুশবু", "খুশবু সোনা" ইত্যাদি বলে আদরে আদরে ভরিয়ে তুলতে চাইত তাকে। আর আজ সেই সপ্তর্ষি কিনা তার দিদির বিয়েতে যেতে দিতে চায় না খুশবুকে ! দিতে চায় না সে কি শুধু ভিন্ন জাত বলে ? জাত কি এতোটাই শক্ত বেড়া, যে, সব সম্পর্ককে ঠেকিয়ে রেখে দিতে পারে ! রুখে দিতে পারে !!
খুশবু-র ঠোঁটদুটো থর-থর করে কাঁপছিল ! তার কানে জয়ঢাক হয়ে বাজছিল সপ্তর্ষির তীব্র কথার বাজনা -- "সে কি করে সম্ভব ! সে কি করে সম্ভব ! তুই না মহামেডান ! তুই না মহামেডান ! সে কি করে সম্ভব ! তুই না মহামেডান !!"
--- আরে খুশবু ! তুই এখানে দাঁড়িয়ে ! একি ! তোর চোখে জল !
শীলা, অনন্যা, পিয়াসী -- ওদের সামনে দাঁড়াতে পারে না খুশবু ! ওদেরকে হতভম্ব করে দিয়ে সেখান থেকে এক ছুট্টে পালিয়ে যায় সে । কিন্তু তাকে যেন তাড়া করতে থাকে সপ্তর্ষির সেই অমোঘ বাক্য --- "সে কি করে সম্ভব ! সে কি করে সম্ভব !!"
_____________________
গোবিন্দ মোদক
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা।
রাধানগর, ডাক: ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত --- 741103
WhatsApp/ফোন: 8653395807