Click the image to explore all Offers

অণুগল্পগুচ্ছ : দেবাশিস সরখেল

 স্মরণসভা 

প্রচুর মানুষজন এসেছেন। প্রফুল্ল পিছনে বসে।

তার পালা যখন এলো গল্পটি ঠিক-ঠাক বলতে পেরেছে।

তারপরই বিপত্তি।

তার কথা দিয়েই শুরু করে সে। নিতান্ত হতদরিদ্র ঘরে জমায়। সামান্য ধানচাষ, আর বড় পুকুরে মাছ চাষ। স্যার  বলতেন, মাছের বাগান।

স্যারের মাছ ধরার নেশাটি বরাবর ছিল।

ওদের পুকুরে ছিপ ফেলা বারন।

স্যার তড়িঘড়ি ছিপ, তগি গুটিয়ে চম্পট।

চটিজোড়া ফেলে গেলেন।

পরদিন প্রফুল্ল স্যারের বাড়িতে শুধু চটিজোড়া নয়, এক কিলোর একটা রুইমাছ সঙ্গে নিয়ে গেল।

স্যারের মুখ কাঁচুমাচু। বল্লেন, বুঝলি প্রফুল্ল তোর কাছে নিজেকে চোর চোর মনে হচ্ছে। না বলে তোদের পুকুরে তো ছিপ ফেলা বারন। আর রাগও হচ্ছে তোর উপর কারও চটি কেউ হাতে করে বাড়ি বয়ে আনে?

বল্লেন, আমি তো মাছ শিকারী। মাছ পেয়ে খুব খুশী কিন্তু জল থেকে তুলতে পারলে আরও খুশী হতাম।

প্রফুল্লর গলা ধরে আসে এরপর। কোনোক্রমে নিজেকে সামাল দিয়ে আবার শুরু করে।

তার বাবা মাধ্যমিকের পর ছেদ টানতে চেয়েছিলেন। সেই তো জাল টানবি, তো পড়ে আর কি হবে ?

মাছাল দেবুস্যার শুধু বলেছিলেন, আমাকে আপনার পুকুরে দাঁড়ি, তগি ফেলার অনুমতি শুধু দিয়ে রাখুন। বাকী দায়টা আমার। প্রফুল্ল আমারও ছেলে।

এবার কেঁদে ফ্যালে প্রফুল্ল। নিজেকে আবার সামলে নেয় বলে, আমি শ্রম দিয়েছি লেখাপড়ায়। কিন্তু উৎসাহ আর অর্থের যোগানদার দেবুস্যার।

স্যারের আশীর্বাদ প্রফুল্ল স্যারের কলিগ। 

আকস্মিক বজ্রাঘাতে অবসর গ্রহনের দু’বছর আগেই মারা গেলেন।

 টিকিট

ক্ষমতাসীন বামপন্থী দলের কর্মী ছিলেন। চটি জোড়া বার বার ক্ষয়ে গ্যাছে, লাভ হয়নি। লালু – ভুলুরাও তালেবর, তরনী যে তিমিরে সেই তিমিরে। বালির চড়ায় আটকে সারাজীবন।

অগত্যা পোলট্রি ফার্ম। মুরগীর খাবার সংগ্রহে হপ্তাদিনে একবার শহরে গমন। আগের দিন বুড়ো কন্ডাক্টর ঘুমিয়ে থাকায়, জাবার সময় ভাড়াও দিতে হয়নি।

এ সপ্তাহে বেরুতে গিয়ে বিপত্তি। মা বলেন আমার বাঁ চোখ নাচছে একটু বসে যা।

মিনিট কয়েক পর উদ্যোগ নিতেই বলেন, দেওয়ালে টিকটিকিটা ডেকে উঠলো একটু বোস, মাথায় জল দিই।

তরনী বলে, মা আমি বামপন্থী। ওসব মানি টানি না।

তাছাড়া বাস চলে গেলে মুর্গী গুলো না খেয়ে থাকবে। ওজন বাড়বে না। লস হবে।

মা নির্বিকার।

পরে খবর এলো বাস খালে পড়েছে। কন্ডাক্টর ঘুমোয় নি একদম। কাল তরনী বিনা টিকিটে গেলেও, আজ কয়েকজনের স্থায়ী টিকিট কাটা হয়ে গ্যাছে।


 পুরস্কার 

অভিরুপ প্র্যাকটিস করছে বাড়িতে।

বাবা বল্লেন, অমন আররাহুকা চেঁচাইলে আবৃত্তি হয় ?

বাবা শিক্ষক। সদ্য গ্রাম ছেড়ে তারা শহরে এসেছে।

বছর দেড়েক।

বাবা শিক্ষক, দেখিয়ে দিলেন না। অথচ নিরুৎসাহিত করলেন।

গাঁয়ের স্কুলে, ইতিহাসের ক্লাসে দিলীপ স্যার না পড়িয়ে রবি ঠাকুরের ‘কথা ও কাহিনী’ আবৃত্তি শোনাতেন। সেই থেকে অভিরুপ  নেশায় পড়ে গ্যাছে। সেও বাচিক শিল্পী হতে চায়।

ক্লাস নাইনে শহরের স্কুলে এসে একটা প্রাইজ তার বাঁধা। প্রথম হয়েছে। হেডস্যার পুরস্কার বিতরনীর দিন আবৃত্তির আয়োজন করেছেন। প্রতিযোগিতা।

বিডিও ছেলে সোমনাথ স্মার্ট। দারুন প্রেজেন্টেশন।

হেডস্যার বল্লেন, বাঃ।

অভিরুপকে বল্লেন, মুখস্থ ঠিকঠাক। তবে আবৃত্তির নোটগুলো ঠিক করতে হবে।

অভিরুপ কার্যত সোমনাথের কাছে শিখে ঘাটতি পুরন করার চেষ্টা চালায়।

হেডস্যারও হয়তো অভিরুপের মতো কোনোকালে গ্রীসদেশের মানুষ।

সোমনাথ অবশ্য নিশ্চিত।

বলে, অভি, তুই তো প্রথম পুরস্কারটা পাবি। দ্বিতীয়টা আমি। হাততালি দেওয়ার সময় কিপটেমি করিস নি। তোকেও দেবো।

না, অভিরুপ হাত পেতে নিলো শুধু। হাততালি দিতে হোল না।

::::::::::::::::::::::::::::::::::::


দেবাশীষ সরখেল
 রঘুনাথপুর
 পুরুলিয়া 
 পশ্চিমবঙ্গ 
 পিন 723133  
সম্পাদক শঙ্খচিলের ভাষা


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.