পূর্বকথন
বাড়ি এসে বাবার লেখা উপন্যাসের খাতা আবিষ্কার করে রাজকুমার। বোনকে বলে, কলকাতায় গিয়ে প্রকাশকদের সঙ্গে যোগাযোগের পরিকল্পনার কথা।
পরদিন মানুষের কোলাহলে ঘুম ভাঙে তার। জানতে পারে শ্যামমসায়রে ঢেউ ওঠার কথা, গ্রামের মানুষের অলৌকিক ভাবনার কথা। সেও চলে নিজের চোখে দেখতে। এরপর ...
পর্ব - ১০
পুকুরপাড়ে পৌঁছে দেখে লোকে লোকারণ্য। বিশাল দীঘি এই শ্যামসায়র। চারপাশে নারকোল আর সুপারি গাছে ঘেরা। রাস্তার বাঁহাতে দীঘি আর ডান দিকে বোসেদের বিশাল আমবাগান। রাতের দিকে গ্রামের মানুষ এই ঘন বাগান এড়িয়ে চলে ইদানিং, গত মাসে বোসেদের বড় গিন্নী বাগানের ভিতর সব থেকে বড় ঝাঁকড়া আমগাছটায় গলায় দড়ি দিয়েছিল।
পুকুরের জলে এখনো ঢেউ ভাঙছে ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল। পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়ের মধ্যে থেকে নদে বলে ওঠে - এ কি ঢেউ দেখছ রাজুদা, এখন তো কমে এসেছে। এই বড় বড় ঢেউ ভাঙছিল ভোরে।
নদে মানে নদিয়া মল্লিক। কিচ্ছু কাজকাম করে না। বাবা এখানকার স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তিন বছর আগে মারা যান, চাকরি পায় বড় ছেলে নবকুমার। তবে শিক্ষকের চাকরি নয়, কেরানিবাবুর সেই থেকে নদে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।
উপস্থিত সবাই নানা জল্পনা শুরু করে দেয়। রাজকুমার মনে মনে ভাবে, এ ঘটনার কি ব্যাখ্যা হতে পারে। তবে এটা যে প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয়, এ কথা সে সম্যক বোঝে। একসময় ভিড় পাতলা হতে থাকে, সেও ফেরে ঘরে।
দাদা কি হয়েছিল রে? - উদগ্রীব ঝিনটির প্রশ্নের উত্তরে রাজু পুকুরে ঢেউ ওঠার ঘটনা বলে। ঝিনটি চোখ বড় করে শোনে। তারপর রান্নাঘর থেকে জলখাবারের থালা নিয়ে এসে একটা দাদাকে দেয়, আর একটা নিজে নিয়ে বলে - দাদা খেয়ে নে।
পরোটা আর সব্জি দেখে খুশি হয় রাজু। তৃপ্তি করে খেয়ে বোনকে বলে - বোন, আমি একটু ডাক্তারখানা থেকে আসছি। বাঁকুড়া যাবার আগে কয়েকটা জরুরী ওষুধ নিয়ে আসি।
সূর্য ডাক্তারের চেম্বার এই সাতসকালে ফাঁকা। নিজের রিভলভিং চেয়ারে বসে অল্প অল্প দুলতে দুলতে ঘরের কোণে ঝোলানো ছোট টিভিতে খবর দেখছে ডাক্তার। রাজকুমারকে দেখেই ডাকেন তিনি - আরে এসো এসো রাজু। দেখ কি দেখাচ্ছে টিভিতে।
রাজু দেখে সংবাদ পাঠিকা সবিস্তারে জানাচ্ছেন আজ ভোরে আন্দামান ও সংলগ্ন অঞ্চলে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামি হয়েছে। বহু মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে পশ্চিমবঙ্গের বহু জলাশয়ে ঢেউ দেখা যায়।
এতক্ষনে রাজকুমার বোঝে ঢেউ এর রহস্য। তার মন খারাপ হয়ে যায় দুর্গত এলাকার ছবি দেখে।
সূর্য ডাক্তার জরুরি কিছু ওষুধ দিয়ে দেয় তাকে। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু রোগী আসতে শুরু করেছে। রাজুকে খুব ভালোবাসে ডাক্তার। কিছুক্ষন গল্প করে উঠে পড়ে রাজকুমার। বিদায় নিয়ে বাড়ির পথ ধরে সে।
ক্রমশঃ