Click the image to explore all Offers

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। সোনালী দিনের উপাখ্যান - ১৩।। দেবব্রত ঘোষ মলয়


সোনালী দিনের উপাখ্যান

 
 
দেবব্রত ঘোষ মলয়

পূর্বকথন

রাজকুমারের কাছে কৌস্তভ শোনে তার বাবার ডায়েরির কথা। সাহিত্যে আগ্রহী কৌস্তভকে রাজকুমার পরে শোনায় ডায়েরির প্রথম গল্প। অভিভূত কৌস্তভ বলে এ বই প্রকাশ করা তাদেরই দায়িত্ব। এরপর ...

পর্ব - ১৩

 দাঁড়াও দাঁড়াও ভজাদা, এখানেই নামব - মনন হাত দেখিয়ে দাঁড় করায় ভজাকে। 
রিকশা থামিয়ে ভজা অবাক হয়ে বলে - এখানেই নামবে দাদাবাবু।
নিজের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে রিকশা থেকে নামে মনন। ভজার হাতে ভাড়া দিয়ে বলে - তুমি যাও ভজাদা। আমি একটু সূর্যদার সাথে আড্ডা মেরে যাব।
এখন বেলা দশটা। ভোরের ট্রেনে কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিল মনন। বাবা মারা যাবার পর এই প্রথম সে মামারবাড়ি আসছে। স্টেশনে এসেই রিকশা স্ট্যান্ডে ভজাকে দেখতে পায়। তারপর ভজার রিকশায় সে উঠে বসে মামারবাড়ির উদ্দেশ্যে। স্টেশন থেকে দুপাশে ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে সোজা পাকা রাস্তা মিশেছে ডাক্তারখানায়। মরামের রাস্তা চলে গেছে গ্রামের ভিতর। মরামের রাস্তায় ওঠার আগেই মনন ঠিক করে সূর্যদার  চেম্বারে নামবে।
এখন চেম্বারে ভিড় কম। নিলেশ তাকে দেখেই একগাল হেসে অভ্যর্থনা জানায়। বলে - ভিতরে যাও মনদা, এখন কোন রোগী নেই।
তাকে দেখেই খুশি হয় সূর্য। পিসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। প্রায় আধঘণ্টা গল্প করে দুজনে। তখনই মন জানতে পারে রাজেন ঠাকুরের অকাল মৃত্যুর কথা। তার মন উতলা হয়ে ওঠে। বারে বারে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝিনটির অসহায় মুখ।
কাঁধে ব্যাগ তুলে নিয়ে বলে সে - আমি বাড়ি যাচ্ছি সূর্যদা, তুমি চেম্বার সেরে এসো।
সূর্য হেসে বলে - আমার যেতে যেতে বিকেল তিনটে। এবার তো শুরু হবে রোগীর ভিড়। তুই যা গিয়ে স্নান করে খেয়ে নে, ট্রেন জার্নির ধকল আছে তো। দাঁড়া, নিলেশকে বলি রিকশা ডাকুক।
মন হাত নেড়ে বলে - না না, আমি এটুকু হেঁটেই যাবো। গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে খুব ভালো লাগে আমার।
মোরামের রাস্তায় মিনিট পাঁচেক হাঁটার পরই শ্যামসাগর। বিশাল দীঘি রাস্তার বাঁদিকে, ডানদিকে মস্ত আমবাগান। সেদিকে চোখ যেতেই চমকে ওঠে মনন। আমবাগানের একটু ভিতরেই একটা বড় আমগাছের তলায় দাঁড়িয়ে ঝিনটি। তার পরনে আকাশী রঙ এর চুড়িদার। হলুদ ওড়না কাঁধে। ঝিনটির ছিপছিপে গড়ন পিছন থেকে আঁকা ছবির মত লাগছে। এই প্রথম মনন অনুভব করে ঝিনটির গড়ন অতীব সুন্দর।
পা টিপে টিপে সে গিয়ে উপস্থিত হয় ঝিনটির পিছন দিকে। ঠিক তখনই কিছু একটা অনুভব করে ঘুরে দাঁড়ায় ঝিনটি। সামনে মননকে দেখে অবাক বিস্ময়ে তার মুখে কথা সরে না। বড় বড় দু চোখে মননের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সে, আপেলের মত ফর্সা নরম ঈষৎ ফোলা গাল দুখানির উপর গড়িয়ে পড়া চোখের জলের শুকনো দাগ। টিকলো নাক আর কমলালেবুর কোয়ার মত টুসটুসে ঠোঁট দুটি ঈষৎ ফাঁক হয়ে তিরতির করে কাঁপছে ... বোঝাই যাচ্ছে এই আমবাগানের নির্জনে একা একা সে কাঁদছিল।
তীব্র ভালবাসায় মননের হৃদয় তোলপাড় হয়ে ওঠে। সদ্য সদ্য পিতৃবিয়োগ তাকে শোক সচেতন করেছে। রাজেন ঠাকুরের ঐরকম মর্মান্তিক মৃত্যু এই ছোট্ট মেয়েটার উপর কি ঝড় বইয়ে দিয়েছে অন্তর দিয়ে অনুভব করে সে। তীব্র আশ্লেষে দু হাত দিতে প্রানপনে সে জড়িয়ে ধরে ঝিনটিকে। তার পেলব শরীর মিশে যায় মননের বলিষ্ঠ শরীরে, নরম পায়রার মত দুটি স্তন চেপে বসে মননের বুকে, নিজের ঠোঁটদুটি সে মিশিয়ে দেয় ঝিনটির কোমল ঠোঁটে। তীব্র ভালোবেসে, আদরে আদরে সে দূর করে দিতে চায় ঝিনটির সব দুঃখ,কষ্ট আর শোককে।
এভাবে কত মিনিট কেটে যায় কে জানে, হঠাৎই দুটি কুকুরের চিৎকারে সম্বিৎ ফেরে তাদের, দুজনে দুজনে ছেড়ে দাঁড়ায় মুখোমুখি।
তখন কেঁদে যাচ্ছে ঝিনটি আর অস্ফুটে বলছে - আমার এ কি সর্বনাশ হল মনদা। বাবা কেন এভাবে চলে গেল। বিধাতার এই কি বিধান, তো।আর বাবাও চলে গেল কদিন আগে। তোমারও তো মনে কত কষ্ট।
সামলে ওঠে মনন। বলে - চল ঝিনটি। আমাদের দুজনের জীবন একই খাতে বইছে যখন, আজ থেকে শপথ নিলাম সারা জীবন আমি থাকব তোর পাশে। সে যতই আসুক ঝড় ঝাপটা।
আমগাছের মাথায় বসে এতক্ষন বোধহয় শিকারের অপেক্ষা করছিল একটা চিল। হঠাৎই ডানা ঝটপট করে উড়ে গেল কিসের খোঁজে। গাছের উপর থেকে ঝরে পড়ল কয়েকটি শুকনো পাতা।
ক্রমশঃ

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.