Click the image to explore all Offers

গল্প।। বাংলো বাড়ির ভূত।। অঞ্জনা দেবরায়

 বাংলো বাড়ির ভূত


 

অঞ্জনা দেবরায়



মামা হঠাৎ এসে বলতে লাগলো কিরে মিঠু এবার ২৫ শে ডিসেম্বর পিকনিকে যাবি না?
 মিঠু বলল, হ্যাঁ মামা আমরা যাব কিন্তু কোথায় যাব ঠিক করিনি কিছু। এখনো একমাস সময় আছে। মামা বলল- শোন মিঠু আমি একটা জায়গা বলবো  সেখানে যাবি ? তাহলে আমিও তোদের সাথে যাব ভাবছি । মিঠু বলল ঠিক আছে মামা তাই হবে, বল কোথায় জায়গাটা। 
বসিরহাটে একটি বাংলো বাড়ি আছে সেখানে বাগানবাড়ি ও আছে, পাশে নদী আছে, নৌকা চড়ার ব্যবস্থা আছে খুব ভালো লাগবে। তবে এক রাত সেই বাংলো বাড়িতে থাকলে আরো ভালো লাগবে। পূর্ণিমা দেখে গেলে ভালো হবে, চাঁদের আলোয় নদীর জল ও বাগান এবং বাংলো বাড়ি চারপাশটা নাকি খুব সুন্দর দেখতে লাগে
 মিঠু বলল ঠিক আছে মামা আমি সবাইকে বলে রাখব। বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে বলা হলো। সবাই মিলে ঠিক করা হল ২৫ শে ডিসেম্বর পিকনিকে যাওয়া হবে। কিন্তু দিনটা পূর্ণিমার দিন হলো না, অমাবস্যার কাছাকাছি হল। কেননা সবার ছুটি দেখে যেতে হবে কিনা, মামা শুনে বললো ঠিক আছে, বাংলো বাড়ির চারপাশে ও নদীর চারপাশে প্রচুর আলোর ব্যবস্থা আছে খারাপ লাগবে না। সবাই তখন আনন্দে দিন গুণছে।
 অবশেষে ২৪ শে ডিসেম্বর এসে গেল। সবাই আনন্দে ব্যাগ গুছিয়ে নিল কেননা একদিন থাকতে হবে। একটা বাস ঠিক করে রাখা হয়েছিল। ভোর হল, সবাই তৈরি হয়ে বাসে ওঠা হল। আমরা ৩০ জন ছিলাম। বাস সকাল সাতটায় ছেড়ে গেল এবং বেলা ১০ টায় আমরা পৌঁছে গেলাম বাংলো বাড়িতে । বাংলো বাড়িটি দেখে আমরা অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। চারদিকে ঘন গাছ তার মাঝখানে বাড়িটি। ঘন গাছের সারি ছাড়িয়ে নদী,  খুব ভালো লাগলো। তারপর সবাই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সকালের খাবার খেলো। সকালের খাবার প্যাকিং করে নিয়ে আসা হয়েছিল । দুপুরের খাবার রাতের খাবার বাংলোর কিচেঢ়নে রান্না করা হবে। খুব সুন্দর ব্যবস্থা। কিচেন খাবার ঘর সবই দেখার মত। সবার থাকার জন্য আলাদা ঘর দেওয়া হয়েছিল। সবাই সারাদিন নানা রকমের খেলা, গানের লড়াই, ক্যুইজ এর মধ্য দিয়ে আনন্দে সময় কাটালো। নদীর ধারে ও বেড়ানো হলো। সন্ধ্যে হয়ে আসলে সবাই বাংলোর হলঘরে একসাথে নাচ, গান, কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান করে রাতের খাবার খেয়ে যে যার ঘরে গিয়ে বসেছি।
 
অমনি মনে হচ্ছে গ্রামোফোনে গানের সাথে বাংলোর বাইরে নুপুরের ছন্দ বাজিয়ে নেচে বেড়াচ্ছে কেউ। 
কিছুক্ষণ পরে কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে আবার বাংলো বাড়িতে ছাদের উপর কেউ যেন নাচছে। 
সবাই ভয় পেয়ে যে যার ঘরে চুপ করে বসে ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে সবাই হলঘরে বেরিয়ে আসলো। বাংলোর দুজন কর্মচারী হল ঘরে শুয়ে ছিল। সবাইকে নেমে আসতে দেখে ঘুম থেকে উঠে বললো, বাবু আপনারা সবাই এখানে এসেছেন এত রাতে, ঘুমাওনি। মিঠু বলল ঘুমাবো কি করে? তোমরা কি শুনতে পাওনি বাংলোর ছাদেও বাইরে থেকে নাচের শব্দ, গানের আওয়াজ আসছ?  কর্মচারী দুটো বলল-এত রোজকার ব্যাপার বাবু। সবাই মিলে বলল মানে? কর্মচারী দুটো বলল কেন আপনারা জেনে আসেননি, এখানে রোজ রাতে আত্মা ঘুরে বেড়ায়। সেই কথা শুনে মিঠু মামা কে ডাকল ও বলল, মামা তুমি কিছু জানতে না? মামা বলল আমার এক বন্ধু এখান আসার কথা বলেছিল কিন্তু এই ভূতুরে ব্যাপার সম্বন্ধে কিছু জানায়নি। বাংলোর কর্মচারীরা বলল বহুকাল আগে বাংলো বাড়িতে নাচের জলসা বসত। অনেক নাচনেয়ালি আসতো এখানে নাচ করতে। তার মধ্যে দুজনের হঠাৎ করে মৃত্যু হয়েছিল। সেই নর্তকীদের আত্মা রোজ রাতে ঘুরে বেড়ায় ও গান নাচ করে বেড়ায়, তারি শব্দ শোনা যায়। বিশেষ করে অমাবস্যা তিথিতে বেশি শোনা যায়। অবশ্য ওরা বাংলোর ভেতরে এসে কিছু উপদ্রব করে না। এর জন্য এখানকার লোকেরা এই বাংলোবাড়িটিকে ভূত বাংলো বলেই জানে। একথা শুনে মিঠু ও মিঠুর মামা আর সবাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে রইল আর ভোর হওয়ার অপেক্ষায় রইল।
-----------------------  
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.