বৃদ্ধা
অঙ্কিতা পাল
ব্যস্ত শহর জনকোলাহল, এক অসুস্থ বৃদ্ধা রাস্তার ফুটপাতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কত লোক পাশ দিয়ে চলে যায় ফিরেও তাকায় না, আবার কেউ কেউ নাক দেকে চলে যায়। এভাবে পার হয়ে যায় কত সময়। সূর্য দেবতার এবার অস্ত যাওয়ার সময় হয়েছে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো। একজন অফিসের বাবু বাড়ি ফেরার তাড়ায় বৃদ্ধার গায়ে পা তুলে দেয়, বৃদ্ধা ও যন্ত্রণায় তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে। লোকটি কোনকিছুর ভ্রুক্ষেপ না করেই মচমচ করে হেঁটে চলে যায়, ঘটনা ক্রমে সেই সময় এক রিকশাওয়ালা উপস্থিত হয়। সে তড়িঘড়ি করে রিকশা নিয়ে ডাকতে থাকে_ এই বাবু এই বাবু দাঁড়া দাঁড়া। অফিসের বাবু অবশেষে একটু দাঁড়িয়ে বিরক্ত ভাবে বললেন _ আমি যাবনা কাছেই থাকি। রিক্সাওয়ালা বললো_ তুই কি ম্যানষের ছা? যে বুড়িটাকে মারিয়ে আধমরা করে চলে গেলি? অফিসের বাবু অবাক হয়ে বললেন_ বুড়ি? কোন বুড়ি আমি চিনিনা। রিকশাওয়ালা খিটমিট করে বললো _ তা চিনবি ক্যানে? গে দ্যাখ মোলো নাকি? অফিসের বাবু হন্ততন্ত হয়ে রিকশা আলার সাথে বুড়ির কাছে গেলেন, তারপর দুজনে ধরে রিক্সায় তুলে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন।
সেখানে বৃদ্ধার কিছুদিন চিকিৎসা করার পর_ তিনি সুস্থ হলো। কিন্তু রিক্সাওয়ালা নিজের কর্তব্যে গাফিলতি করলো না, পরে একদিন সকালে সে তাকে নিজের বস্তির বাড়িতে নিয়ে এসে বাড়ির দাওয়ায় বসিয়ে বউকে খবর দিতে যায়।
সে সমস্ত ঘটনা তার বউকে খুলে বলে, শুনে তার বউ তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে এবং চিৎকার করতে করতে বলে _ আমাদের এই ভাঙ্গা ঘরের চার চারটে প্রাণীর বাস। নুন আনতে পান্তা ফুরায়, আবার কোত্থেকে এক আপদ জুটিয়ে অনলি। দিতে তাদের মাটির দাওয়ায় বসে সকল কথা শোনে, মনে পড়ে তার পুরনো স্মৃতি - তার সাত মহলা বাড়ি, স্বামী, দুই ছেলে, দুই বউ ও নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার ছিল। কিন্তু তার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে ছেলেরা বার করে দেয়। সে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে আজ ঘুটে কুরুনী। এইসব ভেবে বৃদ্ধা অঝর নয়নে কাঁদতে থাকে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় তাদের ঝগড়ার থামেনা, বৃদ্ধা মনস্থির করে সে চলে যাবে এইভেবে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। ঠিক সেইসময় রিক্সাওয়ালা দুই ছেলে খেলা শেষ করে বাড়ি ফিরে এসে তাকে দেখে ভারি খুশি হয়। বড়ো ছেলে বিভাস তাকে জিজ্ঞেস করে তুমি কে গো? কাঁদছো কেন? ছোট ছেলে গোপাল বলে - কেদনা দিদা তুমি এখন থেকে এখানেই থাকবে, তোমাকে কোথাও যেতে দেব না। তারা মিষ্টি মিষ্টি করে আরও বললো যে বাবা আমাদের তোমার সব গল্প করেছে, দিদা ডাক শুনে বৃদ্ধার প্রাণ ভরে গেল। রিকশাওলার বউ ও মা এর মতো করে বৃদ্ধাকে আদরের সাথে তাদের বাড়িতে রেখে দিলো। বৃদ্ধা সারা জীবনের জন্য তাদের বাড়িতে থেকে গেল।