করোনাবেলার কথা
সুদীপ ঘোষাল
পর্ব- তিন
এদিকে আলো কেরালায় এসে বিয়ে করেছে এক বাঙালি মেয়েকে, তার নাম মিনতি। মায়ের কাছে যাবে বলে আলো সব গুছগাছ করেও যেতে পারল না কারণ কর্ণাটকে দেশজুড়ে এখন লকডাউন চলছে। তারা যেতে পারল না, যাওয়া মনস্থ করে ও বলল- লকডাউন মিঠে গেলে তখন মায়ের কাছে যাব। আলো শিক্ষিত ছেলে এবং মিনতি অশিক্ষিত। আলো খবরের কাগজ পড়ে, খবর শুনে আর প্রতিদিন তাদের সেই অভিজ্ঞতা ডায়রিতে লিখে রাখে। আজকে আলো লিখছে তার প্রথম অভিজ্ঞতা---
সে লিখছে, করোনা আতঙ্কে ২০২০ সালের ২২ শে মার্চ রবিবার প্রথম লক ডাউন ঘোষণা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর কিছু সময় কেনাকাটি, বাজার করার পরে টানা একত্রিশে মার্চ অবধি টানা লকডাউন শুরু হয়ে গেল। বেশিরভাগ মানুষ সচেতন কিন্তু অনেকেই বাহাদুরি করে বাইরে যাচ্ছেন। চীনদেশ, ইতালি এরাও প্রথমে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে করোনা ভাইরাস কোভিড 19 ছড়িয়ে পরে সারা পৃথিবীতে। পুলিশ, প্রশাসন কড়া হয়েছেন। কিছু পাবলিক লাথখোড়। তার কিছুতেই নিয়ম মানতে চাইছে না। মুরগির মাংস কিনতে, মাছ কিনতে, মদ খেতে, জুয়া খেলতে বেরিয়ে পড়ছে বাড়ির বাইরে।
মিনতি বলল, সোম, মঙ্গল,বুধ পেরিয়ে গেল। এখনও লকডাউন চলছে। কতদিন চলবে কেউ জানে না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আলাদা করে তৈরি করা হচ্ছে 'করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র'। ৩ হাজার শয্যার করা হতে পারে এই চিকিৎসা কেন্দ্র। নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা আলাদা জায়গায় নয়, একই হাসপাতালে চিকিৎসা করা হবে। করোনা মোকাবিলায় নতুন এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাজ্য সরকার। এখন সুপারস্পেশ্যালিটি ব্লকে ৩০০ শয্যা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে করোনা–আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, গোটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকেই করোনার চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করে বিশেষভাবে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। তবে এদিন বিকেল পর্যন্ত লিখিত কোনও নির্দেশিকা আসেনি। নির্দেশিকা দ্রুত জারি হবে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর। সম্পূর্ণ একটি হাসপাতাল যদি শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসার জন্য করার ভাবনা–চিন্তা সত্যিই হয় তাহলে রাজ্যে এটি নজিরবিহীন হবে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর থেকেই নতুন করে রোগী ভর্তি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল। এখন ৩০০ শয্যা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে করোনা–আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা কেন্দ্র।
আজও আলো লিখে চলেছে তার ডায়েরি করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে। সে লিখছে, হাসপাতালের ৯ তলার যে সুপারস্পেশ্যালিটি ব্লক রয়েছে সেখানে দুটি তলা রাখা হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য। বাকি ৭টি তলায় করোনা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা করা হবে। নতুন হস্টেলও বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে। এদিন মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে জরুরি বিভাগ ডাকা হয়। এই সপ্তাহেই সুপারস্পেশ্যালিটি ব্লকে এই পরিষেবা শুরু হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। করোনা সংক্রান্ত সব ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কলকাতা মেডিক্যালের উপাধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, 'করোনা–আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীর সংখ্যা বাড়লে আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। তাই নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া কমাতে হবে। না হলে করোনা–আক্রান্ত রোগীদের জায়গা দেওয়া মুশকিল হবে। আপাতত ৩০০ শয্যার সুপারস্পেশ্যালিটি ব্লকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তবে শুধুমাত্র করোনা রোগীর চিকিৎসা হবে বলে গোটা হাসপাতাল খালি করতে হবে এরকম কোনও লিখিত নির্দেশনামা আমাদের কাছে এখনও আসেনি। যদি নির্দেশ আসে তখন সেইভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হবে।' এখন ২,২০০টি শয্যা রয়েছে মেডিক্যালে। সেটি বাড়িয়ে ৩,০০০ করার পরিকল্পনা। স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী সব হাসপাতালেই পেডিয়াট্রিক, চেস্ট, কমিউনিটি ও জেনারেল মেডিসিন, ইএনটি এবং মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্টদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড করতে হবে। সেই অনুযায়ী এখানেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রয়েছেন। তবে এখন অন্য অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন যাঁদের চিকিৎসা চলছে এখানে। শয্যা খালি করার জন্য সেই চিকিৎসাধীন রোগীদের দ্রুত অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজও অনেকে বাইরে বেরিয়েছে। কোন বিজ্ঞানসম্মত বারণ মানতে চাইছে না। যদি কাউকে মানা করা হচ্ছে সে তার উত্তরে খিল্লি করছে, হাসছে পাগলের মত। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাড়িতে বসে যতটা পারছি ফেসবুকে সাবধানতার পোষ্ট দিচ্ছি। কবিতা, গল্প পোষ্ট করছি। শীর্ষেন্দু বাবুর গল্পের লিঙ্ক পেয়েছি। গল্প পড়ছি। এখন পড়ছি, মনোজদের অদ্ভূত বাড়ি, গল্পটা। ছেলেটা মোবাইলে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে বলছে, ভয়ঙ্কর অবস্থা, কি হবে বাবা? পাড়ার এক মা ছেলেকে বকছেন, টেনশন করবি না। সাবধানে থাকবি। হাত, মুখ সাবান দিয়ে ধুবি। চান করবে। তাহলে কিছুই হবে না। বাড়িতে বসে বসে পড়। বাইরে একদম বেরোবে না।ছেলে খুব সচেতন। সে মা কে বলে, মা তুমি কিন্তু হাত কম ধুচ্ছ। রান্না করার আগে হাত ধোও সাবান জলে।আমি জানি, আমাদের এইটুকুই জ্ঞান। আর বেশি কিছু জানি না। তবে বাবা বলতেন, সাবধানের মার নেই। ছেলেটির বাবা ও বাইরে কাজ করে তিনিও ফিরতে পারেননি এখন ওরা পাশেই আমাদের পাশেই আছে ছেলে আর মা তারা অনেক দিনের পরিচিত তাদের কথাবার্তা আমরা জানালা দিয়ে শুনতে পাচ্ছি।
আলো দেখলো পাশের বাড়িতে জমি জায়গা নিয়ে ঝগড়া চলছে এক চাষীর।
সে লিখছে, চাষী তার গরু উঠিয়ে আল ভেঙ্গে দেয়। আমি জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে থামতে বললাম,বেঁচে থাকলে অনেক বাড়ি হতে পারে। এখন ঝগড়া করার সময় নয়।একজন আমাকে মেসেঞ্জার বক্সে একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল। আমার কথা বলা হয়নি তার সঙ্গে। তাই সে রেগে আমাকে ব্লক করে দিল। সব ঝগড়ার সূত্র সেই ভুল বোঝাবুঝি।যাইহোক মেসেঞ্জার কয়েকদিনের জন্য আনইন্সটল করে দিলাম। এখন একটাই চিন্তা পৃথিবীর এই কঠিন রোগ। ভাইরাস আ্যাটাকে সারা বিশ্ব রোগগ্রস্ত। এখন দূরে দূরে থাকার সময়। দূরে থাকলে বাঁচব আর একত্রে সমাবেশ করলে মরব। ভাইরাস মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে যাচ্ছে চেনের মত। এই চেনকে ভাঙ্গার জন্য লকডাউন।
প্রকৃতি শুদ্ধ হচ্ছে। লকডাউন করার ফলে দূষণ কমছে ব্যাপকহারে।এবার প্রধানমন্ত্রী একুশ দিনের লক ডাউন ঘোষণা করলেন। সচেতনতা প্রয়োজন মানুষের। গ্রামেগঞ্জে কেরালা,মুম্বাই থেকে কাজ করে ফেরা লোকগুলো যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে সংক্রমণ ক্রমশ উর্ধ্বমুখি। আমলা থেকে সাধারণ মানুষের ছেলেপুলে সব একই অবস্থা। রাস্তায় বেরিয়ে সেলফি তুলছে। প্রশাসন কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু করার নেই। মানুষের চেতনা জাগ্রত না হলে ধ্বংস হবে সভ্যতা। এখন বাংলায় বসন্তকাল চলছে। পাখি ডাকছে, ফুল ফুটছে। পাখিরা পশুরা উন্মুক্ত আকাশের নিচে আর মানুষ ঘরবন্দি। মানুষ শক্তিশালী প্রাণী। কিন্তু প্রকৃতির বিচার নিরপেক্ষ। তাই আজ উল্টোচিত্র। প্রকৃতি কি হাসছে। জানি না তবু এটুকু বলতে পারি, ভাবার সময় এসেছে। কল কারখানা, ধোঁয়া আবর্জনায় পৃথিবী কলুষিত। তাই আজ এই প্রতিশোধ।চারিদিক নিস্তব্ধ। খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া কোন কাজ নেই। বাজার করা, মাছ কেনা, স্কুল যাওয়া সব বন্ধ। একটা কোকিল গান শুনিয়ে চলেছে। ফিঙেটা ইলেকট্রিক তারে বসে ডাকছে। ওরা মানুষের মত স্বার্থপর নয়। তাই হয়ত গান শুনিয়ে চলেছে এই দুর্দিনে। আজকের খবরে শুনলাম, করোনাভাইরাসের জেরে ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতিতে। লকডাউনের জেরে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে ছোট থেকে বড় সংস্থায়। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসে তহবিল ঘোষণা করল দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। এসবিআই সূত্রে খবর, চলতি ২০১৯–২০ আর্থিক বছরে মুনাফার ০.২৫ শতাংশ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে করোনা প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যয় করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি বৃহত্তম সংস্থাকে নিজেদের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা খাত থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যয় করার পরামর্শ দেয় কিছুদিন আগে। এবার তা পালন করতে চলল এসবিআই।এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার জানান, 'এই তহবিলটি মূলত স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে জড়িত। দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত খাতে ব্যবহার করা হবে। এসবিআই ভারতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বৃহত্তর পদক্ষেপ নিয়েছে। এই তহবিলটি মূলত সুবিধা থেকে বঞ্চিত মানুষকে স্বাস্থ্যপরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে।'
তিনি অন্যান্য কর্পোরেট সংস্থার কাছেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন, গোটা দেশ একটা কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছে। মানুষের চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন। সতর্কতামূলক এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীকে উদারভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।ভরসা পেলাম। খাবারের জোগানও অব্যাহত থাকবে। রাজ্যসরকার থেকে দিন আনা দিন খাওয়া লোকেদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সরকার সবদিক ভাবছেন। মানুষই একমাত্র মানুষকে বাঁচাতে পারে। ডাক্তার, নার্স, আয়া, পুলিশ সকলে জীবনকে বাজি রেখে মানুষ তথা পৃথিবীকে বাঁচানোর কাজে লেগে পড়েছেন। এ এক আশার কথা। ভালো লাগছে এই কথা ভেবে যে সকলে রাজনৈতিক জীবনের উর্ধে উঠে মনেপ্রাণে এক হয়ে কাজ করছে। এই অপূর্ব মিলনের বার্তা একমাত্র ভারতবর্ষ দিতে পারে। সকলে তাকিয়ে আছে আমাদের দেশের দিকে। সারা পৃথিবী মিলিত হোক মানবতার মহান জগতে। পৃথিবী ভাল থেক। পৃথবী নিরোগ হও।আজ একটা সংবাদপত্রে পড়লাম, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে এবার সরাসরি চীনের দিকে আঙুল তুলল আমেরিকা। আর এই আঙুল তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগাম বিপদ সম্পর্কে চীন সতর্ক করলে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। বেজিংকে সরাসরি এই ভাষাতেই বিঁধলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকী তিনি এই বিষয়ে সামান্য বিরক্ত বলেও মন্তব্য করেছেন। আমেরিকার চিকিৎসকদের সেখানে পরিদর্শনে যেতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প।এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন দেশের যে তিনটি জায়গাকে সংক্রমণের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছে, সেগুলো হল নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওয়াশিংটন। তালিকার প্রথমেই আছে নিউ ইয়র্ক। সেখানে ১৫ হাজার নিশ্চিত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৫৪১৮টি সংক্রমণ ঘটেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এখনও পর্যন্ত ১১৪ জন মারা গিয়েছেন। একদিনেই প্রাণ গেছে ৫৮ জনের। গোটা আমেরিকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি। মারা গিয়েছেন সাড়ে চারশো।আমি ভাবি দেশের কথা, পৃথিবীর কথা।এখন দোষারোপের কথা বাদ দিয়ে পৃথিবীকে বাঁচাই। সকলের সমবেত চেষ্টায় রোগমুক্তি ঘটুক পৃথিবীর। কারাবাসে যেমন বন্দি থাকা হয় এই গৃহাবাস কিন্তু ততটা বিরক্তিকর নয়। সংসারের মাঝে থেকে একটু একা একা থাকা। একটু রামকৃষ্ণ পড়ি, একটু রবীন্দ্রনাথ পড়ি, একটু জীবনানন্দ বা বিভূতিভূষণ পড়ি। সময় কেটে যাবে আরামসে। দেরাজে রাখা বইগুলো একটু পরিষ্কার করে রাখি। রান্নায় সাহায্য করি স্ত্রীকে। দূরে থেকে সকলকে বাঁচিয়ে চলতে পারলেই জীবনের খোঁজ পাওয়া যাবে।"অসদো মা সদগময়, ত্বমসো মা জ্যোতির্গময় " এই মন্ত্রে এগিয়ে চলি নিশ্চিন্তে।আবার খবরের কাগজে দেখলাম কি মারাত্মক পরিস্থিতি সারা বিশ্বের। নাকানিচোবানি খাচ্ছে গোটা দুনিয়া। প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। মারণ ভাইরাস সংক্রমণে বিশ্বে মৃত ১৭,২৩৫ জন। এ–পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩,৯৫,৮১২। ইতালি এখন মৃত্যুভূমি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৬০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ইতালিতে এখনও পর্যন্ত মৃত ৬,০৭৮। আক্রান্ত ৬৩, ৯২৭। ইতালির লম্বার্ডির অবস্থা ভয়াবহ। ইতালির মোট মৃতের প্রায় অর্ধেক লম্বার্ডির বাসিন্দা। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৩,৭৭৬ জনের, আক্রান্ত ২৮,৭৬১। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে দেরির কারণেই ইতালির এই অবস্থা। শুধু প্রবীণদেরই নয়, ইতালিতে ৩০–৪০ বছরের কোঠায় যঁাদের বয়স, তঁাদেরও কাবু করছে করোনা। নাজেহাল গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন— সব দেশেই।স্পেনের অবস্থা এখন ভয়াবহ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মারা গেছেন ৫১৪ জন। মোট মৃত ২,৬৯৬। আক্রান্ত ৩৯,৬৩৭। মৃতদেহ রাখার জায়গা অমিল। অনেক জায়গায় বাড়িতেই পড়ে আছে মরদেহ। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, মৃতদেহ হিমঘরে রাখা যায়, কিন্তু করোনায় মৃত্যু শুনলে কেউ মৃতদেহ স্পর্শ করছে না। অন্ত্যেষ্টির কাজে নিযুক্ত কর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অবস্থা মোকাবিলায় নেমেছে সেনাবাহিনী।ওদিকে ফ্রান্সও নাজেহাল। সেখানে মৃত ৮৬০, আক্রান্ত ১৯,৮৫৬। রাজধানী প্যারিসের রাস্তা এখন খঁাখঁা করছে। প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ। কাফে, রেস্তোরঁার ঝঁাপ বন্ধ। লোকজনের দেখা নেই। নিঃশ্বাস ফেলতেও যেন ভয়। কে জানে কখন ভাইরাস ঢুকে পড়ে শরীরে! আতঙ্কে মানুষ ঘরবন্দি। ব্রিটেনেও ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। সেখানে মৃত ৩৩৫। আক্রান্ত ৬,৬৫০। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশে তিন সপ্তাহ লকডাউনের ঘোষণা করেছেন। দেশবাসীকে ঘরবন্দি থাকতে বলেছেন। দু'জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ। আমোদপ্রমোদের জন্য সপ্তাহ শেষে কেউ পার্ক বা অন্য কোথাও জড়ো হলে নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থা। ওষুধ আর অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান খোলা। বাকি সব বন্ধ। বিয়ে আর ব্যাপটাইজেশনও বন্ধ থাকবে।
এদিকে কানাডায় করোনায় মৃত ২০। আক্রান্ত ১,৪৭৪। সংক্রমণ মোকাবিলায় ৩৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে কানাডা সরকার। সংক্রমণ এড়াতে সকলকেই ঘরবন্দি থাকতে বলছেন। কিন্তু কেউ কেউ আইসোলেশনের তোয়াক্কা করছেন না। তাতেই চটেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বলেন, 'অনলাইনে আমরা অনেক লোকজনের ছবি দেখছি। তঁারা ভাবছেন তঁাদের কেউ দেখতে পাচ্ছেন না। ভাল, তবে আপনাদের দেখা যাচ্ছে। যথেষ্ট হয়েছে। বাড়িতে যান, ঘরেই থাকুন। আমরা নিয়ম মানতে বাধ্য করব। তা লোকজনকে সচেতন করেই হোক বা জোর করেই হোক।'
আমেরিকায় উদ্বেগ তুঙ্গে। মৃত ৫৮২ জন।এ অবস্থায় লক ডাউনে থেকে করোনার চেন ভাঙ্গতে হবে। অন্য কোন উপায় নেই। গ্রাম থেকে শহরের প্রত্যেকটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে করোনা মোকাবিলায় কলকাতা পৌরসভার উদ্যোগে জোর কদমে চলছে শহর স্যানিটাইজ করার কাজ। কিভাবে গাড়ি করে সকলের বাড়ির সামনে এসে নিঃশব্দে কাজ করে চলেছে সুন্দর।
বাড়িতে যথেষ্ট খাবার মজুত নেই। ছাড় দেওয়া আছে মুদিখানা, সব্জিবাজারকে। একজন করে পরিবার পিছু ভিড় না করে বাজার করা নিয়ম। কিন্তু এটা একশ চল্লিশ কোটির দেশ। ভিড় হয়ে যাচ্ছে যেখানে সেখানে। পুলিশের টহল চলছে। আমার স্ত্রী পাড়ার দোকান থেকে চাল, ডাল কিনে আনলেন। আমরা তিনজন। গ্রামের বাড়িতে অন্যান্য সদস্যরা আছেন। তাদের খবর রাখছি মোবাইল ফোনে, হোয়াটস আ্যপে। তাছাড়া উপায় নেই।এক একজন ধনীলোক প্রচুর খাবার মজুত করছেন বাড়িতে। এর ফলে খাবারের অভাব হতে পারে। এক সব্জীব্যবসায়ী বললেন, যার দরকার আড়াইশ আদা তিনি নিয়ে নিচ্ছেন আড়াই কেজি। চড়া দাম দিতে তারা প্রস্তুত। এ এক অদ্ভূত মানসিকতা। তারা বলছেন, নিজে বাঁচলে বাপের নাম থাকবে। তবু সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। জীবনের চরম মুহূর্তের কথা তারা ভুলে যায়। কত রাজার ধনে মরচে পরেছে ইয়ত্তা নেই। শিক্ষা নিতে হয় অতীতের কাছে। আমার পাশের বাড়ির সকলেই কিছু খাবার কিনলেন। একুশ দিন যাওয়ার মত। কম খেতে হবে। প্রকৃতি তার হারানো ছন্দ খুঁজে পাচ্ছে জেনে আনন্দ হল। পাঁচশ বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু যেমন ছিলো সেরকম হতে চলেছে পৃথিবী। প্রকৃতি সব দিক দিয়ে মারেন না। একদিক ভাঙ্গলে আর একদিক গড়ে দেয়। আশার অনেক কিছু আছে। "আশায় বাঁচে চাষা। "
আমার স্ত্রী বাজারে গেছিলেন আজ। দোকানে দড়ি দিয়ে মেপে এক মিটার দূরে ইঁট পাতা আছে।লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গ্রাহকরা,।পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছেন বাজার, রাস্তা। জরুরি অবস্থায় সকলে চিন্তিত। কি করে একুশ দিন কাটবে। কাটবে ঠিকই। আবার ফুটবে ফুল। আবার হাসবে শিশু পৃথিবী।
আজ ঘুম থেকে একটু দেরি করে উঠলাম।এখন সকাল নয়টা বাজে ঘড়িতে। চা মুড়ি আর প্রেশারের ওষুধটা খেলাম। সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি অবশ্যই।খবরের কাগজ পেলাম।হেডিং -ভালবাসার দেশ কিউবা।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করতে ইতালিতে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল পাঠিয়েছে কিউবা। দেশটি জানিয়েছে, ইতালির অনুরোধে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সের একটি ব্রিগেড রওনা হয়ে গেছে। করোনায় জর্জরিত ইতালির লমবার্দি অঞ্চলে কাজ করবে তারা। ১৯৫৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর দুর্যোগ মোকাবেলায় কমিউনিস্টশাসিত কিউবা প্রায়ই তাদের 'সাদা পোশাকের বাহিনী' পাঠিয়ে আসছে। এর আগে হাইতিতে কলেরা এবং পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও দেশটির চিকিৎসকরা সামনের কাতারে ছিলেন।এবারই প্রথম কিউবা বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ ইতালিতে ৫২ সদস্যের শক্তিশালী একটি দল পাঠাচ্ছে; যার মাধ্যমে দেশটি তাদের 'চিকিৎসা কূটনীতির' বড় ধরনের নজিরও স্থাপন করতে যাচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এ নিয়ে কিউবার ষষ্ঠ মেডিকেল ব্রিগেড অন্য কোনো দেশের উদ্দেশে রওনা হলো। দেশটি এর আগে তাদের সমাজতান্ত্রিক মিত্র ভেনিজুয়েলা, নিকারাগুয়ার পাশাপাশি জ্যামাইকা, সুরিনাম ও গ্রেনাদাতেও চিকিৎসকদল পাঠিয়েছে। শনিবার ইতালির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে চিকিৎসকদলের সদস্য ৬৮ বছর বয়সী লিওনার্দো ফার্নান্দেজ বলেন, 'আমরা সবাই বেশ ভীত, কিন্তু আমাদের বিপ্লবী দায়িত্ব আছে, তাই আমরা আমাদের ভয়কে একপাশে সরিয়ে রেখেছি।
ক্রমশঃ