Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প।। ব্যথা----------- পার্থ সারথি চক্রবর্তী


 

ব্যথা

পার্থ সারথি চক্রবর্তী 


কশো টাকায় আর কি হয়! তারমধ্যে দুটো ব্যথার ওষুধ কিনতে প্রায় আঠারো টাকা আর অম্বলের ওষুধে....।  থাক আজ সহ্য করবে, যে করেই হোক।
আসলে সহ্য তো করতেই পারে, অন্তত আগে তো ভালোই পারত। ইদানীং কিছুটা ....., বিশেষ করে দু'মাস আগের ধাক্কাটার পর।
এক কেজি আলু, আধসের বেগুন আর লাফা শাক নিয়ে নিল। বাচ্চাদের জন্য দুটো ডিম। এতে ষাট টাকা গরচ হয়ে গেল। হাঁটতে লাগল বাড়ির দিকে। পথে দেখা রফিকের সাথে। সাইকেল নিয়ে উর্ধশ্বাসে যাচ্ছে।  ওকে দেখে বলল, পাশের বস্তিতে গন্ডগোল লেগেছে। যা বোঝাল, তাতে নতুন কিছু মনে হলো না!  
নিত্যসঙ্গী দারিদ্র্য ও তার অনুষঙ্গ হিসেবে অশান্তি, মারামারি এ তো চলতেই থাকে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেগে আছে অভাব, অনটন ও অনাহারের গল্প। এ চত্বর জুড়ে।
 
হাটুর ব্যথাটাও জানান দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাড়িতেই রওনা হলো। গিয়ে যদি লন্ঠনের সেকঁ দেওয়া যায়।

পুস্পর হাতে থলেটা দিয়ে হাত পা ধুয়ে বসল। এক কাপ লাল চা আর অল্প চালভাজা এসময় বরাদ্দ। হঠাৎ রতন আর চন্ডি হন্তদন্ত হয়ে এল। 
' মথুরদা, ও মথুরদা! '
' কে এল রে আবার? কি হল! '
' দাদা গো, তুমি চলো একবার পাশের বস্তিতে। ভীষণ গন্ডগোল হয়েছে। তুমি না গেলে চলবে না '।
' কেন রে, কি হয়েছে?'
' তাড়াতাড়ি চলো, পুলিশ এল ব'লে।'

যেতে যেতে যা বুঝল, দারিদ্র্য ও অভাবের চোরাপথ দিয়ে পাচারচক্রের বিষ ঢুকে পড়ছে এলাকায়। কি সব্বোনাশ! তাই যদি হয়, পাচারচক্রের চাঁই, পান্ডারা ধীরে ধীরে নখদন্ত বের করবে। না এ হতে দেওয়া যায় না। যাবে না কিছুতেই! বাবার কাছে গল্প শুনেছিল, আগেও দারিদ্র্য ছিল এ অঞ্চলে। আর তার সুযোগে অনেক অসামাজিক কার্যকলাপ ঢুকে পড়তে সচেষ্ট হয়েছিল। তবে মথুরের বাবার নেতৃত্বে গ্রামবাসী এক হয়ে রুখে দাঁড়ায়। পিছু হটতে বাধ্য হয় অসাধু চক্র। মথুরের বাবা কিন্তু তাই বলে তথাকথিত নেতা ছিলেন না! তবে সবাই কেন জানি, ওনার কথা শুনতেন। আসলে যার যেখানে যখন কোন বিপদ, অসুবিধা হতো; তার পাশেই তিনি দাঁড়াতেন।

বস্তিটার কাছে যেতেই শোরগোল শোনা গেল। এলাকার লোকজন দুটো ছেলেকে বেঁধে রেখেছে। বহিরাগত মনে হচ্ছে! পুলিশের গাড়িও পোছে গেল প্রায় তখনই। ছেলেদুটো নাকি বস্তির একটি মেয়েকে কাজ দেবার নাম করে শহরে নিয়ে যায় 
 
 তারপর থেকে আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায় না। সবার সন্দেহ হয়, ওরা মেয়েটিকে কোথাও পাচার করে দিয়েছে!  হাতের কাছে ছেলে দুটোকে পেয়ে বেঁধে ফেলেছে বস্তিবাসী। তদন্ত হলে হয়তো সবই পরিষ্কার হয়ে যাবে। যাক্, মেয়েটিকে যেন ঠিকঠাক খুঁজে পাওয়া যায়!
ভাবতে ভাবতে মথুরের চোখের সামনে খুকীর মুখটা ভেসে ওঠে।
ততক্ষণে মথুরের ব্যথাটা হাঁটু থেকে যেন উপরে উঠে আসছে। বুকের কাছটায় কেমন যেন চিন চিন
করে উঠল! 

.........
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.