তালগাছ
অনিন্দ্য পাল
অবনী ঠিক বুঝতে পারছে না, হঠাৎ এতগুলো টাকা নিয়ে সে করবেটা কী? একটা দু'টো টাকা নয়, পুরো আট হাজার টাকা। সারা মাস খেটে খুটে হাজার পাঁচেক যেখানে উপার্জন, সেখানে এতগুলো টাকা বাড়তি পেয়ে কেমন একটা গুলিয়ে যাচ্ছে সব।
"কি গো? চা টা খেলে না এখনো? ঠাণ্ডা জল হয়ে গেল তো! " নন্দিতার ডাকে চমকে উঠলো অবনী। "হ্যাঁ, হ্যাঁ, খাচ্ছি।" চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই অবনীর হঠাৎ মনে পড়লো, নন্দিতা একটা মিক্সি কিনে দিতে বলেছিল।
পুকুরপাড়ের তালগাছটার কথা কখনো সেভাবে ভাবেইনি অবনী। ওটা যে তারই সম্পত্তি সেটা সে নিজেও ভুলে গেছিল। আজ যখন সুখেনকাকা এসে ওটার কথা বললো, প্রথমে তো মনেই করতে পারেনি অবনী। কাকা দোতলা করেছে, একতলায় ঢালাই, দো'তলায় অ্যাসবেসটস। ওই অ্যাসবেসটস এর আড়া করবে, আট হাজার দেবে গাছটা। বাইরে নাকি দশ- বারো বলছে। নন্দিতা অবশ্য জানে না, এখনও।
আগামী কাল সকালে কাকা টাকাটা দেবে। বুকের ভিতরটা কেমন যেন গোলাপ ফুল হয়ে উঠলো অবনীর।
-- ও গাছ তুই বিককিরি করিসনে বাপ। ও গাছ খানা থাক।
-- কিন্তু কেন, তা বলবে তো? ওটা তো সেই পড়েই আছে। আমার কি বা কম্মে লাগছে?
-- শোন, ওটা আমার বাপের আমলের গাছ। আর ...
আর কি?
অবনী টাকাটা গুনতে গুনতে বললো,
-- বাপের আমলের বাড়িটা ভেঙে পড়ে যাচ্ছে, তার বেলা?
মনোজয় চুপ করে গেলেন। ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তার চোখ দুটোতে চকচক করছে টাকা।
মনোজয় লাঠিতে ভর দিয়ে পিছনে ঘুরতে যাবেন ঠিক তখনি এল সুখেন। তার চোখেমুখে বেশ বিরক্তির ছাপ।
-- না গো, মোনোদা। গাছটা নিতি পারবুনি।
-- কেন?
আঁতকে ওঠে অবনী। তার হাতে টাকার বান্ডিলটা শক্ত করে ধরা।
--আরে কাঠুরেরা কুড়ুল চাইলেছে কি চালায়নি, কোত্থেকে এক বুড়ো এসে বললো, তার নাম নাকি, সিধো ভটচাজ। ও গাছটা নাকি সে কিনেছে। অবনী তুই আমার টাকাটা ফিরত কর, আমি দেখি কি করা যায়।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সুখেন।
মনোজয় কখন সোজা হয়ে উঠেছেন, তা তিনি নিজেও বুঝতে পারেন নি। বাঁকা কোমরটা যেন পুরো সেরে উঠেছে !
-- কি বললি, এয়েছিল, সে এয়েছিল? খবরদার ও গাছে হাত দিসনে কেউ। সব্বনাশ করে দেবে সিধো।
অবনী থ হয়ে শুনছিল। জিজ্ঞাসা করল,
-- কে সিধো? ওকে কে বেচেছে গাছ? তুমি?
একটা রাগী গর্জন মনোজয়ের দিকে ছুঁড়ে দিল অবনী। তারপর বললো,
-- ওই জন্য আমাকে গাছটা বেচতে বারণ করছিলে এতক্ষণ! বাহ , নিজেই তাহলে...
অবনীর কথাটা শেষ হতে দিল না মনোজয়। কেমন একটা অদ্ভুত জড়ানো গলায় বললো,
-- আমি বেচিনি। আমার বাপ, গুপিচরণ সিধোর কাছে বিক্রি করেছিল। কিন্তু ওই গাছ কাটার সময় কুড়ুল ছিটকে এসে লাগে সিধোর মাথায়, ও খতম হয়ে যায় ওখানেই।
এটুকু বলে, মনোজয় পিছন ফিরে লাঠিটাতে ভর করে অবনীর ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য এগোলেন। হঠাৎ পিছন ফিরে অবনীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, " আমি ও গাছ তিন বার বেচার চেষ্টা করিছিলুম, পারি নি। পতিবারেই কেউ না কেউ কুড়ুলের ঘা খেয়েছে। ও গাছ সিধুর, ও কাওকে দেবে না।
অবনীর শরীর কেমন ঠাণ্ডা হয়ে যেতে লাগলো। টাকাগুলো কোনমতে সুখেনের হাতে গুঁজে দিয়ে সেও ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটে গেল পুকুরপাড়ের দিকে। কাঠুরে গুলোকে আগে সরাতে হবে ওখান থেকে। নন্দিতার ভাগ্যটাই খারাপ, মিক্সিটা আর কেনাই হল না!
==============================
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল
গ্রাম -- জাফরপুর
পোঃ-- চম্পাহাটিি
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ।