পূর্বকথন
ঝিনটি গ্রামের অগ্রজদের কাছে শোনা মন্দিরের ইতিবৃত্ত বলে মননকে। কিভাবে পুজো শুরু হয়,আগন্তুক সাধুবাবার কাহিনী এ সব শুনে মনন বলে তার গ্রামীন গল্প শুনতে খুব ভালো লাগে। প্রতিবাদ করে ওঠে ঝিনটি- এগুলো মোটেই গল্প নয়। এরপর ...
পর্ব ১৯
বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে যায় মনন ও ঝিনটির। বড়মামী স্নেহমিশ্রিত বকুনি দেয় ঝিনটিকে - আচ্ছা দস্যি মেয়ে তো তুই। সেই কখন বেড়িয়েছিস আর ছেলেটাকেও টো টো করে গ্রাম ঘোরাচ্ছিস। রোদের তাতে মুখটা তো লাল হয়ে গেছে। যা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আয়, খাবার বাড়বে। মন তুইও যা স্নানে।
খাওয়া দাওয়ার পর সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে। এমন সময়ে রাজকুমার আর কৌস্তভ এসে উপস্থিত। দুজনের কাঁধেই ব্যাগ, বোঝাই যাচ্ছে তারা কয়েকদিনের ছুটিতে এসেছে। বড়মামী বলেন - এসো বাবা। রাস্তায় কষ্ট হয় নি তো? এটি কে বাবা? একে তো চিনতে পারলাম না।
পরিচয় করায় রাজকুমার - এটি আমার বন্ধু কৌস্তভ। আমরা এক সপ্তাহের ছুটি পেলাম। কলকাতায় একটা কাজ আছে, সেটা সেরে তারপর ফিরব।
বড়মামী হাঁক দেন - ঝিনটি, কই রে মা, দেখ কে এসেছে।
ঝিনটি আগেই দোতলা থেকে দাদাদের দেখেছে। তার মন আনন্দে ভরে উঠেছে। হাতে দু গ্লাস শরবত নিয়ে বারান্দায় আসে সে। বলে - দাদারা আগে শরবত খেয়ে নাও, অনেক দূর থেকে এসেছ।
বড়মামী স্নেহের দৃষ্টিতে ঝিনটির দিকে তাকিয়ে বলে - মা আমার বড় হয়ে গেল। আমি না বলতেই কেমন শরবত করে এনেছে।
কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে ঝিনটি বড়মামীর কাছ থেকে বাড়ির চাবি নিয়ে দাদাদের বাড়ি নিয়ে আসে। রাজু বলে - বোন আমরা একটু স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে আসি।
ঝিনটি তাড়াতাড়ি রান্না চাপিয়ে দেয়। বড়মামী কিছু সবজি দিয়েছেন, বাকি সবই আছে বাড়িতে। খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় আধশোয়া হয়ে গল্প করছে দুই বন্ধু। হাতে মৌরির ডিপে নিয়ে এসে বসে ঝিনটি।
বোন কাল আমরা কলকাতায় যাবো কলেজ স্ট্রিট - মৌরি চিবোতে চিবোতে বলে রাজু।
ঝিনটি জানতে চায় - কেন দাদা? বই কিনবে?
কৌস্তভ ঝিনটিকে বলে - না বোন, আমরা যাবো প্রকাশকের কাছে। কাকু কি লিখে গেছেন তুমি ভাবতেও পারবে না। আমি সাহিত্যিক নই, কিন্তু সাহিত্যপ্রেমী। আমার সীমিত জ্ঞানে বলতে পারি, কাকুর বই প্রকাশিত হলে খুবই জনপ্রিয় হবে।
বাবার কথায় ঝিনটি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। রাজু বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে, নরম গলায় বলে - ভাগ্যে যা লেখা আছে তা তো হবেই বোন। কিন্তু বাবার এই অতুল প্রতিভা বাক্স বন্দী হয়ে থাকতে পারে না। তাই কাল আমরা কলকাতায় যাবো, তুই সকাল সকাল একটু ভাতে ভাত ফুটিয়ে দিস।
বড় ঘরে দুই দাদার বিছানা পেতে দেয় ঝিনটি। নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে কত কথা। একসময় তলিয়ে যায় গভীর ঘুমে।
ক্রমশঃ