বসন্ত উৎসবের সকলে নন্দিতা তাদের বাড়ির দোতলার ঝুল বারান্দায় চেয়ারে বসে রাস্তায় দোল খেলা দেখছে। ছেলেদের পরণে সাদা পাঞ্জাবী ও মেয়েদের বাসন্তী রং এর শাড়ি। দেখতে দেখতে সে যেন তার অতীত সপ্নের দেশে হারিয়ে যায়, মনে পরে পুরানো স্মৃতি _ "তার কলেজের বন্ধু অরিন হাতে দোলের রং নিয়ে আসছে তার নদীর জন্য।" অরিন অর্থাৎ অরিন্দম ও নদী হঠাৎ নন্দিতা দুজনের খুব ভালো বন্ধু ছিল, শুধু বন্ধু কেন? দুজনে একে অপরকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।
কিন্তু এক দমকা বাতাসে নদীর সব স্বপ্ন ভেঙে গেলো। একদিন সুন্দর সকালে অরিন নদীকে দেখা করতে বললো, নদী মন ভরা বিশ্বাস নিয়ে অরিনের সাথে দেখা করতে গেল। কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস, অরিন তার বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসে নদীর জন্য। সে মাথা নিচু করে পত্রখানি নদীর হাতে দিয়ে বলে _ "আমার সাথে মধুশ্রীর বিয়ে আগামী সোমবার তুই যাস।" নদী ফ্যালফ্যাল করে অরিনের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে যায় মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। দুচোখে জল গড়িয়ে পড়ে বুকে পাথর চাপা দিয়ে বলে_ "যাবো"। এসব অতীত কাহিনী ভাবতে ভাবতে কখন যে মা ডাকে _ নন্দু এই নন্দু চা খাবি আয়। সে এতটাই ভাব রাজ্যে মগ্ন যে শুনতে পায় না। মা আবার হাক দেয়_ এই নন্দু নন্দু রে। নন্দু অর্থাৎ নন্দিতা আপন মনে দোল খেলা দেখে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। মা তড়িঘড়ি করে উপরে এসে তার গায়ে হাত দিতেই সে চমকে ওঠে। মা প্রশ্ন করেন_ কিরে কি হয়েছে নন্দু? অনেক ডাকাডাকি করছি তো তাই বাধ্য হয়ে উপরে উঠে এলাম। সেমাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়_ কিছু না। মা আবার তাকে বলে আমি জানি কি ভাবছিস_ অরিন্দম এর কথা? নন্দিতা একটু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে, মাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে। সে কাদতে কাদতে বলতে থাকে _ এমন এক দলের দিনে আমি আর অরিন এবং কলেজের অনেক বন্ধু বান্ধব মিলে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তখন ও দুই হাতের লাল রং এনে আমার দু গালে মাখিয়ে দেয় এবং ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়, আমি সেদিন তার প্রস্তাব ফেরাতে পারিনি। কিন্তু আমার জীবনে এত বড় ঝড় উঠবে আমি কখনো ভাবতে পারিনি। এইসব বলতে বলতে এসে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে, তার মা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে মাথায় হাত বোলাতে শুরু করেন। ঠিক সেই সময় কে যেন দরজায় কড়া নাড়ে। নন্দিতা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে চমকে ওঠে, তার চোখের পলক পরে না, সে এক পানে চেয়ে থাকে _ এ যে তার ভালোবাসা, অরিন।