ব্যর্থ প্রেম
অঙ্কিতা পাল
শ্যামপুর গ্রামের গরীব সাধারন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক কমল সরকার। কমল বাবুর দুই মেয়ে কবিতা ও কাকুলি। কবিতা অত্যন্ত মেধাবী, সে স্কুলে শিক্ষা শেষ করে কলকাতায় বড়ো কলেজে ভর্তি হয়েছে। এভাবে বেশ কিছু বছর পার হয়ে যায়। একদিন কমলবাবু হঠাৎ তার বড়ো মেয়ে কবিতা কে বলেন _ মা, আমি নরেন বাবুর বড়ো ছেলে অরিন্দম এর সাথে তোমার বিয়ের সম্বন্ধ করেছি। তোমার কি মতামত বলো? কবিতা তার বাবার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে সম্মতি প্রকাশ করে। বেশ কিছুদিন পর অরিন্দম তাদের বাড়িতে এসে কবিতাকে পছন্দ করে বিবাহের দিন স্থির করে, অবশেষে বিবাহের দিন এলে কবিতাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সে একটা চিঠিতে_ "বাবা আমাকে ক্ষমা করো" লিখে পালিয়ে যায়।
বড়ো মেয়ে কবিতার এহেন আচরণে কমলবাবু প্রচন্ড দুঃখ পেলেন, তিনি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখার কোনো চেষ্টাই করলেন না। তিনি ওই আসরে ছোট মেয়ে কাকলির সাথে অরিন্দমের বিবাহ দিলেন। ঘটনার বেশ কিছুদিন কেটে গেল, সকালে চেয়ারে বসে কমল বাবু চা খাচ্ছে এমন সময় কবিতার মা করুণা দেবী বললেন _ জানো তো আমার অনেক দিন ধরেই বড়ো মেয়ের আচার-আচরণ ভালো লাগতো না, জিজ্ঞেস করলেই কথা এড়িয়ে যেত। করুণা দেবীর এইসব কথা শুনে কমলবাবু প্রচন্ড রেগে গিয়ে চেয়ার থেকে উঠে ধমক দিয়ে বললেন _ যে মেয়ে মারা গেছে তার কথা উচ্চারণ করো না। কমল বাবুর এই কথা শুনে করুণা দেবীর চোখে জল এসে গেল। কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস, বাবার এইকথা মেয়ের জীবনে কখন যে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ালো _ সময় যায়, দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় একদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতায় বড়ো বড়ো করে শিরোনাম অগ্নি দগ্ধ গৃহবধূ।
বাবু ভালো করে খবরের কাগজ টি পড়ে চমকে উঠলেন, বালিগঞ্জের আঠারো নম্বর লেনের বাড়িতে অগ্নি দগ্ধ গৃহবধূ কবিতা সেন। বয়স সাতাশ বছর। খবরটি পড়ে তিনি চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন_ ওগো শুনছো বড়ো মা আর নেই। কমলবাবু চিৎকার শুনে করুণা দেবী তড়িঘড়ি করে ছুটে এলেন। মেয়ে দুঃখে কমলবাবু পাথরের মত হয়ে মাথা ঠুকতে শুরু করেন। এর পর বেশ কিছুদিন কেটে গেল, কবিতার বান্ধবী জয়া তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে কমল বাবুর বাড়িতে এলো।জয়া সমস্ত কথা করুণা দেবী ও কমল বাবু কে খুলে বলতে আরম্ভ করলো, জয়ার চোখ ভরা জল তখনও টলটল করে। সে বলতে শুরু করল এইযে _ কলেজের প্রফেসর অরূপ সেনের সাথে কবিতার বিয়ে হয়, কিন্তু কিছুদিন পরেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা যায়। প্রফেসর সেন মোটেই ভালো না, তিনি একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেন। আমি কবিতাকে বারবার বারণ করা সত্ত্বেও ও স্যারের ফাঁদে পা দিলো। এইসব বলে জয়া আবার কাঁদতে শুরু করে, সে আর বলতে থাকে_ অরূপ স্যার কতো মেয়ের সর্বনাশ করে দিলো। তুমি একটা নিকৃষ্ট জীব যে আমার প্রিয় বান্ধবী কে খুন করেছে। আমি ওনার শাস্তি চাই।কিন্তু কমলবাবু এই ঘটনার পরেও হার মানলেন না, তিনি আইন এর সাহায্য নিয়ে প্রফেসর অরূপ সেনের শাস্তির ব্যবস্থা করলেন।