আচ্ছা বৌমা তোমার কান্ডটা কি শুনি ! রাত নটা বেজে গেল তোমার সিরিয়াল দেখার আশ মেটে না ! এদিকে একরত্তি ছেলেটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মশার কামড় খাচ্ছে !
কি যা তা বলছেন মা । কালকে ওর পরীক্ষা ।
পরীক্ষাতো কি ! ওইটুকু ছেলে । ঘুমে ঢলে ওর পড়া হচ্ছে না কি ! ভাবলে অবাক হই ।
সেতো আমিও হই মা । ঘরে বসে দু'দণ্ড টিভি দেখবো তার উপায় নেই ! এই শয়তান যা চোখে মুখে জল দিয়ে আয় । পড়তে বসে ঘুমানো হচ্ছে !
নমিতাদেবী আর কথা বাড়ালেন না ।
অন্ধকার ঘরে শুয়ে তিনি ভাবছেন ।
যে ভাবে পড়া পড়া করে শিশুদের শৈশব চুরি হচ্ছে তাতে মনের সর্বাঙ্গীন প্রকাশ সম্ভব নয় । ওরা মানুষ হয়ে উঠবে কি করে ? শিশুতে শিশুতে খেলা নেই,এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা নেই । আর আজকালকার মায়েরা ! নিজেরটা নিয়েই শেষ হচ্ছে । এইভাবে চললে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মা ছেলের সম্পর্কের মধ্যেও যে টান পড়বে ! এই যে চারিদিকে বৃদ্ধাশ্রমের রমরমা তাতো আর এমনি নয় । স্বার্থ ছাড়া কেউ এগোয় না । দিন দিন সামাজিক সম্পর্কগুলো উধাও ।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে তার চোখ লেগে গিয়েছিল । ঘুমের ঘোরে তিনি দেখছেন তিনি ছোট হয়ে গেছেন । বাড়িতে ডাকাত পড়েছে । তিনি ছোট থাকতে দেখেছিলেন,তার ঠাম্মি ডাকাতদের বলছেন,সব নিয়ে যাও বাবারা । কিন্তু দেখো কাউকে প্রাণে মেরো না ।
সেই চরম অবস্থার মধ্যেও কথায় যেন মধু ঝরছে !
ডাকাতগুলো কথা রেখেছিল ।
হঠাৎ মনে হল তিনি বৌমার গলা পেলেন !
হ্যা ওই তো বৌমা বলছে ! মা দেখুন ওরা আমাদের সর্বস্ব নিয়ে যাচ্ছে । হ্যা ঐতো মুখোশ এটে চারটে ডাকাত দাঁড়িয়ে এদিক থেকে ওদিকে টানাটানি করছে ।
তিনি বৌমাকে বললেন নিতে দাও । ওরা আর বেশি কি নেবে । জানে না মারলেই হল । শুধু ভাত কাপড়টা বাঁচলেই হল ।
এবার ঘুরে তিনি ডাকাতদের বললেন,শোন বাবারা যা নিচ্ছ নাও । একটুও বাঁধা দেব না । পারতো আমাদের অহংকার নাও,ঈর্ষা নাও,স্বার্থপরতা নাও । তবেই বুঝবো তোমরা সত্যিকারের ডাকাত ।
ডাকাতগুলো অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাতে তাকাতে মাল গুছিয়ে চম্পট দিল ।