Click the image to explore all Offers

গল্প।। ভয় ।। অনিন্দ্য পাল




পারুল!  এরকম করলে কিন্তু কাজ থাকবে না। এটা কি ঠিক, তুই বল? এই তো আমাদের ছোটো ছোটো ঘর দোর। তুই কাজ করবি কলতলায়, কিন্তু তাই বলে! না না এ তুই কাল থেকে আর করিস না। মনে থাকে যেন। আমি শুধু একা নই, রিপনের মাও একই
কথা বলছিল। রিপনের বাবা তো খুব বদরাগী। দেখ কি করে বসে! 
মাথাটা গরম হয়ে গেল পারুলের। বাসন গুলো কোন মতে তাকে উপুড় করে দিয়ে, বৌদি আসছি বলে বেরিয়ে এল। হারামজাদা মিনসে এঁটুলির মত লেগেই আছে সঙ্গে। নিজের তো খেতে দেবার মুরোদ নি , পরের বাড়ি কাজ করে খাবো, সেটাও করতি দেবিনি! বলতে বলতে বিরুর গলা ধাক্কা দিতে দিতে বাড়ি নিয়ে  চললো পারুল। 
চোখদুটো যে কি হলো বৌদি? সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা বললো কি নাড়ি না নার্ব সব শুইকে গেছে দুচোখেরই আর কিছু করা যাবে না। আর অন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে সেই যে আমার শাড়িটা চেপে ধরলো, যে খানেই যাই চললো সঙ্গে সঙ্গে, সেই ভোর বেলা উঠবো তখন থেকেই এঁটুলির মত লেগে যাবে। পারা যায় বল? শুধু বলবে ভয়! ওরে নাকি কে মেরে ফেলে দেবে। কে নাকি সব সময় ওর পিছনে দাঁইড়ে থাকে, সুযোগ পেলিই লাথি মেরে ফেলে দেবে! আচ্ছা বল এ পাগলামি না! মেয়ের কাছে রেখে আসবো, সেও তো ওপাড়ার ঝুপের সঙ্গে পাইলে গেল। তা সে যাগগে যাক। সুখি থাক। 
ঘোষ গিন্নি বললেন হেসে উঠলেন! "এদিক নেই ওদিক আছে , তা আজ কি করলি, কোথায় রেখে এলি? দেখছি নে তো !" 
"আজ ঘরে তালাচাপি মেরে এইচি। পায়খানা কইরে বললুম তুমি চা টা খাও, আমি শাড়িটা পরি, বলে চুপি চুপি ঘর থেকে বেইরে দিইচি চাপি মেরে। থাক ঘর বোজাই হয়ে।"
একটু দেরিই হয়ে গেল আজ পারুলের। রিপনের মা একেতো বাসন ফেলে অনেক, তার উপর আজ চুনো মাছ কাটতে দিয়েছে, তার জন্য কুড়ি টাকা উপরি দিয়েছে। তারপর আবার শিশু ধরলো রাস্তায়। বিরুকে ছেড়ে চলে আয়, রানী করে রাখবো। কি জ্বালা! এই এক মিনসে জ্বালিয়ে জীবনটা ছাইগাদা বাইনে দিল, আবার নাকি ও পথে যাবে পারুল! অত ধান এক সের নয়! মনে মনে এই সব চটকাতে চটকাতে বাড়ি এল, বলা ভালো ঘরের সামনে এল। আবাস যোজনার যেটুকু টাকা পেয়েছিল আর ঘুঁটে, কচু, ওল বেচে, বাড়ি বাড়ি গতরে খেটে যেটুকু গনেশের ফান্ডে রেখেছিল তাই দিয়ে একটা এককামরার ইটের দেওয়াল, অ্যাসবেসটস এর চাল। দরজাটায় আর কাঠ জোটেনি, বাঁশের চৌহদ্দিতে টিন গুঁজে লজ্জানিবারণ! খাস জায়গাটুকু পেতে শুতে হয়েছে সদস্যের সঙ্গে। জানোয়ারটা এখন ক্যান্সারে ভুগছে। 
একটু দূরে বেতাইদের বাড়ি থেকে বেতাই এর মা বেরিয়ে বললো, "পারুল এলি? ওহ, কি চিৎকার, চেঁচামেচি, আর শুধু তোকে ডাকছে! কে নাকি তোকে নিয়ে চলে গেছে! গালাগাল করে যখন থামে, তারপরেই কান্না, হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলছে, 'পারুল রে কোথায় গেলি? এরা আমারে মেরে ফেলবে রে!' তুই বরঞ্চ ওরে পাগলা গারদে ভর্তি করে দে, নয়তো তুই পাগল হয়ে যাবি কোনদিন!"
বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো পারুলের। চিররুগী বিরুর সঙ্গে পালিয়ে চলে এসেছিল নদীর ওপার থেকে। কখনোই একা সংসার চালাতে পারে নি বিরু, সে হাল ধরার পর খেয়ে পরে বেঁচেছে। আর এখনতো ...এই সব ভাবতে ভাবতে চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল বিরু। কয়েক দিন আগে জানালার একটা রড খুলে পড়ে গেছিল, সেটা রাখা ছিল এক কোণে। সেই রডটা হাতে নিয়ে বিরু একের পর এক আঘাত করতে লাগলো, পারুল কিছু বোঝার আগেই, কোনো শব্দ করার আগেই মাটিতে পড়ে স্থির হয়ে গেল! 
বিরু ততক্ষণে বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করছে, " পারু, শয়তানটারে দিইচি ঘা কতক, আর তোরে জ্বালাবিনি, আর লুইকে থাকিস নি, এবার চলে আয়। খুব যে খিদে পায়! পারু! পারু? " 

ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল 
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল 
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ। 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.