তপনবাবু চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর রোজ সকালে হাঁটতে যান। তারপর গিন্নি গীতা দেবীর রান্নার কাজে সাহায্য করেন। দুপুরের খাবার পর গিন্নির সাথে বসে টিভি দেখা আর বিকেল হলে তাস খেলা, এভাবে কর্তা গিন্নি দুজনেই বেশ সুখে ও আনন্দে ছিল। তপনবাবুর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তিন ছেলে সরকারি চাকরি করে তপনবাবু চাকরি থাকতে থাকতে তিন ছেলে ও মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। তপনবাবু খুব ভালো মানুষ ছিল। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু অহংকার ,লোভ ও ঈর্ষা থাকে কিন্তু তপনবাবুর মধ্যে এই তিনটি জিনিসের একটাও ছিল না । এত উদার মনের মানুষ খুব কম দেখা যায়। কিন্তু উনার স্ত্রী গীতা দেবি ছিল পুরো উল্টো । গীতা দেবীর মনে ছিল খুব অহংকার ও ঈর্ষা । তিন ছেলে সরকারি চাকরি করে বলে ছেলেদের নিয়ে বড় অহংকার গীতা দেবি্র
আর এক মেয়েকে নিয়ে তো আদিখ্যেতার শেষ নেই । ছেলের বউয়ের সাথে সবসময় ঈশ্বা করেন । ছেলেরা বউদের ভালবাসলে ও শ্বশুর বাড়ি গেলে গীতা দেবীর সহ্য হয় না । গীতাদেবী চাইতেন উনার কথায় ছেলে বউরা উঠবে বসবে । ফলে বউদের সাথে মনোমালিন্য হত গীতা দেবির । এইভাবে চলতে চলতে তপন বাবুর হঠাৎ করে কঠিন রোগ ধরা পড়ায় দু'মাসের মধ্যে মারা গেলেন । গীতা দেবি খুব ভেঙে পড়লেন। এক বছর বাদে গীতা দেবি নিজেকে সামলে নিলেন। ছেলেরা ততদিনে আলাদা আলাদা বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনে নিয়ে যে যার মত ভালো আছে। গীতা দেবি ঘুরে ঘুরে তিন ছেলে ও মেয়ের কাছে কয়েক মাস করে থাকেন আবার নিজের স্বামীর বাড়িতে থাকেন । স্বামীর বাড়ি মানে নিজের বাড়িতে দু-এক মাস থাকার পর আবার তিন ছেলের বাড়িতে নিজেই ঘুরে ঘুরে থাকবেন আর বলবেন " ভাগের মা গঙ্গা পায় না।" ছেলে বউরা খুব যত্ন করতো গীতা দেবিকে। এখন বর্তমানে ছেলেরা চাকরি থেকে অবসর হয়েছে আর বউদেরও বয়স হয়েছে। তাই গীতা দেবি কে নিজের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে এবং উনার দেখভাল করার জন্য লোক রেখে দেয়া হবে যাতে ওনার কোন অসুবিধা না হয় কিন্তু গীতা দেবীর এই কথা ভালো লাগেনি। উনার ইচ্ছে ছেলেদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে থাকবেন আর "ভাগের মা গঙ্গা পায় না" বলে ছেলেদের কান ভারি করবেন যাতে বউদের সাথে ছেলেরা অশান্তি করে।
আসলে গীতা দেবি হলেন স্বার্থপর ।নিজের ভাল ছাড়া কারোর ভাল বোঝেন না। একটা ঘটনা মনে পরছে - একবার ছোট ছেলের বাড়িতে আসার পর এক মাসও যায়নি অমনি মেজ ছেলের বাড়ি যাওয়ার জন্য ছেলেকে ফোন করতে থাকেন । মেজ বউ তখন গীতা দেবি কে বলেছিল এবাড়ি-ওবাড়ি না করে এক বাড়িতে থাকতে । মেজ বউয়ের কথা শুনে গীতা দেবি চিল চিত্কার করে মেজ বউ কে শুনিয়ে দিল 'আমার তিন তিনটে ছেলে আমি কেন এক ছেলের বাড়ি থাকবো' । গীতা দেবি তিন ছেলে নিয়ে এতটাই অহংকার করেন যেন এই পৃথিবীতে কারো ছেলেই নেই উনারি শুধু তিনটে ছেলে আছে । মেজ ছেলেটা মার কথা বেশি গুরুত্ব দেয় বলে মেজবউ ও কার বাচ্চার নামে বানিয়ে বানিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলে মেজো ছেলের কাছে নালিশ করে আর মেজ ছেলে বউ বাচ্চাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে। এইভাবে ছেলের সুখের ঘরটাতে অশান্তির সৃষ্টি করে গীতা দেবি। এরকম ভাবে সব ছেলের কাছেই নালিশ করার একটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে। হলে এখন কোন বউই গীতা দেবি কে সহ্য করতে পারে না । গীতা দেবি নিজেকে খুব চালাক মনে করেন কিন্তু আসলে উনি একজন বুদ্ধিহীন বোকা মানুষ । সত্যিই উনি যদি চালাক হতেন তাহলে বউদের সাথে মানিয়ে চলতেন । আমার মতে এই রকম অসংখ্য গীতা দেবি ঘরে ঘরে আছে যাদের জন্য অনেক মেয়েদের সুখের ঘর ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। এইসব গীতাদেবীরা জানেনা যে অহংকার জেদ ও স্বার্থপরতা নিয়ে ছেলে বউ কেন কারোর সাথেই ভালো থাকা যায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা একজন মা তার স্নেহ মায়া-মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে সংসারের সবাইকে একসাথে বেঁধে রাখবেন। যার মধ্যে কোন স্বার্থপরতা থাকবে না। তবে তো ছেলে মেয়েরা বউরা কাজের সূত্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও ভালোবাসা ও মায়ার টানে মার সব সময় খেয়াল রাখবে আর ভালো রাখার চেষ্টা করবে। আর আমার মনে হয় বুড়ো বয়সে মা ও বাবা দের বিভিন্ন জায়গায় না ঘুরে ঘুরে একজায়গায় থেকে পুজোপাঠ, ভালো গল্পের বই পড়া ,টিভিতে ভালো সিনেমা দেখা এইভাবে আনন্দে সময় কাটানো উচিৎ ।এতে মন ভালো থাকবে আর শরীর ও সুস্থ থাকবে। আসল কথা জীবনে কখনো কোন কিছু নিয়ে অহংকার করতে নেই।যে যত অহংকারই হবে ততবেশি জীবনে ঠকে যাবে ।