Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প।। কোল্যাটারাল ড্যামেজ ।। শংকর লাল সরকার






          বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ঘুনঘুন করছিল মোহনএবারে বেশ জোরেই বলল মা ক্ষিদে পেয়েছে

          ক্ষিদে পেলে ক্ষিদের কথা মনে করতে নেই

          তবে কী করতে হয়- ভারী করুণ শোনাল মোহনের গলা

          শিখার বুকের ভিতরটা হুহু করে উঠেওরও পেটভর্তি খিদেমোহনের করুণ বিষন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে বলল ক্ষিদে পেলে কেবল, অন্য কথা মনে করতে হয়

বিরাট চওড়া হাইওয়ের দুপাশের মাঠে মেহেদী রঙের রোদ পড়েছেশস্যহীন খাঁখাঁ বিষন্ন মাঠঘাস পর্যন্ত রোদে পুড়ে হলদেটে হয়ে গেছে

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিখা ময়লা আঁচলে মুখটা মুছে নেয়বেজায় রোদ উঠেছেমোহনকে একবার কোলে নিয়ে ওর কপাল, গলার ঘাম যত্ন করে মুছিয়ে দিল। 

যাদের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করেছিল তারা এতক্ষণে অনেকদূর এগিয়ে গেছেআর যাবে নাই বা কেন? কমবয়সী ছেলেছোকরাদের সঙ্গে কী আর পাল্লা দিয়ে হাঁটা যায়।  একসঙ্গে অনেকজন মিলে ওরা বেরিয়ে পড়েছিলদুচারজন দেশোয়ালী লোককেও সঙ্গী হিসাবে পেয়ে গিয়েছিলওরা তখন দিল্লি বাসস্ট্যাণ্ডেআচমকা প্রচণ্ড চিৎকার করতে করতে একদল লোক ওদের দিকে ছুটে এলভিড় করে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলোকে সরিয়ে দেবার জন্য পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করেছেহইহই করে সবাই ছুটোছুটি করতে শুরু করে দিলকে কোথায় ছিটকে পড়লমুখচেনা একটা ছেলে শিখা আর মোহনকে ভিড়ের মধ্যে থেকে বার করে আনলকোন গাড়ি চলছে নানা ট্রেন, না বাসছেলেটা বলছিল তিনদিন আগে থাকতেই কারফিউ শুরু হয়েছেকরোনা নামে কী একটা অদ্ভুত রোগ এসেছেবিদেশে অনেকে সেই রোগে মারা যাচ্ছেআমাদের দেশে রোগটা যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তাই সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছেছেলেটা দিল্লিতে অ্যাপক্যাবের ড্রাইভার হিসাবে কাজ করেএগলি সেগলি করে, ওদের এই চওড়া রাস্তায় নিয়ে এসেছেওর ভরসাতেই শিখা মোহনকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে। 

কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না শিখারক্ষিদেটা অনেকক্ষণ ধরেই পেটের ভিতরে ছিলমাঝে মাঝে যখন সাপের মতো মুচড়ে উঠে তখনই হয় জ্বালাপৃথিবীর আলো হাওয়া মাটি সবকিছু বিস্বাদ হয়ে যায়গত দেড়দিন কিছুই প্রায় খাওয়া হয়নিঅনেক কষ্টে একটা পাঁচটাকার বিস্কুটের প্যাকেট জোগাড় করেছিলমা ছেলেতে সেটা খেয়েই খানিকটা জল খেয়েছিলতাতে পেটের একটা কোনও ভরেনি আঁচলের খুটে কিছু টাকা আছে বটে কিন্তু বিরাট চওড়া রাস্তায় কোন দোকান নেই টাকা তো আর খাওয়া যায় না খালি পেটেই মা ছেলে হাঁটতে থাকে  

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চললতার উপর এই প্রচণ্ড রোদে হাঁটাশরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠে শিখারতবুও কায়দা করে নিজেকে সামলায়মোহনের দিকে চেয়ে দেখে মরা মাছের মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেছেহাঁটার ভঙ্গী অনেকটা মার খাওয়া কুকুরের মতোবারবার দাড়িয়ে পড়ছে, হাঁ করে দম নিচ্ছে আবার টলমল করে হাঁটছে

দুপাশে উঁচু নীচু রুক্ষ জমি, মাঝখান দিয়ে সোজা কালো রাস্তাটা চলে গেছেরাস্তার শেষ দেখা যায় নাধূসর ঘোলাটে আকাশঅনেকটা দূরে জল জমে আছে, ওখানটা চিকচিক করছেবৃষ্টি হয়েছে নাকি?

কেমন একটা ঘোরের মধ্যে শিখা হাঁটতে থাকেগ্রামের কথা মনে পড়েমোহনের বয়স তখন সবে একবছরকোনরকমে হাঁটতে শিখেছেভালো করে কথা বলতে শেখেনিসেই মোহনই একদিন দুপুরবেলা কাঁদতে কাঁদতে এসে আছাড় খেয়ে পড়ল উঠানেমা-রে বাবা তিনতলার ছাদ থেকে পড়ে গেছেরাস্তায় পড়ে ছটফট করছে

এককাপড়ে ছুটে গিয়েছিল শিখাকাজে বেরুবার আগে চিকেন এনেছিল মোহনবলেছিল পেঁয়াজ রসুন দিয়ে ভালো করে রাধবিআজ কব্জি ডুবিয়ে খাবোকতদিন যে মানসো খাওয়া হয়নিসেই চিকেন আর খাওয়া হয়নি মোহনেররঙের কাজ করতে গিয়ে তিনতলা সমান উচু মাচা থেকে সটান পড়েছিল নীচের রাস্তায়

শিখা যতক্ষণ পৌছায়নি ততক্ষণ যন্ত্রণাকাতর শরীরটাতে কোনমতে প্রাণটা আটকে ছিলশিখার কোলে মাথা রেখে শেষনিশ্বাস ফেলেছিলজয়দেবের কথা মনে হতেই শিখার দুচোখ ছলছল করে উঠেমানুষটার তো মরবার বয়স হয়নি

দুর্দিনে আত্মীয়স্বজনরা কেউ তার খোজ নেয়নিজয়দেব মারা যাবার পর থেকে কেউ ওর ঘর মাড়ায় নাসংসারে তখন চরম অভাবআধপেটা খেয়ে কোনমতে দিন কাটছেমোহনটা এতটুকু ছেলে হবে কী হবে জোয়ান মরদের মতো খেতে চায়ওর তো ক্ষিদের সময়, কিন্তু শিখার সামর্থ্য কোথায় ভালো মন্দ খাওয়াবারকারুর কাছে হাত পাততে শিখার লজ্জা লাগতশক্ত সমর্থ গতর নিয়ে কারুর কাছে হাত পাতা যায়? কোন কুলকিনারা পেত না

মোহনটা যে শুধু দেখতে  অবিকল ওর বাবার মতো তাই নয়, ওর চালচলন হাবভাব সব কিছু জয়দেবের মতরোগা প্যাংলা ছেলে, গায়ের রঙ শুকনো প্যাকাটির মতবড়ো বড়ো ডাগর চোখদুটোতে কেবল ক্ষিদেবড়ো ক্ষিদের বাই ছেলেটার

শিখার দূর সম্পর্কের ভাই নিমাইএকই গ্রামে বাস, বেশ চৌখস ছেলেজয়দেব মারা যাবার কয়েকমাস পর একদিন ওদের ঘরে এসে শিখাকে অনেক করে বুঝিয়েছিলবলেছিল জয়দেবদা আর ফিরবে নাতার জন্য কেঁদেকেঁদে শরীর ধসিয়ে কোন লাভ নেইমোহনের মুখ চেয়েই শিখাকে বাঁচতে হবেআর সেজন্য ভাত কাপড়ের জোগাড় ওকেই করতে হবেএকথা সেকথার পর নিমাই বলেছিল দিল্লিতে ওর জানাশোনা আছেলোকের বাড়িতে আয়ার কাজ করতে শিখা রাজী থাকলে সে ব্যবস্থা করতে পারে

নিমাইয়ের সঙ্গেই শিখার দিল্লিতে আসাবছর দুয়েক দিল্লিতে থেকে শিখা খানাখন্দ, অন্ধকার কিছু কম চেনেনিগ্রামে অনেকে ওর গতর দেখে ছুকছুক করতমা বলত অনেক পুরুষমানুষ আছে মেয়েমানুষ দেখলেই তাদের নোলা লকলক করে উঠেতখন তারা হয়ে যায় ইতর জন্তুর মতো 

দিল্লি এসে শিখা প্রথমে একটা অবাঙালি পরিবারে কাজ নিয়েছিলঅসুস্থ দারুণ সুন্দরী এক মহিলার সর্বক্ষণের দেখাশুনার কাজসুপুরুষ স্বামী মস্ত চাকুরী করেতৃতীয় রাত্রেই সেই লোকটি তাকে শোবার ঘরে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলচিৎকার, চেঁচামেচি- সে বাড়ির কাজের সেখানেই ইতিচোখের সামনে তরতাজা যুবতী মেয়েকে পেয়ে লঘু প্রেমের ইচ্ছা অনেক পুরুষেরই জেগে উঠেবয়স্ক কর্তা কমবয়সী পরিচারিকার সঙ্গে হাল্কা প্রেম প্রেম খেলা খেলতে চায়নিমাইকে বললে সে বলে কি করবে বলো শিখাদি, আমাদের মতো গরিব মানুষের অত বাছবিচার থাকলে চলে না!

বৌদিমণিদের বাড়ির কাজটা ছিল সে তুলনায় অনেক ভালোস্বামী স্ত্রী আর বয়স্কা শ্বাশুড়িকোমরের ব্যথার জন্য শ্বাশুড়ি বিছানা থেকে উঠতে পারেননা, তার সর্বক্ষণের আয়া হিসাবে শিখা বহাল হয়েছিলস্বচ্ছল হাসিখুশি পরিবারটিকে বেশ ভালো লেগে গিয়েছিল শিখারচান করা আর খাবার সময়ে খালি বুড়িকে সাহায্য করতে হতঅন্য সময়ে বুড়ির আর কোন আবদার বা অভিযোগ ছিল নাঅন্যান্য জায়গায় শিখা দেখেছে বাড়তি কাজ করিয়ে নেবার জন্য নানা রকমের ফন্দি ফিকিরের অন্ত নেইএখানে বরং মোহনটা বুড়ির কাছেই বেশিরভাগ সময়ে ঘুরঘুর করতবুড়িমা ওকে নানা রকমের গল্প বলতেন

রান্নাঘর থেকে শিখা হয়তো চেঁচিয়ে বলল মোহন তুই মাসিমাকে বিরক্ত করছিস না তোবুড়িমাই উত্তর দিতেন নাগো মেয়ে তোমার ছেলে খুব লক্ষ্মী, কেমন চুপটি করে বসে গল্প শুনছেবৌদিমণি বোধহয় কোন উড়োজাহাজ কোম্পানীতে চাকরী করেনকোনদিন সকালে কখনওবা বিকালের দিকে সেজেগুজে অফিস যানমাঝেমাঝে একএকদিন রাত্রে ফিরতেনও নাদাদাবাবুও মস্ত চাকরী করতেনপ্রতিদিন নিজের গাড়িতে অফিসে যাতায়াতযে সময়টা বাড়ি থাকতেন ল্যাপটপে সর্বক্ষণ কাজ করতেন

হঠাৎ করে কোথা থেকে যে কী হয়ে গেলদিন চারেক আগে এক সকালে আচমকা নিমাই এসে হাজির, বলল শিখাদি করোনা মহামারি শুরু হয়েছে, দুএক দিনের মধ্যে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে আমরা দেশে চলে যাচ্ছি, তোমরা যাবেকীজিজ্ঞাসু চোখে শিখা বৌদিমণির দিকে তাকিয়েছিলতখন বৌদিমণি বললেন অত চিন্তার কিছু নেই, দুচারদিনে সমস্যাটা মিটে নিশ্চয়ই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবেশিখা চলে গেলে সারাদিন মাকে কে দেখবে? নিমাইকে ফিরিয়ে দিয়েছিল শিখাএখন বুঝতে পারে সেটা কী ভীষণ ভুল হয়েছিল

পরদিনই দুপুরবেলা বৌদিমণি বাড়ি চলে এলকেমন যেন হতাশ বিধ্বস্ত চেহারাবুড়িমা জিজ্ঞাসা করাতে রুক্ষভাবে বলল সমস্ত কিছু লকডাউন হয়ে যাবে অফিস থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেসন্ধ্যাবেলায় দাদাবাবু বাড়ি এল একই রকম ধ্বস্ত চেহারা নিয়েকাল থেকেই নাকি লকডাউন, সবকিছু বন্ধকতদিন এই লকডাউন চলবে কেউ বলতে পারেনা

মাত্র একদিনের মধ্যে আনন্দোচ্ছল ফ্ল্যাটটাকে ছেয়ে ফেলল একটা তমসাঘন বিষন্নতাদাদাবাবু আর বৌদিমণির দিকে তাকালে মনে হয়, ওদের দুজনের সমস্ত সত্ত্বা দুমড়ে মুচড়ে যেন কান্না ঠিকরে আসছেতৃতীয় দিন বৌদিমণি ওকে ঘরে ডাকলেনক্লান্ত হতাশ বিধ্বস্ত ওনার মুখধীরে ধীরে বললেন শিখা আমার আর চাকরী নেই তোমার দাদাবাবুর চাকরী থাকবে কিনা সন্দেহকরোনার  জন্য যেরকম লকডাউন হয়েছে কবে যে সবকিছু স্বাভাবিক হবে তার ঠিক নেইআচমকা এই আঘাতের জন্য তৈরী ছিলাম নাএই অবস্থায় ফ্ল্যাট আর গাড়ির ইএমআই কি করে দেব তার ঠিক নেইদাদাবাবু বলছিল যেহেতু আমরা এখন বাড়িতেই থাকব তাই মাকে দেখভালের কাজটা নিজেরাই সামলে নেবতোমাকে আমরা দুমাসের মাইনা অগ্রিম দিচ্ছিকষ্ট হলেও বাড়ি ফিরে যাও, সবকিছু স্বাভাবিক হলে তোমাকে খবর দেব

রাগ, দুঃখ, হতাশা সবকিছু মিলেমিশে একটা প্রচণ্ড চিৎকার বেরিয়ে আসতে চায় শিখার গলা চিরেকেবলই মনে হয় কেন এমন হল বিধাতা বারেবারে কেবল ওর সঙ্গেই এমন নিষ্ঠুর আচরণ করেন কেন? দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকা দাদাবাবুর দিকে চোখ পড়ে, ক্লান্ত বিষন্ন মুখ

মোহনের হাত ধরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে শিখা এই শহরে ওর মাথা গোঁজার কোন ঠাই নেই রাস্তায় বেরিয়ে হতবাক হয়ে যায় শিখা, ওরই মত হাজার হাজার সবহারানো মানুষ নিজের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে হেঁটে চলেছে কোথায় চলেছে সবাই শিখা যে কিছুই চেনে না ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়েছিল কাল সন্ধ্যায়    

অন্ধকার হাইওয়ের উপরে ক্লান্ত শরীরটাকে কোন রকমে টেনে নিয়ে যেতে থাকে ওরাউল্টোদিক থেকে আসা গাড়ির আলোগুলো চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়কেমন দিশাহারা লাগেমোচড় মারা ক্ষিদেটা এক আশ্চর্য বিষন্নতায় শ্লথ করে দেয় শিখার হাঁটাদূর থেকে দ্রুতবেগে ছুটে আসা ট্রাকগুলোর আলো যেন হঠাৎ খুলে যাওয়া বিদ্যুৎচুল্লির গনগনে আগুনের মত

শিখার হাত ছাড়িয়ে মোহন কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলআচমকা একটা ট্রাক হুড়মুড়িয়ে ছুটে এলস্টিয়ারিংটা বামদিকে সামান্য একটু কাটালে হয়তো ঘটনাটা এড়ানো যেতএরকমও নয় যে ওদিকে কোন গচ্চা ছিল বা কোন গাড়ি বা সাইকেলস্টিয়ারিংটার উপরে যদি একটা ছোট্ট মোচড় পড়ত তাহলে গাড়ির সামনের বাম্পার থেকে মোহনের দূরত্ব অন্তত ফুট খানেক বেড়ে যেতশিক্ষানবিশ ড্রাইভার স্টিয়ারিংতে সামান্য একটু মোচড় দিতে পারলেই দূর্ঘটনাটা এড়ানো যেত

পরদিন নিউজ চ্যানেলগুলি প্রচার করতে লাগল, পায়ে হেটে গ্রামে ফেরবার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকরা রাতের অন্ধকারে দিল্লি কানপুর হাইওয়ের উপর দিয়ে হাঁটছিলনিয়ন্ত্রণ হারানো একটি ট্রাকের ধাক্কায় চার বছরের একটি শিশু মারা গেছেদুর্ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন তাদের নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছেএকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনকব্রেকিং নিউজের সঙ্গেই অ্যাঙ্কর যোগ করেন কী বলবেন একে করোনার কোল্যাটারাল ড্যামেজ? দেখুন রাত দশটায় বিশেষ আলোচনা, উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী, অর্থনীতিবিদ এবং ডাক্তারবাবুরা

***

শংকর লাল সরকার

8637852643 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.