অরুণাংশু,
রাত্তির বড়ো চুপ, এই বয়সে কি যে ব্যারাম হলো, অকারণ আশংকায় পালস রেট দুমদাম বেখাপ্পা বেড়ে যায়, হঠাৎ হঠাৎ প্যালপিটিশান হয় খুব।
ডাক্তারকে জানালাম,লিখেছেন উনি কি যেন একটা এস ও এস ওষুধের এর নাম।। ওই দেখ , নামটাই ভুলে গেলাম। কিনে রেখেছি। ষ্ট্র্যাপটা দেখে বলব আরেকদিন।
এ চিঠি লিখছি যখন তোকে তখন রাত্রি মধ্যবয়স। ঘুম আসতে আজকাল প্রায় মাঝরাত হয়ে যায়।। ঘুম না এলে এপাশ ওপাশ ছটফট। জানিস এখন আমার নাক ডাকে জোরে খুব। হাসছিস তুই, হাস, হাস যত খুশি। তোর কাছে তো লুকোচুরি দায় নেই।
তুই ওষুধ বিষুধ খাচ্ছিস তো, নিয়মিত? আর ওয়াকিং?
বারবার একই প্রশ্ন করে ফেলি,ভাবছিস আমি কি ভীষণ বোরিং। রাগ করিস না প্লিজ।৷৷ স্মোকিংটা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিস বল্লি, তাই অনেক অনেক থ্যাংকস।।
এগুলো ছাড়া আর কি বলব বল, বিরক্ত হলে আমিও যে অপারগ, আর নিতান্ত অসম্বল।।
তুই বলেছিস ডানপাশ ফিরে শুতে, হার্টে যাতে ঘুমের ভেতর রক্ত সঠিক চলে। বিশ্বাস কর, অনিয়ম আর করি না খাওয়া দাওয়ায়, এবার থেকে নিজের যত্ন নেবো। সাধ করে কি তোর অবাধ্য হয়ে আবার বকুনি খাবো?
যদিদং হৃদয়ং তব,
তদস্তু হৃদয়ং মম,
যদিদং হৃদয়ং মম,
তদস্তু হৃদয়ং তব।।
আজকাল বুঝি এটা নেহাতই মন্ত্র নয়। একটা হৃদয় কেজো ও সচল থাকলে আর একটা হৃদয়েও আর ক'টাদিন বাঁচতে ইচ্ছে হয়।।
পাঁচ সাত বেড এ বালিশের পাশে আরেকটা বালিশ রাখি। আহ্লাদ করে ওর নাম রেখেছি "আব্বুলিশ"।।
কে জানে যদি ঘুমের স্বপ্ন বেয়ে ঘুরতে ফিরতে কোনোদিন তুই আমার কাছে আসিস।।
এ বয়স জানে না চকোলেট চুমু,গোলাপ, প্রমিস প্রেম। শুধু দুজনের শুভকামনায় ঢেউ গাঙ পারাপার। ।
অরুণাংশু পারলে সময় নিয়ে আমার বাড়িতে ক'দিন কাটিয়ে যাস না রে একবার।।
গান, কবিতা, লুচি ও পায়েস হবে। আয়েশ করে এলাচ দেওয়া চা। ডাইনিং টেবিলে তবলা বাজাবি তুই, বাতের ব্যথাকে কাঁচকলা দেখিয়ে তখন নাচের তালে আমিও মাতাবো পা।
এখানে এখন মেনোপজ শীতকাল, বুকের ভেতর বসে আছে কাঁটাতার ঘেঁষে বিদেশি সেনানী স্টেন্ট।
তবুও রক্ত তোকে দেখলেই তেমনি ধক করে চলকায়, হার্টটা মাইরি এখনো তেমনি বুদ্ধুই রয়ে গেছে, বিশ্বাস কর কিশোর বেলার মতন ঠিক তেমনই ইনোসেন্ট।।
ইতি
তোর ভুচুরানী।।
পুনশ্চঃ- স্মার্টফোন আর অন্তর্জালের যুগে এসব চিঠিরা বড্ডই সেকেলে আর লাজুক। তাই আর পোস্ট করে কাজ নেই। ডাইরির পাতায় অপ্রেরিত হয়েই চুপটি করে থাকুক।।
এ চিঠি উড়তে উড়তে যাদের কাছে যাবে,
তাদের সবার হৃদকন্দরে অরুণাংশুদের বসবাস
জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের ডাইরিতে
কোনো না কোনো ফেব্রুয়ারির ডাকবিহীন এই চিঠি
না পাঠিয়ে তারা ভাঁজ করে রাখে বারোমাস।
এ চিঠি লিখতে লিখতে ঋতুমতী হয় তারা,
এ চিঠি লিখতে লিখতে পেকে ওঠে ধীরে কেশ,
বয়সের সাথে অক্ষর আর আবেগের ছাঁদ রূপ বদলায়,
ত্বকে ভর করে অভিজ্ঞতার বলিরেখা।
অরুণাংশুরা ঘটনাক্রমে কারো বা জীবন সঙ্গী
অথবা কাহারো পরিযায়ী প্রেম আকাশে উড়ছে একা।
তবু, মেটা বা না মেটা সাধ গুলো আছে থাক,
মন পিয়নের খামগুলো সব শুভেচ্ছায় ভরে যাক।।
---------------------
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
----------------------