ভরদুপুর।
জবাদের দাওয়ায় তেরছাভাবে একচিলতে রোদ্দূর কাঙালের মতো পড়ে আছে। বড় নিরীহ রোদ। এ বছর শীতটা যা জাঁকিয়ে পড়েছিল! এখন শীত যাই-যাই। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর জবা সেই রোদে নিজেকে সঁপে দিয়ে বসে আছে।
ঠিক সেইসময় গুটিগুটি পায়ে এসে দাঁড়ালো সে। কাঁধে নোংরা তেলচিটে একখানা ঝোলা। পরণের কাপড়চোপড়ও ময়লা ও শতচ্ছিন্ন। মুখভর্তি কাঁচাপাকা গোঁফদাড়ি। তারওপর আবার একটা ছেঁড়া পুরোনো কোটও চাপানো হয়েছে। কোনো সহৃদয় ব্যক্তির দয়ার দান হয়তো। সে একজন ভিখিরি।
ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত বেচারা। মুখখানা চুপসে একেবারে কিসমিস। যেন একেবারে অসহায় হয়ে সে দাওয়ার এককোনে বসে পড়লো। বসে অবিকল কুকুরের মতো জিভ বার করে হাঁপাতে লাগলো। হাঁপাতে হাঁপাতেই বলল : বড্ড খিদে পেয়েচে গো…আর পারচি নে…কিছু খেতে দাওনা গো মা…
বড় করুণ আর্তি। জবার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আহা রে! দুপুরে কাউকে অভুক্ত রেখে ফেরালে সংসারেরও তো অমঙ্গল হয়। জবা বললো : ঠিকাছে। বোসো। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে জবা একটা সানকিতে করে ভাত-তরকারি এনে দিল। দিয়ে স্নেহভরা গলায় বললো : নাও, এইটুকু খেয়ে নাও…
খাবারের দিকে একনজর দেখেই লোকটার চোখদুটো ক্ষণিকের জন্যে চকচক করে উঠলো। কিন্তু তারপর সে হাত দিয়ে সানকিটা ঈষৎ ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো : আজ আর ভাত-ফাত খেতে ইচ্ছে করছে না যে! এট্টু পায়েস হবে মা? এই এট্টুখানি…আছে?
শুনে জবার তো গালে হাত। ও মা, বলে কী গো! মুখে বললো : ভাতই জোটে না, তায় আবার পায়েস! শখ কত! যত্তসব!
নোংরা জঙ্গুলে দাড়ির ফাঁক দিয়ে হলদেটে দাঁত বার করে লোকটা ঈষৎ হাসলো। হাসিটাকে জবার মনে হলো, আবর্জনার স্তূপে অবহেলায় পড়ে থাকা চকচকে একটাকার কয়েন যেন। জবা বললো : পায়েস-টায়েস হবে না বাছা। তা আজ হঠাৎ তোমার পায়েস খেতেই বা ইচ্ছে করছে কেন?
লোকটা এবার লাজুক হেসে বললো : আজ যে আমার জনমদিন গো, মা!
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
________________________
মুক্তি দাশ
১৩৫, অঘোর সরণী
রাজপুর
কলকাতা-৭০০১৪৯
মোবাইল/হোয়াটসঅ্যাপ : ৯৮৩০৪১৩১২২
কল্পনা ভাল তাই বলে কি তা বাস্তবতার ভিতটুকুও মানবে না!
উত্তরমুছুন