গল্প।। বি শ হা জা রি মা ল ।। চন্দন মিত্র ।। কথাকাহিনি ২৬; ১লা এপ্রিল ২০২১;
বি শ হা জা রি মা ল
চন্দন মিত্র
' ওই বিশ হাজারি মালটা যাচ্ছে ', ' না রে পঁচিশ হাজারি মাল ' । কালভার্টের উপর বসে আড্ডা দেয়া ছোকরাগুলো প্রতিদিনই এইধরণের আওয়াজ দেয় । অনীশ এসব আওয়াজকে পাত্তা না-দিলেও কেমন যেন অস্বস্তিতে পড়ে। সাইকেলের হ্যান্ডেল বেঁকে যায় । বাড়ি থেকে তিরিশ কিলোমিটার বাসযাত্রার পর যেখানে নামতে হয় , সেটা একটা গঞ্জ । গ্যারেজে সাইকেল রাখা থাকে । সাইকেলে ছ-কিলোমিটার অতিক্রম করা কম কথা নয় । তার ওপর যাত্রার সূচনায় এমন আওয়াজ । অবশ্য স্কুল থেকে ফেরার পথে ছোকরাগুলোকে দেখা যায় না ।
গত দুমাস ধরে অনীশ এসব সহ্য করে আসছে । জয়েন করার সপ্তাখানেক পর ছেলেছোকরা সবাই জেনে গেল যে, সাইকেলে চেপে যাওয়া আপাত নিরীহ চেহারার ছেলেটা আসলে নূতনহাট হাইস্কুলের নতুন মাস্টার । এই তথ্যলাভের পর থেকেই আওয়াজ দেওয়া শুরু । মা তাকে বার বার করে বলে দিয়েছেন ---' বাবু, দিনকাল জানো তো ! যে যা বলুক কথা ধরবে না ।' আজকে আর অনীশ নিজেকে সামলাতে পারল না । কদিন থেকে ম্যানেজিং কমিটি টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে । অনীশ পড়েছে দ্বন্দ্বে । তার এতো দিনের আদর্শ ; অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ না-করার দৃঢ় সংকল্প আজ বুঝি টলে যায় । মাথাভারী চিন্তা নিয়ে বাস থেকে নেমে গ্যারেজ থেকে সাইকেল নিয়ে প্যাডেলে চাপ দেয়। কালভার্টের উপর উঠতেই সেই আওয়াজ । আজ আর অনীশ মাথা নিচু করে প্যাডেলে জোরে চাপ দিয়ে বেরিয়ে গেল না । প্রচণ্ড ক্রোধে সজোরে চেপে ধরল দুই হাতের ব্রেক । ছোকরার দল আওয়াজ থামিয়ে থমকে গেল । সাইকেল স্ট্যান্ড করিয়ে অনীশ ধীর পায়ে এগিয়ে গেল । ছোকরার দল বুঝতে পারল না কী ঘটতে চলেছে । অনীশ ধীর অথচ নিষ্কম্প গলায় শুরু করল --- " আপনারা আমাকে দেখে এমন আওয়াজ দেন কেন ? সম্ভবত আমার বেতনের ইঙ্গিতই আপনারা দিয়ে থাকেন । তাহলে আপনাদের একটা কথা বলি শুনুন । আমার তখন সবেমাত্র জ্ঞান হয়েছে । বাবা একদিন আমার হাতে একটি কলম ধরিয়ে দিয়ে বললেন খোকা এটাকে শক্ত করে ধরো এ তোমাকে সুন্দর সময়ে পৌঁছে দেবে । তা আপনাদের বাবারা আপনাদের হাতে কী ধরিয়ে দিয়েছিলেন ? '' ছোকরার দল চুপ । অনীশ দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যায় । সাইকেলে চেপে বসে ।
------------------------------------------------------------------------------------------