Click the image to explore all Offers

গল্প।। ভালো থাকুক ভালোবাসা ।। চন্দ্রানী চট্টোপাধ্যায় ।। কথাকাহিনি ২৬; ১লা এপ্রিল ২০২১;





  গোলপার্ক থেকে গড়িয়া যাওয়ার ৪৫এ বাসটা পাওয়া যে কি চাপের ব্যাপার তা লিপিকা হাড়ে হাড়ে টের পায়। গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের স্পোকেন ইংলিশ এর ক্লাস করতে যায় লিপিকা। ছোটখাটো একটা জব করে। কিন্তু এখনকার দিনে ভালো ইংলিশ জানাটা খুব জরুরি। তাই লিপিকা ভালো কোথাও জবের জন্য ট্রাই করতে পারে না। তাই বাধ্য হয়েই ছয়টা থেকে আটটার ব্যাচ এ ওকে ভর্তি হতে হয়।
তারপরেই এই বাস এর সমস্যা। লিপিকা ট্রেন পথের রাস্তা বিশেষ চেনে না। আর ব্রেক করে গেলে দুবার তিনবার গাড়ি পাল্টাতে হয়। বাধ্য হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এই ৪৫এ বাসের জন্য।আজ বেশ রাত হয়ে গেছে। এখন আটটা চল্লিশ। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। সঙ্গে একটু ঝোড়ো হাওয়া। এ যেন আজ লিপিকা র উপরি পাওনা। হঠাৎ করে একজন বলে উঠল

--------আপনিও কি বাসের অপেক্ষায়? লিপিকা উত্তর দিতে নারাজ।
ছেলেটি আবার বলে ওঠে
-------আমি আপনারই ক্লাসে আপনার সহপাঠী। এই অধমের নাম প্রিয়রঞ্জন সেন। আমার বন্ধুরা আমাকে প্রিয় বলে ডাকে আপনি আমাকে রঞ্জন বলেও ডাকতে পারেন।
------এখানে এভাবে বাসের অপেক্ষা করতে থাকা মানে বোকামো।
-------আমার যতদূর মনে হয় আপনি বোবা নয়। কারণ ক্লাসে আপনি যেভাবে ইন্ট্রো দিলেন আমার খুব ভালো লেগেছে। ভেবেছিলাম ক্লাসেই আলাপ করে নেব। কিন্তু ম্যাম এর লেকচারের জন্য তা হয়ে উঠল না।

------আমার নাম লিপিকা। মানে আমি লিপিকা সান্যাল।
--------ঠিকই ধরেছেন আমি ৪৫এ এর জন্যই দাঁড়িয়ে আছি।
-------যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলব, হেঁটে যাবেন, আপনাকে যাদবপুর ৮বি অবধি পৌঁছে দিতে পারি।

লিপিকা মনে মনে ভাবে প্রস্তাবটা ভালোই। ব্রিজের উপর দিয়ে একা যাওয়ার থেকে ক্লাসমেটের সাথে যাওয়া অনেক ভালো। তাই একটু কিন্তু কিন্তু করেও রাজি হলো। যেতে যেতে ওদের মধ্যে ভালো আলাপ হয়ে গেল। ওদের আলাপচারিতার কিছু অংশ।

------আমার বাড়ি গড়িয়া স্টেশন রোডে। এক বাসে যাওয়ার জন্য ফর্টি ফাইভ এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।এই বাসটা যা ঝোলায় না আসতে। এনিওয়ে আপনি কোথায় থাকেন?

--------আমি যাদবপুরে ৮বি র কাছে সেনপাড়ায় একটা বাড়িতে পেইং গেস্ট থাকি। এখানেই একটি ছোটখাটো সফটওয়্যার কোম্পানিতে জব করি। মিডিয়াম বাংলা তাই ইংলিশটা অতটা রপ্ত করে উঠতে পারিনি। আর বোঝেনই তো ইংলিশ ছাড়া কোনো গতি নেই। তাই অগত্যা এখানে ক্লাস,যদি একটু ভালো ইংলিশে কথা বলতে পারি । আমার বাড়ি পুরুলিয়াতে।

বাড়িতে কে কে আছে জানতে চায় লিপিকা।
-------বাবা মা আর বোন। আপনার?
-------বাবা মা আর আমি।

আর হাঁটতে পারে না লিপিকা। আরেকটু গেলেই যাদবপুর থানা। এখানেই দাঁড়ালো ওরা। প্রিয়রঞ্জন লিপিকাকে বলে ওঠে
------------তাহলে শুক্রবার দেখা হচ্ছে তো আবার? ------------লিপিকা বোকার মত বলে ওঠে কেন?
----------আর ক্লাস করতে আসবেন না?
লিপিকা ভুলটা বুঝতে পেরে একটু লজ্জিত হয় এবং তারপর বলে- নিশ্চয়ই আসব।
ঐতো সিগনালে দাঁড়িয়ে আছে ফর্টি ফাইভ বি। লিপিকা বাসে উঠার সময় বলে নাইস টু মিট ইউ। প্রতিউত্তরে আসে নাইস টু মিট ইউ টু। বাই।

***************†********************

প্রিয়রঞ্জন দাঁড়িয়ে থাকে রামকৃষ্ণ মিশন এর সামনে। ওর কি লিপিকার জন্য অপেক্ষা করা উচিত এই ভাবতে ভাবতেই ওর চোখ দুটো সামনে আটকে গেল। এ কে আসছে ,খুব চেনা মনে হচ্ছে। নীলাম্বরী পোশাকে যত কাছে আসছে ততো চোখগুলো জুড়িয়ে যাচ্ছে। গোধূলির কনে দেখা আলোয় লিপিকাকে ঠিক যেন দেবী দেবী মনে হচ্ছে। কাজল কালো চোখ দুটো আর ওই নাকের ছোট্ট চিকচিক করা নাকছাবি ,সাথে হালকা লিপস্টিক এর ছোঁয়ায় ওকে অপরূপা লাগছে।

----একি আপনি কতক্ষণ?
-----আমি এই সবে। ভেতরে ঢুকতেই যাচ্ছিলাম, কি মনে হল একবার পেছনে ফিরতেই আপনাকে দেখতে পেলাম। তাই দাঁড়িয়ে পড়লাম আর কি।
লিপিকা মিষ্টি হেসে বলল "চলুন তাহলে ক্লাসে যাই।"
দু'ঘণ্টা ক্লাস। ক্লাসের মধ্যেই ম্যামের দেওয়ার টাস্ক আর ইংলিশে কনভারসেশন চলতে থাকে। আজ মাঝে মাঝেই ক্লাসের ফাঁকে বারবার চোখ পড়ে যাচ্ছিল লিপিকার দিকে। কোন এক অজানা অচেনা ভালোলাগা যেন জাপটে ধরেছিল প্রিয়রঞ্জন কে।কখন যে দু ঘণ্টা পেরিয়ে যায় বোঝাই যায়না। এবার বাড়ি ফেরার পালা। আবার সেই একই প্রবলেম।
প্রিয়রঞ্জন অবশ্য বলেছিল দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই চলুন হেঁটেই চলে যাই। লিপিকা যেতে চাইলো না। একটু অপেক্ষা করতেই ফর্টি ফাইভ এর দেখা পাওয়া গেল। ওরা দুজনেই বাসে উঠে পড়ল। বাসের মধ্যে প্রচুর ভিড়। কিন্তু লিপিকার কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। যেন মনে হচ্ছিল প্রিয়রঞ্জন ওকে অভিভাবকের মতই সমস্ত ভিড়ের  থেকে আড়াল করে রেখেছিল। ওর এই ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগছিল।

প্রিয়রঞ্জন বাড়ির ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে ভাবে লিপিকার কথা। আজ আকাশে প্রচুর তারারা জ্বলজ্বল করছে ঠিক যেন লিপিকার নাকছাবির মত।আচ্ছা লিপিকার থেকে ফোন নম্বরটা কি চাইলে হত আজকে? যদি খারাপ ভাবত লিপিকা । যদি নট ইন্টারেস্টেড বলে আর কথা না বলতো?

সময়টা নদীর মত। স্রোতের মতো বইতেই থাকে। দেখতে দেখতে দু'মাস কেটে গেল। ওদের মধ্যে বন্ধুত্বটা বেশ খানিকটা সহজ হয়ে গেছে এতদিনে।
মিশন থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা আসার পর লিপিকা বলে

-------আপনার বোনের তো বিয়ে হয়ে গেছে।
প্রিয়রঞ্জন ওকে থামিয়ে দেয় আর বলে ," কতদিন আর লাগবে বলুন তো তুমিতে আসতে?"
লিপিকা হাসতে থাকে আর বলে ,"তুমিতে আসাটা কি খুব জরুরী? এটাই বেশ ভালো।"
-----তাহলে আপনি শুধু বলতে থাকুন আমি কোন কথা বলছি না।
---------আচ্ছা আচ্ছা বেশ তাই হবে। এবার খুশি তো!!
-------খুশি খুশি ভীষণ খুশি।
--------তাহলে তোমার নতুন অফিস কবে থেকে জয়েন করেছো।
--------জানিনা তবে বলেছে জানাবে শরটলি। দে উইল  সেন্ট অফারিং লেটার উইদিন আ মান্থ পজিটিভলি।
-------তাহলে চিন্তা কিসের??? স্বপ্নপূরণের দিন সামনে।
------ঠিক বুঝলাম না এই কথাটার মানে।
-------বলছি এইতো সময় এসে গেছে ।এবার সেটেল হওয়ার পালা।
--------আচ্ছা তোমার বয়স কত??? ও আই এম ভেরি সরি মেয়েদের আবার বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই। বাই দ্যা ওয়ে কোন সালে মাধ্যমিক সেটা বলা যাবে কি??
-------এত ফর্মালিটির কি আছে?? সোজা কথা সোজা ভাবে বললেই হয়। 2000।
-------আচ্ছা বলতো আমার বয়স কত হতে পারে???
------কত?  আমার এই ব্যাপারে কোন আইডিয়া নেই গো। না বললে বুঝতে পারব না।
------আমি যদি বলি আমি তোমার থেকে অনেক সিনিয়ার।
--------ওকে। তাহলে কি আমি তোমায় দাদা বলব?
------আরে না না না প্লিজ এটা করো না।
------আরে বিয়ে করতে গেলে তো মেয়ে লাগে নাকি?  তুমি খুঁজে দেবে আমার জন্য?
-----বেশ।  চেষ্টা করব। কি রকম পছন্দ তো জানিনা।
------যদি বলি তোমার মত!!!! একটা কাজ করো। আজ আয়নার সামনে নিজেই দাঁড়িয়ে পোড়ো। দেখোতো কেমন লাগে?
লিপিকার আর কোন কথা বলতে পারে না। চুপচাপ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়ে ।ওর মুখের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকে। প্রিয়রঞ্জন হেসে ফেলে আর বলে
--------কি হলো?  ভয় পেলে নাকি!!!!
--------এই আমি কিন্তু  মজা করছিলাম।
লিপিকা তাও কিছু বলতে পারেনা।
লিপিকা বাড়ি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে।
ভাবনার বারবার প্রিয়রঞ্জন এর কথাগুলো উঁকি দিচ্ছে। কি মুশকিল  চোখ বন্ধ করছে তো প্রিয়রঞ্জন এর কথাগুলো মনে পড়ছে। খাওয়া-দাওয়া করছে তো প্রিয়রঞ্জন কে মনে পড়ছে। কি যে হচ্ছে? তবে কি ও সত্যি সত্যি প্রিয়রঞ্জন কে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো? ওকি ধীরে ধীরে তবে দুর্বল হয়ে পড়ছে? একরাশ প্রশ্নরা কেবল দৌড়োদৌড়ি করে যাচ্ছে মাথার ভিতরে চারপাশে সব দিকে এদিকে ওদিকে। লিপিকা খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।

আননোন নাম্বার থেকে ফোন লিপিকা চট করে ধরে না। প্রায় ১২ বার ফোন এসে গেছে। লিপিকার মনে হল একটা ফোন করা উচিত তাই সে ঘুরিয়ে একটা ফোন করলো। ওপার থেকে যার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল এতক্ষণ তার কথাই সে ভাবছিল।

-------লিপিকা ,শোনো একবার আমার কথা ।প্লিজ ফোনটা কেটো না।
-------আসলে আমি তোমার ফোন নাম্বারটা তিয়াশার কাছ থেকে পেয়েছি। ওর কোন দোষ নেই আমি জোর করে নিয়েছিলাম।
-------আমি জানি সবটা। তিয়াশা সব বলেছে।
-------আসলে আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমি কোনভাবেই তোমার বন্ধুত্ব হারাতে চাইনি।তাই শুরুতে তোমার কাছে ফোন নাম্বার চাইতে পারিনি। তিয়াশা র কাছ থেকে নিয়েও তোমাকে ফোন করিনি।
----আচ্ছা বেশ বল। এত ফরমালিটি দরকার ছিল না।
-------কাল তোমার সাথে একবার দেখা হতে পারে? না বলোনা প্লিজ। তোমাকে কিছু দেখানোর আছে।
------- ঠিক আছে তবে দক্ষিনাপনে এস ছটার সময়।
------ওকে । থ্যাঙ্ক ইউ।
কি দেখাবে প্রিয়রঞ্জন ওকে? কি দেখাতে পারে? ওর গার্লফ্রেন্ড নয় তো? এরকম হাজারো প্রশ্নের জেরে জেরবার হয়ে লিপিকা সারারাত ঘুমোতে পারে না। সকালের অপেক্ষা করতে করতে কখন যে দু চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছিলো লিপিকার সেই টের পায় নি।
আজ লিপিকা ভারী সুন্দর করে সেজেছে। বেশি ভারী সাজ ওর একদম পছন্দ না। একটু কাজল আর একটু লিপস্টিকে ওর সাজ কমপ্লিট হয়ে যায়।
রাস্তার ওইপার থেকেই প্রিয়রঞ্জন কে দেখা যাচ্ছে।। ওর মুখটা দেখে মনে হচ্ছে যেন একটু টেনশনে আছে। আচ্ছা সাথে তো কেউ নেই তাহলে কি দেখাতে প্রিয়রঞ্জন ওকে ডেকে পাঠালো। কৌতুহল দমন করে লিপিকা রাস্তা পার হলো।

------কি কতক্ষণ?
--------আমি অনেকক্ষণ। তোমার এতো লেট হল যে?
-------মশাই আমি একদম ঠিক সময় এসেছি। বরং তুমি বিফোর টাইমে এসে পড়েছে।।
---------লিপিকা আসলে আমি একটু টেনশনে ছিলাম আজকে।
--------টেনশন কাটলো তবে?
প্রিয়রঞ্জন কোথা থেকে একটা যেন ম্যাজিক করে একটা লাল গোলাপ বের করল আর বলল
-------দিসিজ ফর ইউ লিপিকা
আসলে ও খুব শান্তিপ্রিয়। এবং ওর পরিবারটা ওর কাছে সব ছিল। কোন একটা ছেলে ওকে একটা গোলাপ দেবে আরও সেটা বাড়িতে যদি কেউ জানতে পারে।ও বাবা মার পারমিশন ছাড়া কোনো কাজ করে না।তাই ক্ষণিকের জন্য লিপিকা একটু আনমনা হয়ে গেছিল।
-------লিপিকা আর ইউ অলরাইট? আজকে তুমি এত চুপচাপ কেন? তোমার কি ভালো লাগেনি? আচ্ছা বেশ তোমার মনটা আজকে ভালো হয়ে যাবে এখন ই। চলো তোমাকে সেই জিনিসটা দেখাই।
প্রিয়রঞ্জন মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই একটা পালসার বাইক নিয়ে এসে হাজির।
/-------ও ওয়াও!!! লাভলী!! কবে কিনলে??
----কাল।
------আমি চাই আমার পিছনের সিট টা তুমি প্রথম বস আর কেউ না। চলো একটা রাইড হয়ে যাক।
--------প্রিয়রঞ্জন আমার টু হুইলার একদম পছন্দ নয়। কলকাতা শহরে প্রচুর গাড়ি ঘোড়া। একটা ছেড়ে আরেকটার পেয়ে যাওয়াই যায়। তার জন্য টু হুইলার এর প্রয়োজন হয় না। আমার খুব ভয় করে two-wheeler এ। এতে প্রচুর এক্সিডেন্ট হয়।
----কিন্তু আমি যে তোমার জন্য কিনলাম। এই যে তোমাকে রোজ হাঁটতে হয় এইট বি অব্দি। আমি নয় পুরোটাই তোমাকে পৌঁছে দিতাম।
------আমার জন্য কিনলে অথচ আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না? আমার জন্য এত কষ্ট করবেই বা কেন তুমি? কি আমাদের রিলেশন?
------কি হতে পারে বলতো আমাদের রিলেশন? আমার মনে হয় মোর দ্যান ফ্রেন্ডস।
------মানে? আই ওয়ান্ট  দা ক্লিয়ার আনসার।
-------তুমিতো সত্যিই অদ্ভুত। সত্যি কি তুমি কিছুই বোঝনা। প্লিজ লিপিকা এরকম করোনা।
-----আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে। আমি তোমাকে
কথা শেষ হওয়ার আগেই লিপিকা বলে ওঠে
------আই নিড সাম টাইম।
-----ওকে টেক ইওর টাইম। চলো কিছু খাওয়া যাক
------নানা রঞ্জন। এখন আর সময় নেই। আই হ্যাভ টু রিটার্ন হোম।
----আই উইল ড্রপ  ইউ
-------থ্যাঙ্ক ইউ. বাট দিসিজ ইস দা ফাস্ট এন্ড লাস্ট টাইম অনলি।
বাড়িতে ফিরে লিপিকা ভাবে এ কি ঘটতে চলেছে ওর সাথে। কলেজে  ওর বন্ধু অয়ন আর আরশি র প্রেম বেড়ে উঠতে দেখেছে ৷ তবে কি ও প্রেমে পড়ছে ? বাড়ীতে কি বলবে? বাবাকে ওযে বড্ড ভালবাসে ৷ আর রঞ্জন কে? কোন উত্তর খুঁজে পায় না লিপিকা ৷ মনটা খুব খারাপ হয়ে থাকে লিপিকার ৷ পরের দিন ক্লাসও করতে যায় না ও ৷

------ মামনি কি হয়েছে রে তোর মা ৷ছটফট করছিস না ৷ বাবা বাবা বলে প্রশ্নে প্রশ্নে আমাকে জেরবার করছিস না ৷ বল না আমাকে ৷ আচ্ছা ক্লাস করতে যাস কোন নতুন বন্ধু হলো ? বল না ৷
----- বাবা কী হচ্ছে কী ? তুমিও দেখি মায়ের মতোই শুরু করলে!!
------ তোর উপরে আমার পুরো ভরসা আছে ৷ তুই শুধু ওয়েল এস্টাব্লিসড হয়ে যা ৷তারপর তোর যা ইচ্ছে তাই করিস। আমরা তো আছিই তোর পাশে।
লিপিকার চন্চল মনটা এবারে শান্ত হয় একটু ।

প্রিয় রঞ্জন অবাক হয়ে যায় লিপিকাকে না দেখতে পেয়ে ৷ এতদিনে তো কোন দিন অ্যাবসেন্ট করে নি ৷ আজ তবে!!! নাকি ওর কারনেই!¡!!
আর ভালো লাগছে না ওর ৷ বাড়ী ফিরে কোন রকমে জুতো মোজা খুলে জামা কাপড় না খুলেই সটান শুয়ে পড়ে ৷ লিপিকাকে এই কদিনে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে ৷ চোখ বন্ধ করলে এখন ও লিপিকাকে দেখতে পায় ৷ ওর চিকচিকে নাকছাবি আর ঠোঁটদুটো পাগল করে দেয় ওকে। এলোমেলো করে দেয় যেনো ৷
অফিস থেকে অফারিং লেটারের সাথে যে ফর্মটা এসেছিল সেটা এবার ফিলাপ করতে হবে ৷ কি লিখবে প্রিয়রঞ্জন বুঝতে পারেনা। কলকাতা না ব্যাঙ্গালোর? ঠিক করে লিপিকা ওর সাথে না থাকলে ও কলকাতা বরাবরের মতো ছাড়বে ৷ লিপিকাকে ও ফোন করে ৷
----- হ্যালো লিপিকা শুনতে পাচ্ছ!! আমি সব বুঝেছি ৷ তোমার প্রবলেম আমি | আমি আর তোমার জীবনে আসব না ৷ তোমার সাথে কথা না বলে আর থাকতে পারব না ৷ তাই চলে যাব এই কলকাতা ছেড়ে ৷

------- কাল একবার দেখা হতে পারে রঞ্জন ?
------ তুমি দেখা করতে চাইছো লিপিকা?সত্যি কথা বলতে আমার ও তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল । যথারীতি যা বলা তাই কাজ। দেখা হল সেই পরিচিত জায়গায়। সেই গোধূলি বেলায় প্রিয়রঞ্জন আজও যেন চোখ সরাতে পারে না লিপিকা  র থেকে। উজ্জল শ্যামবর্ণ, পিঠের উপর খোলা  চুলগুলোকে নিয়ে যেন খেলা করতে ইচ্ছে করছিল ওর। প্রিয়রঞ্জন বলতে শুরু করে
-------সরি লিপিকা ফর এভরিথিং। কখন যেন তুমি আমার মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছো তা আমি জানিনা। তোমাকে অন্তত একবার না দেখলে বা কথা না বললে আমার ভালো লাগেনা। দিস ইজ ভেরি ব্যাড হ্যাবিট। তাই আমি ঠিক করেছি ব্যাঙ্গালোরে জয়েন করব। আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড হলে হয়তো তোমাকে ভুলতে পারবো।
লিপিকা বলে ওঠে
------রঞ্জন খুব খিদে পেয়েছে। চিনেবাদাম খাওয়াবে??
অবাক হয়ে যায় রঞ্জন। এ কোন লিপিকা?
------ভালোবাসি কথাটা বলতে এত দিন সময় লাগে বুঝি? কোথায় যেন যাবে বলছিলে?
------তবে কি তুমি আমাকে একসেপ্ট করলে? তোমার মনের কি কোথাও আমি আছি?
-----এই কথাটা বুঝতে পার না? নাকি বুঝতে চাইছ না। তুমি তো ভারী অদ্ভুত রঞ্জন!!!!
-------তোমার পক্ষীরাজ টি কই?? আজকে আমার উড়তে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে।
প্রিয়রঞ্জন জড়িয়ে ধরে লিপিকাকে।
----আই লাভ ইউ লিপিকা। আই লাভ ইউ সো মাচ। থ্যাঙ্ক ইউ...... থ্যাংক ইউ ফর এভরিথিং।
------লেটস গো ফর আ শর্ট ট্রিপ ৷

------------------------ 

ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।

 --------------------সমাপ্ত------------------ 

Chandrani Chattopadhyay

                  640 jawpur road
                   Kolkata-700074

Post a Comment

3 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. I am proud of you...this story is too much amazing mind blowing....

    ReplyDelete
  2. Amazing story...it's one of the best story....soooooooooo Lovable.....@ tanusree chakraborty

    ReplyDelete