Click the image to explore all Offers

গল্প।। সৌন্দর্য।। স্বরূপ মণ্ডল ।। কথাকাহিনি ২৬; ১লা এপ্রিল ২০২১;





  কলেজ থেকে ফিরে সোজা গিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে খিল দিল মল্লিকা। ব্যাগটা পড়ার টেবিলে রেখে দিয়ে আছড়ে পড়ল বিছানায়, বালিশে মুখ গুঁজে কোনোরকমে কান্নার আওয়াজ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল। অন্যান্য দিন কলেজ থেকে ফিরে প্রথমেই মা, মা চীৎকারে বাড়ি মাথায় করে তোলে। তারপর প্রতিমাদেবী যেখানেই থাকুন না কেন খুঁজে বের করে জড়িয়ে ধরে আদর করে, উলটে খায়ও। মল্লিকার মা প্রতিমাদেবী বুঝলেন গুরুতর কিছু একটা হয়েছে। দরজায় টোকা মেরে বললেন, "মল্লিকা, খাবি আয় মা?" মেয়ের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে মনে কু ডাকল। যতই হোক, বয়সটা খারাপ। "কী রে, সাড়া দিচ্ছিস না কেন?" জোরে হাঁক দিলেন প্রতিমাদেবী। কোনোমতে কান্না থামিয়ে ধরা গলায় উত্তর দিল, "আমার খিদে নেই, তুমি খেয়ে নাও।" মেয়ের সাড়া পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন, "সেই সাত সকালে খেয়ে বেরিয়েছিস, এখন বেলা দু' টো, খিদে নেই বললেই হলো! কী হয়েছে? দরজায় খিল দিয়েছিস কেন?" 
সেই কোন ছেলেবেলায় বাবাকে হারিয়েছে। তারপর থেকে মা-ই ওর জীবনের সব, প্রকৃত বন্ধু, যাকে সব কথা বলা যায়। তবু চন্দ্রের কথাটা চেপে গেছিল। কেন, সেও জানে না। ভীষণ ভালবেসে ছিল ওকে।  
-"মল্লিকা, প্রত্যেকের স্বরূপের মধ্যে নিহিত রয়েছে এক অপূর্ব সৌন্দর্য! শুধু দেখার মতো চোখ থাকা চাই।" চন্দ্রের এরূপ ভাবনা মল্লিকার মতো শ্যামলা, দাঁত-উঁচু মেয়ের নিজেকে সঁপে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। দেখতে যেমনই হোক বয়স গুণে শরীরের লালিত্যে আর পাঁচ জনের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না মল্লিকা। মেয়ের ভাব গতিক বুঝতে পেরে প্রতিমাদেবী বারবার সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, নিজেকে দুর্লভ করতে না পারিস, অন্ততঃপক্ষে সহজলভ্য করিস না। কিন্তু প্রেম তো বিচার বিবেচনা করে হয় না। আর বিচার বিবেচনা করে যা হয় তা প্রেম নয়। ফলে যা হবার তাই হলো। চন্দ্রের সঙ্গে মেলামেশা চরম পরিণতি পেল। তাতেও এতটুকু অপরাধী মনে হয় নি নিজেকে। বেশ চলছিল, তাল কাটল যখন দেখল চন্দ্র ওরই বন্ধু আয়েসার সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেছে। ভালবাসলে নাকি অধিকার জন্মায়, সেই অধিকারেই চন্দ্রের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছিল। উত্তরে চন্দ্র যা বলেছিল তাতেই আকাশ ভেঙে পড়ল মাথায়। 
-"দেখ মল্লিকা, কাউকে ভালবাসা মানে দাসত্ব করা নয়। আর সম্পর্কে যতদিন অধিকারবোধ না জন্মায় ততদিনই ভালবাসা থাকে, বুঝলি? তাছাড়া তোর মতো মেয়ে যে আমার সঙ্গ পেয়েছে এটাই তো অনেক পাওয়া! বরং এর জন্য তোর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।" 
এর পরও কি সর্বস্ব খোয়ানো মল্লিকার বেঁচে থাকা সম্ভব! একবার ভাবল, কাগজ কাটা ছুরিটা দিয়ে দেয় গলায় একটা পোঁচ লাগিয়ে, আবার ভাবল, ওড়নাটা গলায় বেঁধে সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়লেই তো হয় কিন্তু কোনোটাই করতে পারল না। হঠাৎ করে মায়ের ভাবনাটাই ওর কাছে বড় হয়ে দেখা দিল। মনে হলো, যে মা সেই ছেলেবেলা থেকে নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা সবকিছু ত্যাগ দিয়ে মেয়েকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে, এ রকম ধূর্ত ছেলের জন্য সেই মাকে কষ্ট দেবে কোন দুঃখে! বিছানা ছেড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। গলাটা ঝেরে নিয়ে ঘরের ভেতর থেকেই বলল, "মা, ভাত বাড়ো গিয়ে, আমি আসছি।" প্রতিমাদেবী শান্তিতে ডাইনিং এর দিকে এগলেন। এলোমেলো চুলগুলো আঁচড়াতে আঁচড়াতে ভাল করে নিজেকে দেখল মল্লিকা। বুকের মধ্যে জমে থাকা একরাশ দুঃখ বেরিয়ে যাওয়ার পর সত্যিই সুন্দর লাগছে ওকে! ভাবল, চন্দ্র ঠিকই বলে, প্রত্যেকের মধ্যেই সৌন্দর্য রয়েছে, শুধু দেখার মতো চোখ থাকা চাই। 

ছবিঋণ- ইন্টারনেট । 

স্বরূপ মণ্ডল 
বাগডাঙ্গা, কান্দি, মুর্শিদাবাদ 
পিন- ৭৪২১৩৮ 

SWARUP MONDAL 
BAGDANGA, KANDI, MURSHIDABAD 
PIN- 742138 
CONTACT NO- 9732404752 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.