Click the image to explore all Offers

গল্প।। ঋজুর জন্মদিনে ।। গোবিন্দ মোদক ।। কথাকাহিনি ২৬; ১লা এপ্রিল ২০২১;





       
        চৌদ্দ-ই নভেম্বর ঋজুর জীবনে অত্যন্ত প্রিয় একটি দিন --- ঋজুর জন্মদিন। আবার ওই একই দিনটি "শিশুদিবস"ও। কাজেই ঋজুর আনন্দের সীমা নেই। ঋজুর বাবা প্রতিবছর ঘটা করে ঋজুর জন্মদিন পালন করেন। একটা লজ ভাড়া করা হয়  --- সুন্দর করে সেটিকে সাজিয়ে জমজমাট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হয় ঋজুর জন্মদিন। ঋজুও সেটা খুব উপভোগ করে।
          কিন্তু এ বছর ঋজুর খুব মন খারাপ। স্কুল বন্ধ থাকবার কারণে ও অনেকটা বেশি সুযোগ পেয়ে টিভিতে খবর দেখেছে ও শুনেছে --- তাতে করে ও জানতে পেরেছে এই করোনা অতিমারির কারণে বহু সাধারণ মানুষের কাজ চলে গেছে --- বিশেষ করে যানবাহন ও ট্রেন না চলবার কারণে বহু শ্রমিক, হকার ও কর্মীদের কাজ নেই। তাদের সংসারের অবস্থা অবর্ণনীয়। কাজ নেই --- ফলে রোজগার নেই --- ফলে দু'বেলা দু'মুঠো খাবার পর্যন্ত ওদের ঠিকমত জুটছে না। ওদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত খাওয়া-পরার অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। ঋজু ওদের জন্য সমবেদনা অনুভব করে --- কিন্তু কী করতে পারে ঋজু ! কতটুকুই বা তার সামর্থ্য !
          কিন্তু একটা আশার আলো যেন দেখতে পেল ঋজু। বাবা-মা এবং মামা মিলে ঋজুর আসন্ন জন্মদিনের পরিকল্পনা করছিল --- কতো জনকে নিমন্ত্রণ করা হবে, কতো টাকার প্লেট হবে, কিভাবে আপ্যায়ণ করা হবে, কোন লজ ভাড়া নেওয়া হবে ... ইত্যাদি ইত্যাদি। ঋজু ওদের আলোচনা সব শুনলো। তারপর বাবা যখন ওর মতামত জানতে চাইলেন তখন ঋজু বলল --- বাবা, এবারের জন্মদিনটা যদি একটু অন্যভাবে পালন করা হয় ....!
    --- সেটা কি রকম ? মামা জানতে চাইলেন। 
    --- তোমাদের কথা শুনে বুঝলাম জন্মদিনে তোমাদের খরচ মোটামুটি চার লাখ টাকা। কিন্তু যদি সেটা না করে তার অর্ধেক খরচে উদ্বাস্তু কলোনির এবং হঠাৎ-পাড়ার ছেলে মেয়েদের জন্য জামা-জুতো, শুকনো খাবার ইত্যাদি দেওয়া যায় ..... !
     --- সে আবার কি কথা ! মায়ের অসহিষ্ণু কন্ঠস্বর। 
     --- মা, তুমি তো প্রতিদিন টিভিতে দেখছো কি কষ্টে আছে ওই কলোনির লোকগুলো আর তাদের ছেলেমেয়েরা ! খাওয়া নেই, পরনের জামা পর্যন্ত নেই, পায়ে চটি নেই .... !
    --- ব্যাস! ব্যাস!! বুঝে গেছি! তোমার আর অতো দেশসেবার কথা ভাবতে হবে না! তোমার জন্মদিন ---  আমাদেরই ভাবতে দাও।
        কিন্তু ঋজু বেঁকে বসলো। শেষ পর্যন্ত সে মা, বাবা ও মামাকে রাজি করালো। তারপর জন্মদিনে কলোনিতে গিয়ে প্রত্যেক ছেলে-মেয়ের হাতে তুলে দিলো নতুন জামা, চটি আর খাবার দাবার। ওরা তো মহাখুশি !
        ওদের মুখে হাসি দেখে ঋজুর আনন্দ দেখে কে ! ঋজুর বাবা-মা এই প্রথমবারের জন্য অনুভব করলেন একটা শিশুকে খুশি করতে হলে প্রচুর টাকা খরচের দরকার হয় না, এইটুকু সহানুভূতিই যথেষ্ট !
 
ছবিঋণ- ইন্টারনেট । 
_____________________
স্বরচিত মৌলিক অপ্রকাশিত অণুগল্প। 
প্রেরক: গোবিন্দ মোদক। 
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা 
রাধানগর, ডাক- ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া। 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত - 741103
WhatsApp/ফোন: 8653395807

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.