আজকাল সংযুক্তার প্রতি রীতেশের ব্যবহার কেমন যেন 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' গোছের!
সোহাগ বা অন্তরঙ্গতা তো দূর সাধারণ কথাবার্তাতেও অনীহা। সংযুক্তাও এড়িয়ে চলে।
অস্বস্তির মধ্যে হ'লেও, বেশ চলছিল। গতকাল রাতে রীতেশ একদম অন্য মানুষ। অনিচ্ছা সত্যেও সংযুক্তাকে নিবিড় পরিপূর্ণতায় ভরিয়ে তুলেছে। সব ভুলে সংযুক্তাও নিজেকে সঁপে দিয়েছে রীতেশের বুকে। বহুদিনের তৃষিত মরুর বুকে বৃষ্টিও নেমেছে।
সকালে ডোরবেলের আওয়াজে, সংযুক্তার ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু দরজা খুলতে গিয়ে সে অবাক!
দরজায় এক সম্পূর্ণ অচেনা সুন্দরী। রীতেশ বলছে, "এসো প্রগতি এসো...
সংযুক্তা, এ' হলো প্রগতি। আমার অফিস কলীগ। এখানে সপ্তাহখানেক থাকবে।"
সংযুক্তা কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে না পেরে টলতে থাকে ৷ চোখ বুজে গত রাতের কথা ভাবতে গিয়ে সে শিউরে উঠল ৷ তাহলে কি গত রাতের সোহাগ মনের টানে নয়? তীব্র ঘৃণা আর চাপা কষ্ট নিয়ে সংযুক্তা নিজেকে সংযত করল ৷ সে জানে, রীতেশের চিরাচরিত নারী দুর্বলতা ৷ তাই বলে একেবারে বাড়িতে ঠাঁই! অজান্তে চোখ বেয়ে নেমে এলো শ্রাবণ ধারা ৷ ততক্ষণে প্রগতিকে নিয়ে রীতেশ উপরের ঘরে চলে গেছে৷ সংযুক্তা কাউকে কিছুই বুঝতে দিল না৷
রাতের খাবার দিয়ে সে মেয়েকে নিয়ে নিচে নেমে এল ৷
...গভীর রাত, বিশ্ব চরাচর শান্ত সমাহিত ৷ তখনও প্রগতি ও রীতেশ ছাদে গল্প করছে ৷ অভিমানিনী সংযুক্তা ঘুমন্ত মেয়ের মুখে স্নেহের চুম্বন এঁকে ধীরে ধীরে নেমে এল খোলা আকাশের নিচে ৷ বেশ কিছুক্ষন পর প্রগতি ও রীতেশ ছাদ থেকে নেমে দেখতে পেল, সংযুক্তার ঘর হাট করে খোলা ৷ তাদের একমাত্র সন্তান প্রীতি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বিস্মিত রীতেশ হাঁক দেয়, ..... সংযুক্তা! কিন্তু তার ডাকে কেউ সাড়া দিল না ৷ পনের'শ স্কোয়ার ফিটের বিল্ডিংটাতে সেই ডাক প্রতিধ্বনি হয় রীতেশের বুকে আছড়ে পড়ল ৷ রীতেশ যখন এঘর-ওঘর করছে, প্রগতি দেখল ঘুমন্ত প্রীতির মাথার পাশে একটা ছোট্ট কাগজের টুকরো ৷ তাতে লেখা.......
প্রিয় রীতেশ,
আজ তোমাকে আমার অন্তিম মুহূর্তে যে চিঠি লিখছি তা বলতে এতোটুকু আর দ্বিধা নেই ৷ প্রাণের সলতে ধিক ধিক জ্বলছে,আজ না বলে চলে গেলে নিজেকে নিজের অপরাধী বলে মনে হবে ৷ সত্যি কথা বলতে আমি তোমাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম ৷ নারী মন তো কুঁড়ির মত, যত ছুঁইবে ততই সে পাপড়ি মেলে নিজেকে বিকশিত করবে ৷ কিন্তু তোমার ব্যবহার, তোমার অবহেলিত ছোঁয়া, আমার গোপন হৃদয়ে শুধু ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়েছে ৷ পুরুষের ছোঁয়া নারী রক্তে বান ডেকে আনে,সুনামিতে সব বাঁধন আলগা করে দেয় ৷ যদি সে ছোঁয়া- সম্মানের হয়, আত্মমর্যাদার হয়৷ কিন্তু কোথায় কি! অফিসের কাজে সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাইরে কাটিয়ে কোন একদিন ফিরতে বটে! কিন্তু সে ফেরা ছিল মন শূন্য জড় দেহ নিয়ে ফেরা? তারপর এটা, ওটা, সেটা, কাজের অজুহাতে চলে যেতে সময়হীন স্রোতের মত ৷ কিন্তু আর পারছিনা!...বুকের মধ্যে সাহারা আর চোখভরা চেরাপুঞ্জি নিয়ে আজ অনির্দিষ্ট পথে বের হয়ে যাচ্ছি ৷ প্রীতিকে দেখো ৷ ওর জন্যই আমার কষ্ট ৷ এই অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে ওকে আমি জড়াতে চাইনা ৷ তোমরা ভালো থেকো, আর তোমাদের থেকে দূরে থাকার যন্ত্রনাই হোক আমার জীবনের আনন্দ৷
ইতি.....
প্রগতি।
আর পড়তে পারে না রীতেশ, চোখদুটি ঝাপসা হয়ে এল ৷ সেই রাতে রীতেশ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সংযুক্তাকে পেলনা৷ এক নিমেষে মেয়েটি যেন উবে গেল !
বারো বছর পর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে এক অষ্টাদশী প্রগতির হাত ধরে সান্ধ্য পুজো দেখতে দেখতে বলল,দেখো পিসিমণি সব সন্ন্যাসিনী পুজো দিতে ব্যস্ত কিন্তু ইনি কেমন চুপচাপ বসে আছেন ৷ অষ্টাদশীর কথা শুনে সন্ন্যাসিনী ফিরে তাকালো। প্রগতি চমকে ওঠে,...বারো বছর আগের সেই চোখ, সেই মুখ, সিঁথিতে সিঁদুর, শুধু পোশাকটা ভিন্ন ৷ অস্ফুটে বলে ওঠে- সংযুক্তা বৌদি! সন্ন্যাসিনীও চমকে উঠে ৷ এই অচেনা অজানা জায়গায়, এমন পরিচিত কন্ঠে কে, তার হারানো সময় মনে করিয়ে দিল! হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে, প্রগতি শুধু ভাইঝিকে পুজো দেখাবি বোন? দাদাকে একটু পুজো দেখাবিনা ! সুগারে ধ্বস্ত, ক্লান্ত রীতেশ তখন রীতিমত হাঁপাচ্ছে ৷ সন্ন্যাসিনী দৌড়ে আসে,..একি রীতেশ, তোমার চেহারা একি হয়ে গেছে ! কথাগুলো বলতে বলতে সন্ন্যাসিনী তার হাত দুটি ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে ৷ সন্ধ্যার ম্লান আলোকে রীতেশ দেখল,.. বারো বছর আগের অভিমানিনী সংযুক্তা আজ সন্ন্যাসিনী বেশে তার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়েছে ৷ অষ্টাদশী প্রীতি বুঝল এ সন্ন্যাসিনী কেউ নয়, তারই হারিয়ে যাওয়া মা !....
চারিদিকে আলোর রোশনাই ৷ মৌমাছিদের কানাকানি ৷ এক বৈশাখে অস্তরাগের সানাই বেজে উঠলো ৷ সেদিন প্রীতির পিসিমণির বিয়ে ৷
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
--------০০---------
নাম- মোয়াল্লেম নাইয়া
গ্রাম+পোষ্ট- ইমামদ্দীপুর
থানা- ঢোলাহাট
জেলা- দক্ষিণ২৪ পরগণা
পিন-৭৪৩৩৯৯
মো: -৯৯৩৩১৯৫৭৫২
-------০-----