অণুগল্প।। হতবাক ।। সৌমিক ঘোষ
হতবাক
সৌমিক ঘোষ
লকডাউনে সরকারী ফরমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল চালানো বেশ চিন্তার । হেডমাস্টারমশাই মানববাবু ও হেডক্লার্ক অনাদিবাবু মাঝে মাঝে স্কুল খোলা রেখে ফুড প্যাকেট বিলি ব্যবস্থা , সারকুলার দেখা , বেতনের আবেদন জমা , লেশন-প্ল্যান , অনলাইন ক্লাসের তদারকী , প্রজেক্ট ও প্রশ্ন সরবরাহ , মাস্টারমশাই আর দিদিমণিদের স্কুলে আসাযাওয়া সবই দেখাশোনা করছিলেন । এরই মাঝে একদিন দুপুরে অনাদিবাবু বললেন – স্যার , নিউ অ্যাডমিশনটা খেয়াল রাখতে হবে । গত সেশনে ১০টা হয়েছিল । মানববাবু বলেন – হ্যাঁ , ঐ যেকোনো ক্লাসে যেকোনো সময়ে তো । এই কোভিড পরিস্থিতে ওটা নিয়ে ভাবনা নেই । আজ অ্যাকাউন্ট্স এর ফাইলটা দেখতে হবে । নিঃস্তব্ধতা ।শুধু ফ্যানের আওয়াজ ।
মানববাবু মনোযোগ দিয়ে মাথা নীচু করে মিড-ডে মিলের হিসাব দেখছিলেন । অনাদিবাবু
ডেলি-ভাউচার রেজিস্টার মেলাচ্ছিলেন ।
–'আসতে পারি' বলে একজন মহিলা অনুমতির তোয়াক্কা না করেই ঘরের মধ্যে ঢোকেন । সঙ্গে ১৪-১৫ বছরের ছেলে ।
অনাদিবাবু চমকে বলেন – আগে মাস্ক পরুন । তারপর অন্য কথা ।
মানববাবু বলেন – বসুন । কী দরকার ?
-নমস্কার। আমি কল্পনা রক্ষিত। ছেলেকে আপনার স্কুলে ভর্তি করাবো ।
– ভালো কথা। পরশু অফিসে আসবেন , ওরা সব বলে দেবে ।
অনাদিবাবু বলেন – টাকা আর আগের স্কুলের কাগজপত্র নিয়ে আসবেন ।
-আমার স্যার একটু আপনার সঙ্গে দরকার । ও নাইনে ভর্তি হতে চায় ।
-ঠিক আছে । হয়ে যাবে ।
-আসলে সেভেন অব্দি পড়ে আর স্কুলে যায়নি । এখন এই লকডাউনে মোবাইল , ট্যাব ,
কম্পিউটার , অনলাইন ক্লাস , বাড়িতে পরীক্ষা , সাজেশন , কোশ্চেন , পরামর্শ দেখে ওর খুব মাধ্যমিক দেবার শখ হয়েছে ।
সামনে বসা হেডক্লার্ক অনাদিবাবু বলেন – শখে পড়বে । তা ভালো ।
মানববাবু হতবাক । হাতের পেনটা নামিয়ে রাখেন ।
-----------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট
লেখকের নাম - সৌমিক ঘোষ
৬৭/জি ; জি.টি.রোড (পশ্চিম)শ্রীরাম পুর - ৭১২ ২০৩ , হুগলী .