সোমনাথ দত্ত
বিচিত্র জগতে সবার পেশা আলাদা আলাদা, কেউ হাজার টাকা মাইনে পায় আবার কেউ পঞ্চাশ টাকার মজুরি খাটে। এই বিষয়ে অদৃষ্টকে দোষারোপ করে কি লাভ, চেষ্টা আর কর্ম করার
মতো ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে স্বয়ং শিব ঠাকুরও কিছু করতে পারবে না। মানিকলাল মন্ডল আগে লটারির কারবার করতেন। তিনি ছিলেন খুবই অলস প্রকৃতির মানুষ, কোথায় আছে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না, তেমনি অলস প্রকৃতির মানুষের খাবার জোটে না। মানিকলালের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। কোনোক্রমে মেয়ের বিয়ে দিয়ে একদিন ঘুমোচ্ছিলেন, সেই সময় বড় ছেলে মৃন্ময় এসে তার বাবাকে বললো , ৫০০ টাকা দাও তো স্কুলে ভর্তির জন্য টাকা লাগবে। ৫০০ টাকার কথা শুনে মানিকলালের চোখ একদম চড়কগাছ। কোথায় পাব এত টাকা? বলিস কি ,এইতো কদিন আগেই কতগুলো টাকা খরচা করে তোর দিদিকে বিয়ে দিলাম। এখন টাকা পাব কোথায়? এমনিতেই সংসার ভালো করে চলে না। মানিক লালের ছোট ছেলে মন্টু, তার খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধি।সে বাড়ির বাইরে থেকে সব কথা শুনে বাবাকে বললো বাবা ! চলো আমার এই রুপোর হারটা বেঁচে একটা দোকান করি , তা দিয়ে যা রোজগার হবে দাদার পড়ার খরচ ও আমাদের সংসার দুই চালাতে পারব। মানিকলাল ও তার ছেলে আড়তদার মুকুল তালুকদার এর কাছে হার বন্ধক রেখে তরকারি নিয়ে এসে রাস্তার ধারে ব্যবসা শুরু করল। প্রথম দিন কেনাবেচা ভালোই হলো কথায় আছে নতুন বউ এর কদর বেশি। কিন্তু কিছুদিন পর দোকানা বোসে গেল প্রায় চলল না। এইসব দেখে মানিক লাল আরো ঘাবড়ে গেল। মানিকলাল সিদ্ধান্ত নিল যে সে আর দোকান করবে না । এঁকে তো মা মনসা তার পর আবার ধূনোর গন্ধ। কিন্তু মন্টু তার সিদ্ধান্তে অনড় রইল। সে মনে মনে বলল যতখন আমার শ্বাস-প্রশ্বাস চলবে ততক্ষণ আমি লড়বো। আর ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়(where there is a will,there is a way). তাই সে এবার বড় বাজারের রাস্তায় একটা দোকান খুলে বসলো। কিছুদিন দোকান না চললেও তারপর থেকে বেশ ভালো করেই চলতে শুরু করল, কোথায় আছে একবার না পারিলে দেখো শতবার। এই ভাবেই ধৈর্যের বসেই সে তার প্রতিকূল দেব ওকে মানিয়ে নিয়ে বড় হল। মানিকলাল সারাদিন শুয়ে শুয়ে দিন কাটাতে লাগলো এবং মন্টুর ওপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এসে পরল। হয়তো সংসারের চাপে তার পড়া হলো না কিন্তু সে বেঁচে থাকার রসদ ঠিক খুঁজে পেয়েছিল। সে এখন মস্ত আড়তদার। যে শহরে একদিন তাদের নিঃশ্বাস প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল ,সেই শহরে আজ তারা মাথা উঁচু করে বাঁচতে শুরু করল, সে ভাবল কষ্ট পাওয়াটা ভালো তাতে শিক্ষালাভ হয় বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু কষ্ট পেয়ে ভেঙে পড়লে সব শেষ। মানুষ তো কষ্ট করেই বড় হয় বিনা কষ্টে নয়( No pains no gains)।
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট
----------------------------
নাম-সোমনাথ দত্ত
গ্রাম+পোস্ট- বিবড়দা, থানার - তালডাংরা
জেলা- বাঁকুড়া, পিন- 722152
ফোন নম্বর- 7074355276