Click the image to explore all Offers

তিনটি পরমাণু গল্প।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী


 




১| কর্তব্য 

 ললিত পুততুণ্ড অবসর নেবার পরেও রোজ স্টেশনে যান। ট্রেনের কামরাগুলো সাফ করেন, ঝাড় দেন। চাকরি জীবনে কর্মনিষ্ঠার জন্য তার যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল। একদিন বিকেলে আর তিনি বাড়ি ফিরলেন না। শোনা গেল, ট্রেনের কামরা মুছতে মুছতে আর সময় পান না বাড়ি আসার। তারপর থেকে যে ট্রেনে তার ডিউটি ছিল, সেটা নাকি সবসময় চকচক করে! ললিতবাবুকে অবশ্য কেউ আর চোখে দেখে না.....।


২|  সীমানা 

 সীমান্ত এলাকার সব বাড়িগুলো ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে  গ্রামবাসীরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।  শুধু মানিকচাচা রয়ে গিয়েছেন। কিছুতেই তাকে নিয়ে যাওয়া যায়নি ভিটে থেকে। শত্রুরা ইতিমধ্যে দেশের সীমান্তে ঢুকে পড়ল। ততদিনে অবশ্য  ওরাও অনেকটাই ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। রসদে টান,পানীয় জল অবধি শেষ। এমতাবস্থায় মানিকচাচা নিজের বাড়ি থেকে খাবার ও জল যা ছিল, সব দিয়ে দিল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, শত্রুরাও গ্রামে কোন ক্ষয়ক্ষতি করল না। ততদিনে সেনাবাহিনী কাছাকাছি চলে আসার খবরে তারা ফিরে গেল।
মানিকচাচার প্রিয় গান বাজছে- 'ইয়ে পন্ছী নদীয়া.. পবন কে ঝোকে.....'।
ধীরে ধীরে গ্রামবাসীরাও গ্রামে ফিরতে শুরু করল।


৩| পরিকল্পনা 

 ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পর বাংলার গ্রামগুলো অল্প অল্প করে ঘর গোছাচ্ছে। কিছুটা হলেও ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে। এমন সময় পাশের গ্রাম থেকে কলেরার প্রাদুর্ভাবের খবর এল। নারায়ণপুরেও ভয়ের আবহ তৈরি হলো। জমিদার জগৎসিংহ সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসলেন। কবিরাজ, বদ্যি, ব্যবসায়ী সকলকে ডাকলেন। সর্বসম্মতভাবে ঠিক হলো সবাই জল পরিস্রুত করে খাবে। কিছু জরুরী ওষুধ সব পরিবারকে দেওয়া হলো। পানীয় জলের আধারগুলোতে বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করা হলো। এস্টেট থেকে সুলভে রসদ দেওয়া হলো সব পরিবারকে। কিছুদিন কেটে গেল ধীরে ধীরে। আশ্চর্য্য, কলেরা নারায়ণপুরে তেমন দাগ কাটতে পারল না। দু'তিনজনের হলেও অল্পতেই সেরে গেল।
--------------------------- 

Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.