অণুগল্প।।সিঁথির সিঁদুর ।। অসীম কুমার চট্টোপাধ্যায়
ছবিঋণ- ইন্টারনেট
সিঁথির সিঁদুর
অসীম কুমার চট্টোপাধ্যায়
আজ দোল পূর্ণিমা । বাড়ির সবাই মেতেছে রং খেলায় । রাধা কৃষ্ণের মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রথম আবীর মাখানো হয় তাদের পায়ে । এটাই এই বাড়ির সাবেকি রীতি । একশো বছরের অধিক সময় ধরে একই নিয়ম চলে আসছে । এরপর বাড়ির সবাই মিলে রং খেলা ।
বৈঠকখানা ঘরের ইজিচেয়ারে বসে খোলা জানলা দিয়ে দেখছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধ সোমদেব চক্রবর্তী । এবার সবাই আসবে তাকে প্রণাম করতে । বসন্তের দখিনা বাতাসে চোখে মুখে আবেগের পরশ । ঘুম এসে যায় । ঘুমিয়েই বোধ হয় পড়লেন । এমন সময় দেখেন সামনে দিতি । হাতে তার আবীরের ঠোঙা । একবার বাইরেটা ভালো করে দেখে দিতি ঢুকে পড়লো ঘরের ভেতরে ।
সোমদেবের একদম কাছে এসে বলল , এই নাও লাল আবীর । রাঙিয়ে দাও আমার সিঁথি ।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সোমদেব বলল , কেউ যদি দেখে ফেলে ?
এখানে কেউ নেই । সবাই গেছে রাধা কৃষ্ণের মন্দিরে । তাড়াতাড়ি কর ।
লাল আবীরে দিতির সিঁথি রাঙিয়ে দিল সোমদেব ।
ঠিক সেই মুহূর্তে এসে হাজির সোমদেবের বড় বৌদি । দিতির সিঁথিতে আবীর দেখে ভাবলো সিঁদুর ।ছুটে নেমে গেল নীচে । সবাই জেনে গেল দিতি আর সোমদেবের প্রেম কাহিনি । জেঠিমা লাঠি হাতে তেড়ে এলেন দিতিকে মারতে ।
সোমদেব হাতজোড় করে বলল , ওকে মেরো না । ওকে মেরো না ।
সোমদেবের ছেলের বউ জয়ন্তী শ্বশুরের জন্য গ্লাসে করে দুধ নিয়ে এসেছে । দেখে ঘুমের মধ্যে শ্বশুর হাত জোড় করে বলছে , " ওকে মেরো না , ওকে মেরো না ।
বৌমার ডাকে ঘুম ভেঙে গেল সোমদেবের । ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখে বৌমার হাতে দুধের গ্লাস । বৌমার পেছনের দেওয়ালে ঝোলানো তার স্বর্গবাসী স্ত্রী দিতির ফটো ।
---------------
ব্যারাকপুর
কলকাতা - ৭০০১২৩
যোগাযোগ : ৯০০৭১ ৩৬৩৮১