মনোময়ের স্বপ্ন ভঙ্গ
দীপঙ্কর সরকার
মনোময়ের বয়স একুশ । বি.এস. সি. পাশ । মেধাবী ছাত্র হিসেবে তার খ্যাতি ছিল । ছোটবেলায় তার বাবা মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে । তার মা এ বাড়ি সে বাড়ি কাজ করে মনোময়ের পড়াশোনা চালিয়ে যায় । সংসারের হাল ফেরাতে চাকরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় মনোময় । মামার টাকা না থাকলে এ বাজারে চাকরি জোটানো খুব মুশকিল । উৎকোচ দেওয়ারও সামর্থ নেই তার । তাই সাত পাঁচ না ভেবে হকারি করতে নামে ।
কিন্তু সেখানেও তীব্র প্রতিযোগিতা , এত লোক হকারি করে তা তার জানা ছিল না । তাও যা হোক
করে চলছিল । কিন্তু হঠাৎই কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউন শুরু হলে তার মাথায় যেন বজ্রাঘাত পড়ে । জমানো টাকাতেও পড়ে টান । কারো কাছে ধার চাইবে সে উপায় ও নেই । কেননা চেনা শোনা হকারদের ও সেই একই দশা । সাত মাস পর লক ভাউন একটু শিথিল হলে , ফের আশার আলো ঝিলিক দিতে থাকে তার চোখে মুখে । অন্য হকারদের মতো সেও জীবন যুদ্ধে নেমে পড়ে ।
এমনি করে যা হোক চলে যাচ্ছিল দুটি পেট , মা আর ছেলের । মনোময় স্বাথ্যবিধি মেনেই হকারি করছিল।মুখে মাস্ক পরে আর হাতে স্যানিটাইজার মেখে । কিন্তু কোনো কোনো যাত্রী মাস্কের পরোয়া না করায় তার খুব রাগ হত , ক্ষোভও জন্মাত । দু-এক জন যাত্রীকেসে বলেওছে ," আপনাদের আর কী , আপনাদের করোনা হলে , ভালো হাসপাতাল কিম্বা নার্সিং হোমে ভর্তি হয়ে যাবেন । মরব আমরা না খেয়ে , ফের লক ডাউন শুরু হলে কী করব আমরা , আমাদের তো ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ও নেই , ভালো হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দূরে থাকুক , সরকারি হাসপাতালে ও বেড পাব না । কাজেই রোগে মরা কিম্বা না খেতে পেয়ে মরা ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই ।"
ঠিক এর দু- চার দিন পর বিধানসভা ভোটের ফল বের হতে না হতেই Kovid 19- এর বাড়াবাড়িতে
আবার ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । এমতাবস্থায় কী করবে মনোময় ! দু-একটা টিউশনি , তার ও উপায় নেই , অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের বেরতে দিচ্ছে না । তা ছাড়া তাকে চেনেই বা কতজন ? সে যে এক মেধাবী ছাত্র ছিল এক সময় , তার প্রচারই বা করব কে ? অগত্যা ভগবানই ভরসা । তার মাকেও ছাড়িয়ে দিয়েছে গৃহকর্তারা , প্রাণের ভয় কার নেই । এমতাবস্থায় কপাল চাপড়ানো ছাড়া কিই বা
করতে পারে মনোময় !
--------------------------------------------
দীপঙ্কর সরকার
কাঁঠাল পুলি
(সিংহের হাটের কাছে)
চাকদহ
নদীয়া
৭৪১২২২
M 6297618158