ছবিঋণ- ইন্টারনেট
সর্ট রোমান্স
গৌতম কুমার গুপ্ত
মার্চে লকডাউনের ঘোষণার পর থেকেই রিটাযার্ড কর্মী সনেট হাজরা আর প্রার্তভ্রমণে বাইরে পার্কে যান না।ফ্ল্যাটের পাঁচতলার ছাদেই উঠে যান। ওখানে মিনিট চল্লিশেক জোরে জোরে হাঁটেন।দু চারটে হালকা ব্যায়াম করেন।এদিনও করছিলেন।
এমন সময় উঠে এলেন চারতলার দশ নম্বর ফ্ল্যাটের সুলেখা সান্যাল। ওই চারতলাতেই আট নম্বরে পাশাপাশি থাকেন সনেট হাজরার পরিবার।
বিধবা সুলেখাদেবী পেশায় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা।বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি।এখনও বেশ চেহারা ধরে রেখেছেন।সেজেগুজে স্টাইল করে থাকেনও।ব্যাংককর্মী স্বামী পরেশ সান্যাল বছর তিনেক আগে গত হয়েছেন।একমাত্র ছেলে ব্যাঙ্গালোরে কর্মরত,কগনিজ্যান্টের সফটওয়ের ইঞ্জিনিয়ার।
সনেট হাজরার ছেলে এম সি এর ফাইন্যাল ইয়ার।কলকাতায় পড়ে।ছেলে এখন হোস্টেলে।স্ত্রী কাবেরীকে নিয়ে তিনজনের সংসার।
সুলেখাদেবীর পরনে স্লিভলেস নাইটি।মাথায় দোপাট্টা জড়ানো।সনেটের চোখ চলে যায় সুলেখার ঈষৎ ফর্সা খোলা পিঠ আর পেলব বাহুর দিকে।একটা মিষ্টি হালকা ডিও'র গন্ধ ভেসে আসে সুলেখার শরীর খেকে ।সনেটের প্রৌঢ়মনে খুশির ঝলক।সুলেখার প্রতি একটা রোমান্স অনুভব করেন ক্ষণিকের জন্য।
সুলেখা সনেটকে জিগগেস্ করলেন----- আজকে আপনার এতো দেরী হোলো?
--- হ্যা্ঁ,আজ দেরীতে ঘুম ভেঙেছে।এখন রাতে ভাল ঘুম হচ্ছে না।
----- হ্যাঁ,ঠিকই আমারও তাই। রাত দেড়টার আগে ঘুম আসে না।
সুলেখা ছাদের কোনে একটা টবে তাঁরই লাগানো অপরাজিতা গাছটায় ফুল খুঁজছেন।তাঁর ফরসা আঙুলের নখে আকাশী রংয়ের নেলপালিশ ঝিকিয়ে উঠল সনেট হাজরার চোখে।
----নাহ্, একটাও ফুল ফোটে নি আজ। ফুলের মালা কিনতে হবে।
--- সুলেখা ম্যাডাম আপনি কাবেরীর গাছগুলো থেকে ফুল তুলে নিন।আমাদের অশৌচ চলছে।জ্যাঠতুতো দাদা গ্রামের বাড়িতে মরা গিয়েছেন গত পরশুদিন।পূজো আচ্চা করা যাবে না দশদিন।
----ও ঠিক আছে।
সুলেখা দেবী পটাপট ফুলগুলি তুলে আরো একবার সুগন্ধ ছড়িয়ে নিচে নেমে গেলেন।
পিছু পিছু গন্ধ নিতে নিতে সনেটও নামলেন।
ফ্ল্যাটে ঢুকে নিজেই চা বানিয়ে খেলেন।
ইতোমধ্যে কাবেরী উঠে গেছে।বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে জিগগেস করলো - ছাদে আজ ফুল
ফোটে নি?
হ্যাঁ,কিছু ফুটেছে দেখলাম।আমি---সনেট বলতে যাচ্ছিলেন কিছু।
---- আমি পাঁচতলার শেফালীদিকে বলেছি ফুলগুলো তুলে নিতে।বেচারী বয়স্ক মানুষ।বাইরে যান ফুল তুলতে।
-----তুমি বলেছো?
-----হ্যাঁ,আমাদের তো এখন পূজো হবে না।আমরা না থাকলে উনিই তো গাছগুলোকে জলটল দিয়ে
বাঁচিয়ে রাখেন।সুলেখা তো ধড়িবাজ ফেনটুসি,কোনদিনই কিছু করে না।ওকে তাই বলি নি।তাছাড়া আমাদের সন্দেহও করে। ওর ফুলগুলো কে তুলে নেয়।
কপাটে নক পড়ল।-- খুলতেই শেফালীদির মুখ।বলে উঠলেন,হ্যাঁ রে কাবেরী তোর গাছে তো একটাও ফুল নেই।ফোটে নি নাকি আজ?
---হবে হয় তো,প্রতিদিনই তো ফুল ফোটে না।সনেট ব্যালকনি থেকে বলে উঠলেন জোরে,যাতে সুলেখাও শুনতে পায়।
সনেট এবারে পুরোপুরি সুলেখা সান্যালের ফুল তোলার ব্যাপারটা কাবেরীর কাছে চেপে গেলেন। ভাগ্যিস শেফালীবুড়ির গলা শুনতে পায় নি কাবেরী।
সর্ট রোমান্সের কি হাল!
......................