Click the image to explore all Offers

গল্প।। আশিস ।। অঞ্জলি দে নন্দী, মম




 

রবিবার। থার্ড জুন। ২০০১ খ্রীষ্টাব্দ। দুপুর।
 
         শ্রী আশিস নন্দী। বাড়ী- গ্রাম- চৈতন্যবাটী। জেলা- হুগলী। রাজ্য- পশ্চিমবঙ্গ। দেশ- ভারত। বাবার নাম- শ্রী দেবী প্রসাদ নন্দী। মা- শ্রীমতী সবিতা নন্দী।
       আশিস স্কলারশিপ পেয়ে হুগলীর, উত্তপাড়ার প্যারিমোহন কলেজ থেকে বি. কম. পাস করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. কম. ও হাওড়া জেলার মধ্যে প্রথম হয়, আই. সি. ডব্লিউ. এ. - তে। বিনামূল্যে টিউশনি পড়িয়ে গ্রামের বহু ছাত্রকে গ্র্যাজুয়েট করেছিল। তাদের ব্যবসা শুরু করিয়ে দিয়েছিল, নিজের টাকা দিয়ে। ও বাড়ী বসে আলুর স্টক বিজনেস করে প্রচুর রোজগার করত। মায়ের পুরোনো বাড়ীটিকে নতুন করেও দিল। 
হঠাৎ সাইনাস হল। অপারেশন হল। এক বছর পরে নার্ভের রোগ হল। হাত কাঁপে। ঘাড় বেঁকে যায়। চিকিৎসা করিয়ে ওর বাবা ওকে স্বাভাবিক করল। মাও খুব সেবা করল। এক বছর পর ও আলু ব্যবসায় খুব লাভ করল। সব টাকা মায়ের নামে নমিনী করে ব্যাংকে জমা রাখলো। 
      ডাক্তার বলেছিল যে সারা জীবন নার্ভের ওষুধ খেতে হবে না হলেই অসুবিধা হবে। আশিস প্রায়ই মাকে বলত যে সে সারা জীবন ওষুধ খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না। এর থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো। মা ছেলেকে বোঝাত।
       ওই দিন দুপুরে স্নান করে এসে মাকে আশিস খেতে চাইলো। বাবা ও ছেলেকে সবিতা পাশাপাশি খেতে দিল। রবিবার, তাই বাবার অফিস ছুটি। সে ঘরে ঘুমোতে গেল। ছেলে অন্য এক ঘরে ঢুকলো। ভেতর থেকে খিল দিল। গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলল। 
      মা রোজই দুপুরে আশিস যখন ঘুমোয় দরজা খুলে ওকে দেখে আসে। মরবে মরবে মরবে করছে, কি জানি কখন ও কি অঘটন ঘটিয়ে বসে, কি আর করে মা। তাই চোখে চোখে রাখে ছেলেকে মা। সেদিনও গেল। রোজ তো দরজা খিল দেয় না। আজ কেন খিল? ঠেলল। খুলল না। ডাকলো। ধাক্কা দিল। তাও ...... বাবাকে ডাকল। ধাক্কা দিল। কোনও সারা নেই। পাড়ার সবাই ওদের ডাকাডাকি শুনে এলো। চেষ্টা করল। এরপরে দরজা ভেঙ্গে ঢুকে দেখলো। আশিস ঝুলছে।
          বাবা ও মা স্তব্ধ। না কান্না, না কথা। চুপ। সন্ধ্যায় বৃদ্ধ বাবা নিজের কাঁধে তুলে ছেলেকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে একমাত্র যুবক ছেলের মুখাগ্নি করল। বাড়ি ফিরল।
      বৃদ্ধা মা চুপ। বাবাও। 
           এর সাত বছর পর বাবা ক্যান্সার হয়ে মারা গেল। ছেলের মৃত্যুর দশ বছর পর মাও ক্যান্সারে মারা গেল।
      হয়তো ওরা তিনজন এখন আবার একসাথে হয়ে খুব সুখে শান্তিতে আছে......
    পাঠকগণ যদি পারেন তো ঐ বাড়িতে গিয়ে ওদের তিন জনের জন্য তিন ফোঁটা চোখের জল ফেলবেন........
----------------------------------


টি-১১৭, সুক্কর বাজার রোড।
উত্তমনগর
দিল্লী-১১০০৫৯




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.