শতশব্দে অণুগল্প।। কথাকাহিনি ইভেন্ট-২
কথাকাহিনি ইভেন্ট-২ : শতশব্দে অণুগল্প
।। কিছু কথা।।
পরীক্ষামূলক ভাবে শতশব্দে অণুগল্পের ইভেন্ট (প্রতিযোগিতা নয়) শুরু করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল অণুগল্পেরচর্চা হোক আরও বেশি করে। তাতে আপনাদের যে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি, সে জন্য আমরা আপ্লুত।
আমাদের
ধারনা ফুলের সৌন্দর্যের ও সৌরভের যেমন বিচার করা যায় না, যেমন পাখির মধুর
কলতানের মাপকাঠি নির্ণয় করার মতো শ্রবণযন্ত্র আমাদের নেই, ঠিক তেমনি মনের
অনাবিল আনন্দে উৎসারিত সাহিত্য কর্মের বিচার করা নিছক বোকামি। আর সেই
বোকামিটাই করতে গিয়ে বার বার মনে প্রশ্ন জাগছে কারো প্রতি অবিচার হল না
তো!
ভালোলাগা মন্দলাগা বিষয়টা আপেক্ষিক। তাই নিক্তি মাপে সঠিক নির্বাচন সম্ভব নয়।
পাঠক-পাঠিকা ও আমাদের সম্পাদকমণ্ডলীর ভালোলাগার ভিত্তিতে বেছে নেওয়া অণুগল্পগুলোই এখানে তিনটি পর্বে দেওয়া হল।
এখন থেকে প্রতি মাসে ইভেন্ট চলতে থাকুক এইভাবে।
বিশ্বনাথ প্রামানিক
সম্পাদক
কথাকাহিনি
পছন্দ - ১
পছন্দ - ২
পছন্দ - ৩
(পছন্দ - ১)
যৌতূক
ঈশিতা পাল পট্টনায়ক
রাক্ষসীতলা থেকে ডাইনে বেঁকলে, প্যালেস্তারা খসা দোতলা বাড়িটিই বলাই বাঁড়ুজ্যের। ভোর থেকে সেখানে নহবত বসেছে। আজ একমাত্র কন্যার বিবাহ।
প্রকান্ড অথচ কালক্ষেপে ম্রিয়মান বাড়িটাই কপর্দকহীন বাড়ুজ্যেদের জমিদারী র শেষ সাক্ষর। মেয়ের বিয়েতে আয়োজন, সবই করেছেপাত্রপক্ষ।জামাই সরকারি চাকুরে। পাত্রের পিতা মহাজনী কারবারে ফুলেফঁপে উঠেছেন। বিনাবাক্যে শ্যামলা মেয়েকে পাত্রস্হ করার খাসা সুযোগ বাঁড়ুজ্যে মশাই ছাড়েননি।
কত্তাগিন্নিতে ফিসফাস চলেছে, ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নার শব্দ চাপা থাকেনি! তবুও অস্বাভাবিক মনে হয় নি।
ইতিমধ্যেই নির্বঘ্নে চারহাত এক হয়েছে। ভোর হতে তখনও কিছুটা বাকি। চতুর্দিক নিস্তব্ধ। রাক্ষসীতলা দিয়ে পোটলা কাঁধে গিন্নির হাত ধরে ভিটেছেড়ে চললেন বাঁড়ুজ্যেমশাই। যতই হোক জামাই বাড়িতে তো আর রাত কাটানো চলে না!
( শব্দ সংখ্যা- ১০০)
ভালবাসার সিক্ততা
সংকলিতা তাম্বলী চন্দ্র
উফফ্ অসম্ভব জোরে বৃষ্টিটা নেমে গেলো! রুমালটা বের করে কোনরকমে মাথাটুকু বাঁচানোর চেষ্টা করে সমরেশ। বাসরাস্তা থেকে ওর বাড়ি পাক্কা পনেরো মিনিটের পথ। রাস্তার মাঝে একটা বন্ধ দোকানের শেড দেখতে পেয়ে ওর তলায় গিয়ে একটু দাঁড়ায় সে।
চোখটা একটু পরিষ্কার হতেই সমরেশ দেখতে পেলো উল্টোদিকে একটা ফুটপাথবাসী দম্পতি প্রবল চেষ্টা করছে দুদিকে প্লাস্টিক ধরে তাদের ছোট্ট সংসারটা আগলানোর। ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে পড়ে গেলো সকালে আসা কোর্টের চিঠিটার কথা! যেটুকু ভালোবাসা উল্টোদিকের পরিবারটায় আছে, তার সিকিভাগও যদি ওর আর রুমির মধ্যে থাকতো, তাহলে হয়তো...।
সমরেশ এবার রাস্তা পেরিয়ে হাত লাগায় ওদের ভালোবাসায় ভরা সংসারটাকে একটু গুছিয়ে দিতে!!
( ১০০)
স্মৃতির রজনীগন্ধা
অনামিকা মিত্র বাসু
আধো-অন্ধকার ঘরে টেবিল ল্যাম্পের আলোয় কিছুতেই স্টাডিজে মন বসাতে পারছে না মৃদুল, রজনীগন্ধার দুর্গন্ধটা দগ্ধে মারছে।
মুক্ত চিন্তাধারা পোষণের দাবি করেছিল রিমা।কিন্তু ফেসবুকের 'ম্যারেড' স্ট্যাটাসটা এডিট হয়েছিল মাত্র তিনশো-বত্রিশ দিনেই । হাউস-হাসবেন্ড মৃদুলকে সাথে নিয়ে সমাজ-সংসার-আত্মীয়-পরিজনের প্রতিকূলে পথ চলার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল বহুজাতিক সংস্থার রিমা। রূঢ় বাস্তবের ঘূণপোকা সম্পর্কটাকে অন্তঃসার শূন্য করে দিয়েছিল অচিরেই আর মনের মারণব্যধি দূরত্ব তৈরি করেছিল দুই মেরুর।
সামনের খোলা ছাদটায় রিমার লাগানো রজনীগন্ধার গাছগুলো মরছে না কিছুতেই। একসময়ের প্রিয় গন্ধটা আজকাল অসহ্য লাগে মৃদুলের, অপমানের পোড়া ঘা দগদগিয়ে ওঠে। ডব্লিউ-বি-সি-এস পরীক্ষার আঠাশ দিন বাকি … পাগলের মত খুরপি চালাচ্ছে মৃদুল, অন্ধকারেই উপড়ে ফেলবে স্মৃতির কন্দগুলো।
( শব্দসংখ্যা ৯৭ )
বঞ্চিত
দীপঙ্কর বেরা
- হাততালি দিতে জানো?
- জানি।- মাথা নাড়তে পারো?
- পারি।
- মেরুদণ্ড ব্যাঁকা আছে তো?
- আছে।
- পেছনে পেছনে মিছিলে হাঁটবে?
- হাঁটব।
- শ্লোগানের কোরাস গাইবে?
- গাইব।
- শুধু শ্রোতা হতে হবে। বোবা।
- হব।
- ঠিক আছে? আর কারো কিছু প্রশ্ন আছে?
কিছুজন একযোগে বলল - হ্যাঁ।
- এই কিছুজন বাদ দিয়ে বাদবাকি সবাই নিশ্চিন্তে বসবাস করো। সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাবে।
কিছুজন বলল - কত্তা আমরা?
- যাও বঞ্চিত হয়ে জীবন কাটাও।
( শব্দ সংখ্যা- ৭৯)
যাত্রী
শঙ্কর নাথ প্রামাণিক
এক্সপ্রেস ট্রেনের একটা কামরা। উঠেই চমকে গেলাম। সারা কামরা জুড়ে বেশ হৈ চৈ। একপ্রান্তে নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো এক বৃদ্ধ খাবি খাচ্ছে। আত্মীয় স্বজনরা চিৎকার করছে,কাঁদছে। অন্যপ্রান্তে ছোট্ট একটা জায়গা কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এক সন্তান সম্ভবার প্রসব বেদনা উঠেছে। কয়েকজন স্ত্রীলোক তাতেই ব্যস্ত হয়ে আছে। মাঝখানে আমি। গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে। হঠাৎ ঐদিকে কান্না চতুর্গুন বেড়ে উঠলো।
বৃদ্ধ মারা গেলো। এদিকে গুনগুন শব্দ হাসি মেশানো। ছেলে হয়েছে। ছোট্ট একটা স্টেশনে ট্রেনটা থামলো। বাইরে তাকালাম। একজন নেমে গেলো। একজন উঠলো। ট্রেনটা ছেড়ে দিলো।
(৮৪ টি শব্দ)
হ্যালুসিনেশন
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
ক'দিন থেকে মনটা আনচান করছে প্রমিতার। বারবার চেষ্টা করেও বুঝতে পারছে না। কে ওই ছেলেটা? আজ থেকে ছয় বছর আগেই গ্রাম থেকে এই শহরে এসেছে চাকরিসূত্রে। বিরাজের দুর্ঘটনাটা আজো চোখে ভাসে। সেই একই চেহারা, চোখমুখ। কথা বলার ধরণ ও গলার স্বর একইরকম। তাহলে কী....
তা কী করে সম্ভব! রাতে শুয়েও বারবার মুখটা চোখে ভাসছে। কাল অফিসে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞাসা করবে। পরদিন সাততাড়াতাড়ি অফিস গিয়ে খোঁজ করল। অবাক হল শুনে, এমন কেউ তো জয়েন করেনি! তাহলে কী........? মনের ভুল নাকি...!
বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। অফিসের মূল কাঁচের দরজাটা ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে। প্রমিতার অতীতের মতোই সব পিছিয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ।
(শব্দসংখ্যা-৯৯)
ব্যর্থ
সুতপা ব্যানার্জী (রায়)
হিমু বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় একবার চুলটা ঠিক করে নেয়। একটা অন্যশার্ট পরার ইচ্ছে ছিল কিন্তু তিতলি যদি সময়ের হেরফেরে আগে চলে যায়! তাহলে তো ওর সঙ্গে দেখাই হবে না। খুঁতখুঁতানি নিয়েই বাইকে স্টার্ট দিল। চাকরি পেয়েই নতুন বাইক কিনেছে। এতসব আয়োজন যার জন্য তাকে অবশ্য ওর ভালোবাসার কথাটা বলে উঠতে পারেনি। একদিন তিতলিকে পৌঁছে দেবার কথা বলেছিল, সেদিন না শোনায়, আর সাহসই হয়নি।
মনের আশা যেন কিছুতেই মিটতে চায় না। আজ তিতলির কলেজের উল্টোদিকের পার্কের সামনে অপেক্ষা করছে, হঠাৎ চমকে ওঠে। পার্কের বেঞ্চিতে হিমুর ছোটভাই বিভুর কাঁধে মাথা রেখে তিতলি বসে আছে। অপছন্দের শার্টটা হিমুর গায়ে আরো চেপে বসে।
(শব্দ সংখ্যা -১০০)
অনুতাপ
তপতী মণ্ডল
মিথ্যে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট লিখতে লিখতে শুভঙ্করবাবু কেমন যেন ধাতস্থ হয়ে গেছেন। বডি দেখলেই কী লিখতে হবে আর ভাবতে হয় না। কলমের ডগাটাকে ইচ্ছেমতো ঘোরালেই কেল্লা ফতে। অপেক্ষা শুধু একটা গ্রিন সিগন্যালের।
সেদিন রাতে স্ত্রীর হাত থেকে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা নিয়ে খুলে দেখে চমকে উঠলেন-- একই ভাষা, একই উদ্দেশ। একমাত্র ছেলেকে আর কোনোদিনও ফিরে পাবেন না আবার অভিযুক্ত ও সাজা পাবে না ভেবে মর্মাহত ও অনুতপ্ত তিনি।
( শব্দ সংখ্যা—৬৫)
ছেলেবেলার বিয়ে
মিনাক্ষী মন্ডল
অমলেশ বাবু স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নাতি ঋজুকে নিয়ে রোজ পার্কে যান। পার্কেই শিখাদেবীর সাথে অমলেশ বাবুর পরিচয়, তিনিও নাতনি নিয়ে আসেন । এখন একপ্রকার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে তাদের মধ্যে।
দুজনেই ওপার বাংলার মানুষ । পাঁচ-ছয় দিন শিখাদেবী পার্কে আসছেন না।
অমলেশবাবু শিখাদেবীর খোঁজে তাঁর বাড়ি যান।
শিখাদেবীর দাদা জানান তিনদিন আগে মারা গেছেন তিনি ।
এও বলেন, বোন আমার বাল্য বিবাহিতা।
ওপার বাংলার মিরপুর বাসি ভবতোষ মুখার্জির ছেলে অমলেশ মুখার্জির সাথে বিয়ে হয়েছিল। শশুরঘর করা তাঁর হয়নি।
অমলেশ মুখার্জির মাথার উপর যেন বাজ ভেঙে পড়ল, না বুঝে তার দ্বারা অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে, এরজন্য দায়ী বোধহয় তাদের ছেলেবেলার বিয়ে।
( শব্দ সংখ্যা ৯৯)
অসংক্রমণীয়
কার্তিক চন্দ্র পাল
---"একি! এতো আমার স্বামীর সোয়েটার! তুমি কোথায় পেলে?"
চেপে ধরতেই কেঁদে ফেলে থতমত লোকটা।
---"শ্মশানে। আকজন করুনাতে মইছিলো। উয়ার গায়ের থিক্যা ইটো খুলি লিইছিনু মা। জারের সুময়।"
"ক্ষ্যামা দ্যান মা" বলেই খোঁড়া ভিখারিটা বিধবা গিন্নির পা জড়িয়ে ধরে।
কথাটা শুনে হতভম্ব গিন্নিও যে কেন কেঁদে ফেললেন, তা অন্তর্যামীই জানেন।
(শব্দ সংখ্যা- ৪৯)
অপরাধী
নারায়নী কর্মকার
রুবি সন্ধ্যেবেলায় নিউটাউনের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে একটি মেয়ের ভয়ার্ত চীৎকার শুনতে পেল।
গাড়ির হেডলাইটের আলোয় দেখল, একটা ঝোপের মধ্যে তিনজন কালোকোট পরা লোক একটা লালগাউন পরা মেয়েকে টানাহ্যাঁচড়া করছে। মেয়েটি পালাতে চাইছে। মুখগুলো অস্পষ্ট।
প্রায় আধঘন্টা পর একটা গুলির শব্দ শুনতে পেল। কাছেই চায়ের দোকানটাও আজ যেন থমথমে। রুবি তাড়াতাড়ি কেয়ারটেকারকে গেট লাগিয়ে আলো নেভাতে বলল।
রাত একটায় রুবির মায়ের খুব কান্নাভেজা কন্ঠে ফোনে জানল যে ওর দাদার মেয়ে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরেনি। থানায় রিপোর্ট করাতে পুলিশ জানিয়েছে নিউটাউন থেকে লালগাউন পরা একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে।
রুবি কাঁপছে। আজ সে অপরাধী। কেন সে মেয়েটিকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করল না।
( শব্দসংখ্যা- একশত)
পসারিনী
দেবশ্রী সরকার বিশ্বাস
সারাদিন স্টেশনে ভিক্ষে করে সন্ধ্যেবেলায় বাসায় ফেরে পাখি, বয়সের ভারে ক্লান্ত। অথচ এককালে কি পসার ছিল পাখির! খদ্দেরের আনাগোনা এই ঘরে।
সন্ধ্যার পর বৃষ্টি নামলো। এক প্রৌঢ় দরজায় দাঁড়িয়ে, ভিজছে তার সর্বাঙ্গ। পাখি বলল 'ভেতরে আসুন'। লোডশেডিং, পাখি হাতড়ে হাতড়ে কোনমতে মোমবাতিটা জ্বালল। কিন্তু একি! এতো সেই চোখ! যে চোখের অতল সমুদ্রে সে ডুব দিয়েছিল! অন্ধকার রাতে চাঁদিপুর স্টেশনে দীর্ঘ অপেক্ষা তার জন্য.........
ভোররাতে কতকগুলি নরপশু মিলে পাখিকে... তার পরের কাহিনি তো ইতিহাস!
'আপনি কি আমায় চেনেন?' লোকটি বলল! একটা দলা-পাকানো কষ্ট পাখির বুক ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়! দমকা হাওয়ায় মোমবাতি নিভে যায়......
ঘরের মধ্যে তখন শুধুই জমাট অন্ধকার!
(শব্দ সংখ্যা-১০০)
---------------------- ০০০--------------------------
নবপ্রভাতের স্বাধীনতা সংখ্যার জন্য লেখা পাঠান। বিস্তারিত জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
(পছন্দ - ২)
ধারা
ভবানীশংকর চক্রবর্তী
মায়ের স্মার্ট ফোন নিয়ে পড়ার টেবিলে বসল অণ্বেষা। মা রান্নাঘরে। টের পেল না। পুটুর মা আজ কাজে আসেনি। বলেও যায়নি কাল কিছু। একটা ফোন করা দরকার। এঘর ওঘর খুঁজেও ফোন পেল না। পাশের ঘর থেকেই উঁচু গলায় জিগ্যেস করে, আমার ফোনটা কোথা অনু? তোমারটা নিয়ে বসেছি মা। ক্লাস আছে।
মা ততক্ষণে পড়ার ঘরে। অন্বেষার ইলেভেন। অনলাইন ক্লাসের জন্য তাকে দেওয়া হয়েছে দামি স্মার্ট ফোন।
তোর ফোন কোথা?
সেটা বন্ধুকে দিয়েচি।
কাকে ?
বেণুদাকে। ফিজিক্স অনার্স। ফার্স্ট ইয়ার। ওর মা হাটে সব্জি বেচে। ফোন নেই। অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না। পড়া ছেড়ে দেবে বলেছিল। তাই ---
মায়ের দু’চোখে আগুন। অন্বেষার দু’চোখ বেয়ে ধারা।
আশীর্বাদ
বিকাশ বর
মেট্রোগেটের সামনের চাতালে একজন বৃদ্ধ বসে। পরনে শতছিন্ন ময়লা ধুতি। রুগ্ন, শীর্ণ, জবুথবু। বাড়ানো হাতটা থর থর করে কাঁপছে। পাতা হাতে দশটাকার একটা নোট গুঁজে সুড়ঙ্গে সেঁধিয়ে গেলাম। পিছন থেকে শুনতে পেলাম, "তোমার ভাল হোক।"
সত্যি সত্যি, সেদিন আমার অনেকগুলো ভাল কাজ হল। আশা ছেড়ে দেওয়া একটা পাওনা টাকাও পেয়ে গেলাম।
পরদিন লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কুঞ্চিত চামড়া ঝুলে পড়েছে। হঠাৎ মনে হল লোকটা আমার খুব চেনা। জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কী সুবল দাদু?"
"চিনতে পারলি! শহরে এসে বাবু হয়ে গেলে সবাই তো সব ভুলে যায়!"
দু'চোখ ভিজে গেল। দাদু মায়ের ছোটকা। ছোটবেলায় মামারবাড়ি গেলে কত আদর করত। তার এই অবস্থা !
বললাম, "চলো আমার সঙ্গে।"
দু'দিকে মাথা নাড়ল দাদু। বলল, "আশীর্বাদ রইল।"
যা বোঝালেন
সুবীর ঘোষ
হারাধনবাবু পঞ্চায়েত প্রধান। একদিন সদরে উকিলবাবুর কাছে একটা নথি পৌঁছানোর কাজ এসে গেল। হারাধনবাবু চৌকিদার চতুর মুর্মুকে ডেকে বললেন---আজ একবার সদরে চলে যা। তারপর তাকে কোথায় কিভাবে গিয়ে কী বলতে হবে সব বুঝিয়ে দিলেন। চতুর সব শুনল কিন্তু টুঁ শব্দটি করল না। হারাধনবাবুর তখন মনে হল চতুর হয়তো ঠিকমতো বোঝেনি। তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন---হ্যাঁ রে চতুর, কী বললাম বুঝেছিস্?
---আজ্ঞে হঁ কর্তা।
----কি বুঝেছিস্?
----যা বুঝালেন।
(শব্দসংখ্যা- ....৬৮)
শেষ রাত
দেবিকা
আজকের রাতটা যেন অন্যরকম লাগছে। কি একটা অস্বস্তি হচ্ছে, সুতনুর । কাউকে ডাকবার প্রশ্নই নেই। প্রথমত এ বাড়িতে ও একাই থাকে, তাছাড়া ওর ডাকবার ক্ষমতাও নেই। বছরখানেক আগের সেরিব্রাল স্ট্রোক ওর কন্ঠস্বর কেড়ে নিয়ে শরীরের একদিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে ছেড়েছে। পাড়ার এক নিঃসন্তান জেঠিমা তার পুরোনো কাজের লোক বিমলাকে নিয়ে সুতনুকে যতটা পারেন দেখাশোনা করেন। কিন্তু আজ বড্ড কষ্ট হচ্ছে যে । হাওয়া এত কম মনে হচ্ছে কেন? দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে। সুতনুর শুকনো গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ যেন মায়ের স্পর্শ পায় সে। চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার। অন্ধকারের মধ্যেও কোন এক আলো ভরা সুড়ঙ্গ বেয়ে হারিয়ে যেতে থাকে সুতনু।
হায় ঈশ্বর
মোয়াল্লেম
নাইয়া
ঘন্টাখানেক আগেই আমার মৃত্যু হয়েছে৷ যে কখনো আমার খোঁজ নেয়নি, সেও দেখছি আমার মৃত্যুর খবর শুনে একেবারে ছুটে এসেছে৷ যে কোনো দিন পায়ের দিকে তাকায়নি সে আমার ছেড়ে যাওয়া জুতোর দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলছে৷ আলনায় রাখা পাজামা পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ বলছে, আহা গতকাল এই পাঞ্জাবি পরে মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়েছিল গো! বেঁচে থাকলে হয়তো হেসে ফেলতাম কিংবা পাশ ফিরে শুয়ে ওদের কথাগুলো এড়িয়ে যেতাম। কিন্তু সে সুযোগ তো আর নেই! এখন শুধু মনে হচ্ছে.. আচ্ছা, মানুষ মারা গেলে বুঝি তার মূল্য বেড়ে যায়? বেঁচে থাকতে যার খোঁজ কেউ নিল না, মৃত্যুর পর তার পায়ের জুতোর খোঁজ!.... হায় ঈশ্বর!
------------------------- ০০০--------------------------
( পছন্দ - ৩)
ভাঁড় থেকে ভার
রাজেশ্বরী শর্মা
বিনায়ক অনেকদিন ধরে মায়ের দেওয়া ভাঁড়ে টাকা জমাচ্ছে । তার মা বলেছে একটু একটু করে জমালে একদিন অনেক হবে ।সামনে রথের মেলা বিনায়ক খুব খুশি ভাঁড়টার বেশ আয়তন হয়েছে । রথের দিন ভাঁড় ভেঙে মনের মতো জিনিস কিনবে ঘরে রোজগেরে বলতে বিনায়কের মা ।
ক্রমশ দিন গড়িয়ে ঝপ করে রথের দিন এল কিন্তু সকাল থেকে বেলা হয়ে গেল, বিনায়ক জানতে পারে তার মায়ের বড়ো অ্যক্সিডেন্ট হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি। ভরা ভাঁড় ডাক্তার বাবুর হাতে দিয়ে বলে-" এটা আমার মায়ের দেওয়া ভাঁড়, আমার জমানো যতটুকু আনন্দ আছে তা দিয়ে আমার মা কে ঠিক করে দিন"।
বিনায়কের নিষ্পাপ চোখে দায়িত্বভার বোধের জ্বলন্ত আগুন লক্ষ্য করেন ডাক্তারবাবু।
বিধিলিপি
মিঠুন মুখার্জী
অনুপম অনুরাধাকে কথা দিয়েছিলেন, বিলেত থেকে ফিরে তারা বিয়ে করবেন। দশ বছরের প্রেম পরিণতি পাবে। সে কথা রাখেননি অনুপম। সাধারণ মেয়ে অনুরাধার পরিবর্তে বিয়ে করেছিলেন স্কুলটিচার কৃষ্ণকলিকে। সেই দুঃখে অনুরাধা আত্মহননের পথ বেছে নিলেও, অনিরুদ্ধের জন্য মরতে পারে নি সে। কথা দিয়েও "কেউ কথা রাখে না"।
অনুরাধার কাছে সব শুনে অনিরুদ্ধ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। অনিরুদ্ধ'এর বাবা-মার মধ্যস্থতায় দুজনের চার হাত এক হয়ে যায়। এদিকে কৃষ্ণকলি অনুপমের সংসারে মানিয়ে নিতে না পারায়, তাদের দুজনের বিয়ের ছ-মাসের মাথায় ডিভোর্স হয়ে যায়। অনেক দেরি হলেও, অনুপম নিজের ভুল বুঝতে পারেন। একদিন অনুরাধা অনুপমকে পত্র লিখে জানায় -- "আমি, ভালো আছি । তুমি ?"
জন্মদিন
সোমা চক্রবর্তী
-স্যার, ছ'টা বেজে গেছে। সকালেই বলে রেখেছিলাম, এবার আমাকে একটু ছেড়ে দিন, প্লিজ। আজ আমার মেয়ের জন্মদিন।
- ওঃ। আপনাদের মেয়েদের না! যান আজকে। কাল একঘন্টা আগে এসে কাজটা শেষ করবেন।
বৈদেহী বাড়ি ফিরে দেখল, তিন বছরের ঊন্মিষাকে মা সাজিয়ে দিয়েছে। সে দরজার দিকে তাকিয়ে 'মা মা' করছে। উপহারের খেলনাগুলোর দিকে মন নেই।
ঊন্মিষা রিমনকে বলল, জরুরী রুগীদের আগে ডেকে নিয়ে লাঞ্চের পরের নামগুলো অন্য কোনো ডাক্তারকে রিসিডিউল করে দিও।
রিমন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, কেন ম্যাম?
ঊন্মিষা লাজুক মুখে বলল, আজ আমি পারবো না। আজ আমার মায়ের জন্মদিন।
(শব্দসংখ্যা-৮৮)
এফোঁড়-ওফোঁড়
রীতা রায়
ছাতার সেলাইগুলো এখানে ওখানে খুলে গেছে। লকডাউন.. ছাতাওয়ালা পাওয়া দুষ্কর। বৃষ্টি বাদলার দিন.. ভাবলাম, নিজেই এফোঁড়-ওফোঁড় করে নিই। ছুঁচ হাতে নিয়ে দশ মিনিটের প্রচেষ্টায় সূতো গলালাম। মনে পড়লো, ওষুধ খাওয়া হয়নি। ছুঁচটি সযত্নে রেখে ওষুধ খেয়ে এসে ছুঁচের জায়গা গেলাম ভুলে। তন্ন তন্ন করে খুঁজতে কাটলো সময়। বিরক্তিতে ভরে উঠলো মন। চোখ হল ঝাঁপসা। ধ্যত্তরী, ছাতার মাথা। হারানো ছুঁচ তিনদিন বাদে উঠে এলো ঝাড়ুর ডগায়। মনে মনে হাসলাম। জীবনের ছেঁড়াগুলো এভাবেই সারাইয়ের অভাবে সাথে থেকে যাই চিরকাল। এফোঁড়-ওফোঁড় আর হয়ে ওঠে না। ছেঁড়া মনের ফাঁকে অনিয়মে ঢুকে পড়ে রোদেলা দুপুর। আবার কখনো বর্ষার রিমঝিম এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায় পড়ন্ত বিকেল।
(শব্দ সংখ্যা-১০০)
হাতছানি
সুদীপ দাশ
কমলা অপেক্ষায় ছিল, শর্মি খবর পাঠিয়েছিল হাড়োয়া থেকে সে ফিরে আসছে, ভগ্ন মনোরথ। অবুঝ মেয়ে। কেন যে এমন পাগলামো করে কে জানে!
একাত্তরের নির্মম স্মৃতির কুড়ি বছর পর বাম জমানায় বাবার পুরোনো কাজের জায়গায়, স্বপ্ন পূরণে শর্মি ছুটেছিল ওই গ্রামে, পার্টির ডাকে। কাকুরা, চাচারা শর্মিকে নিজের মেয়ের আদরই দিয়েছিল। কি যে হল, দুবছর ঘুরল---দল, উপদল, কোন্দল! ফিরে আসে সে। শর্মি আজো চোখ বুজলে দেখে,---একাত্তরে, লাল পতাকায় মুড়ে বাবার দেহ যেদিন ওদের আজাদগড়ের বাড়িতে এসেছিল, কি ভিড়, লোকারণ্য!! মায়ের বুক চাপড়ানো!!
বাবা নিখোঁজ ছিলেন কদিন। খন্ড খন্ড দেহ মিলেছিল ওই হাড়োয়া জুড়ে। কিন্তু মুন্ডটি আর পাওয়া যায়নি।
স্বর্গ কি হবে না কেনা? স্বপ্নের হাতছানি আজো!!
পরাজয়
মহুয়া বসু সিনহা
"বলহরি", শুনেই মেয়েটি একছুটে মায়ের কোলে। মায়ের হাতদুটো দিয়ে নিজের কানদুটো চেপে রাখত। কখনো ঝিঁঝিঁ ডাকা সন্ধ্যায় শ্মশানের চিতাগ্নি দেখে বাবার হাতটা বজ্রমুঠিতে ধরে পার হত সেই নিঃস্তব্ধ রাস্তা । বাবা বলতেন,"ভয় কি? মৃত্যু মানে স্বর্গারোহণ, এক অমৃতযাত্রা। " মেয়েটি চুপ করে শুনত।
কয়েকবছর পর মেয়েটি যেখানে দাঁড়িয়ে তা যেন মৃত্যুপুরী! চারিদিকে শবের সারি, মাঝখানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ফুসফুসে প্রাণ বায়ুটুকু ভরে নেবার চেষ্টারত কিছু মানুষ।
পালসরেট চেকের পর নিথর হাতটা বেডে রাখতে রাখতে সে ভাবে, "বাবা, আমি আর মৃত্যুকে ভয় পাই না। কিন্তু ঐ বাচ্চা মেয়েটিকে কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না যে ওর বাবার মৃত্যু হল এক অমৃতযাত্রা। আমি হেরে গেলাম।"
(শব্দ সংখ্যা –১০০)
RIP
সৌমিক ঘোষ
এই অতিমারীতে রিটায়ার্ড সুখময়বাবু প্রতিবেশীর প্রয়োজন সামাল দিতে সবসময় হাজির। নিজে যখন পজিটিভ হয়ে গৃহবন্দি হলেন, তখন সকলেই চালাকী করে এড়িয়ে গেল। সুস্থ হয়ে বাগান পরিচর্যায় মেতে উঠলেন। সঙ্গে বয়স্ক পল্টু মালি। এবার সাহায্যের সাড়া দেয়াটা বাছাই হল। নিজের কাজ ছাড়া আর বাড়ি থেকে বেড়োন না। সোর্সে বাড়ির সকলের আর পল্টুর ভ্যাকসিন । নিশ্চিন্ত । বারণ সত্ত্বেও জমি তৈরি , সার দেওয়া , মাটি চালা , ওষুধ স্প্রে সবই চলছিল । রাতের দিকে আবার শ্বাসকষ্ট । কাউন্সিলারের ফোনে হাসপাতালে ভর্তি । পাশে বাড়ির লোক ছাড়া আর কেউ নেই । নাক দিয়ে কালো তরল । অপারেশন । ডান চোখ ও গালের অংশ বাদ । তিনদিন পরে ফেসবুকের মাঝেরপাড়া গ্রুপে সুখময়বাবুর ছবিতে কমেন্ট – RIP
নীল-সাদা চিঠি
মানস দেব
'প্রেম' শব্দটাকে রোহিত কখনো ভালো চোখে দেখে নি। প্রতিটি প্রেমের মধ্যে ও পোড়া-পোড়া গন্ধ পায়। তাই বলে যে, ওর জীবনে প্রেম আসেনি তা নয়। একটা নির্দিষ্ট বয়সে প্রত্যেকের জীবনে যে ভাবে প্রেম আসে রোহিতের জীবনেও তাই এসেছিল। কিন্তু সে তখন মেতে ছিল সৃষ্টির খেয়ালে, নতুনের আনন্দে। হঠাৎ একদিন নবোনিতাকে একটি খামের মধ্যে একটি সাদা কাগজ পাঠিয়ে বলেছিলো-"তোর মনের মধ্যে যা আসে তাই লিখেনিস।" সাদা রঙের মধ্যে তো সকল রং-এর সমাহার। এর বেশ কিছু দিন পর নবোনিতার একটি চিঠি আসে রোহিতের কাছে। তার মধ্যে ছিল নীল রঙের একটি কাগজ। তাতেও কিছু লেখা ছিল না।
কিন্তু রোহিতের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় নি যে, নবোনিতার জীবনে রোহিতের আর কোন জায়গা নেই। নীল তো মৃত্যুর প্রতীক।
মৃত্যু বার্ষিকী
অঞ্জনা দেবরায়
তুলিকা আমার খুব ভালো বন্ধু। বি.এ পাশ করার পর তুলিকাকে বিয়ে দেবার জন্য বাড়ি থেকে সম্বন্ধ দেখা শুরু হল । যারা তুলিকাকে দেখতে আসে তারা সবাই একটাই কথা বলে “সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু মেয়ের গায়ের রংটা বড্ড কালো –“ এরকম করে প্রায় পনেরো বার তুলিকার সম্বন্ধগুলো ভাঙল । তুলিকার চোখের লুকানো জল আমার চোখে ধরা পড়েছিল ।
আজ রাতে জানি না হঠাৎ শুনতে পাচ্ছিলাম তুলিকা যেন বলছে “ তিন্নি, আমাকে দেখ না , কত ফর্সা ও সুন্দর দেখতে আমি…”
ঘুম ভেঙে উঠে বসলাম – মনে পড়ে গেল আজ আমার বন্ধু তুলিকার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী ।
শব্দসংখ্যা—৮৭
আঁখি-পল্লব'
- পর্ণা বসু
ঘরময় পায়চারী চলছে, রাগে যেন ভস্ম হয়ে যাবে সবাই । ঠাকুমা আর দাদু মা-বাপ মরা সদ্য বিবাহিত আদরের নাতনির অগ্নিশর্মা মূর্তি দেখে তটস্থ। জানেন, রাগ কমলে নিজে বলবে।
অপরাধী মুখ করে ঘরে ঢোকে পল্লব। তাকে দেখেই রাগ আর পায়চারী যেন চারগুন বেড়ে গেল। পল্লব বললো,"দাদু আপনিই বলুন, এই ছোট্ট ঘটনায় কেউ এতো রাগ করে চলে আসে, মা চিন্তা করছে।"
দাদু বললেন," আমরা অথৈ জলে, জল থেকে তোলো দাদুভাই"
এবার বললো আঁখি, "দাদু, রোজ রাতে পল্লব আমার পাশবালিশটা নিয়ে জড়িয়ে নাক ডেকে ঘুমায়। আমি কোনদিন আমার পাশবালিশ এর ভাগাভাগি সহ্য করতে পারি না,ওটা শুধু আমার।"
দাদু -ঠাম্মার হাসিতে ঘর ভরে উঠল।(শব্দসংখ্যা-১০০)
-----------------------------০০০---------------------
Best Selling Items