ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
কতই বা বয়স হবে মেয়েটার সাতাশ কি আঠাশ।
স্বামীর চক্ষুশূল মেয়েটা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এসেছিলো বাপের ভিটাতে।
মেয়ের ফিরে আসার চেয়ে বোধ করি যমের কাছে যাওয়াই ভালো...তাই ওকে স্বাগত জানালো একটা শব্দ," ঘর পোড়ানি।"
কিছু দিন চুপ থাকার পর ঘর পোড়ানির মোটা চামড়াতেও ফোসকা পরলো। কাজের সন্ধানে বার হলো মেয়েটা..আর মা বাপের ঘাড়ে বসে দুই সন্তান নিয়ে নয়,নিজের কিছু করতে হবে।
যদিও কাজ পেতে দেরি হলো না মোটেই, ওর মা নিজের কাজ ছেড়ে ওকে সেই কাজে বহাল করলো।যতই পেটের মেয়ে হোক তার থেকে অনেক বেশি দায় বাড়তি তিনটে পেট চালানো।
কাজের বাড়িতে অল্প দিনেই সবার মন জয় করে নিলো মেয়েটা।নিখুঁত কাজ।কাকিমা তাই ভালোবেসে নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করে ওকে ভালো রাখতে।এরই মধ্যে দুজনের বেশ সখ্যতা তৈরি হয়েছে।
একদিন কথা প্রসঙ্গে কাকিমা ঘর পোড়ানিকে জিজ্ঞেস করে তুই কেন চেষ্টা করছিস না যাতে আইনের সাহায্য নিয়ে ফিরে যেতে পারিস।ঘর পোড়ানির চোখ জলে ভরে ওঠে। ও বলে "না কাকিমা আমি ওর শেষ দেখবো " চোখের জলের আড়ালে ওর চোখ যেন অচেনা কোনো ভাষা বলে ওঠে.. ওর চোখে সংগ্রামী দৃঢ়তা,আর ছিলো ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা না কি অবহেলা সহ্য করার ব্যাথা।ঘর পোড়ানির শেষ কথা". কাকিমা ও যে বললো আমার সাথে ঘর করবে না " আমি যে নিজের কানে শুনলাম...আর কি করে??? কথা শেষ হয় না ওর...না প্রকাশিত অভিমান হঠাৎ যেন উষ্ণ স্পর্শে জল হয়ে নামতে থাকে ওর দু' গাল বেয়ে।
কাকিমা যেন ওকে পরীক্ষা করতেই বলে তবে তোকে আর একটা বিয়ে দি..শান্ত সেই মেয়ে টার চোখ যেন জ্বলে ওঠে হাজার সূর্য তেজে, আর শান্ত গলায় বলে" আর নয়"দুটো শব্দ বুঝিয়ে দিল...এক জীবনের এক ভালোবাসা কে...সেই ঘর পোড়ানি সাতাশ কি আঠাশের মেয়ে টা.........
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
---------------------------