মো নজরুল ইসলাম
আমার ছোট শালাবাবু। আর ছোট নেই। ব্যবসা, অর্থ,সামাজিক পরিচিতি সবই যথার্থ, রাজনৈতিক পরিমন্ডলেও বেশ নামডাক। সবাই আরিফ নামে চেনে। কিন্তু আমার শালাবাবু এখনও বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি। বাপ মা চিন্তিত ছেলেটার বিয়ে নিয়ে। একটা মানান সই পাত্রী দরকার।
এরই মাঝে হঠাৎ একদিন বিকেলে শালাবাবু হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে হাজির। আমাকে একটা ছবি দিয়ে ভাল করে দেখে কিছু বলতে বললো।
আমি যথারীতি দেখলাম।আর বললাম, জনাব শালাবাবু এ মেয়েকে আমি বিয়ে করলে তোমার বোন কি মেনে নেবে।কথা শুনে শালা বাবুর চক্ষু চড়কগাছ। রেগে চোখ মোটা হয়ে গেছে। আরে আপনার পছন্দ কিনা তাই বলেন। আপনার জন্য না আমার জন্য।
তাই বলো, আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম,তুমি আমার জন্য সুন্দরী ঠিক করেছ। তাছাড়া তোমার বোনের যা হামকি ধামকি তাতে বিয়ে একটা করাই দরকার।
তা নাই হলো,তা মহারানীর ঠিকুজি কি,নাম ,গোত্র, হিন্দু না মুসলমান, বৌদ্ধ না খ্রীষ্টান। কত দিনের পরিচয়।কি ভাবে যোগাযোগ।
শালাবাবু ঝটপট বলতে শুরু করে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এর কাছেই গাড়াগঞ্জ লক্ষীপুর গ্রাম। ছয় বোন এই ছোট। বাকী সব বিবাহিত। আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান মোটামুটি ভালোই। কলেজে পড়ছে। লেখা পড়াই ভালো।
গায়ের রং দুধে আলতা। ফিগার নায়িকার কাছাকাছি। ওদের এক আত্মীয় আমার বন্ধু ,তার মাধ্যমেই মোবাইলে পরিচয়। তারপর চাক্ষুষ সাক্ষাৎ।ডাক নাম ইতি।
শালাবাবুর সব কথা শুনে বললাম,এত গাড়াগঞ্জ এর গাড়ল। পোষ মানবে না। তবে চোখে না দেখে শুনা কথায় বিশ্বাস হবে না। তোমার আপা কি মত দেয় শুনি।নাকচ হলে মালা আমি নিজেই পরিয়ে দেব। তাতে করে তোমার আপার সেবা যত্ন হবে,সেই সাথে কষ্ট টাও লাঘব হবে।
আমার ফটো দেখে পছন্দ হয়েছে।তুমি না করতে পারলে, আমি ঠিকই প্রস্তাব পাঠাবো।
যথারীতি অভিভাবক মহল বরাবর সবিস্তার বর্ননা করা হলো। কিন্তু শৈলকুপা অঞ্চলের কথা শুনে শালাবাবুর বাবা নাকচ করে দিলেন।
নাকচ হওয়ায় বাবুর মন খারাপ। করবো না ,তবে শর্ত মোটরবাইক্ কিনে দিতে হবে - পালসার।
কি আর করা মাথা থেকে বিয়ের ভূত নামানোর জন্য, অগত্য মোটর বাইক কেনা হলো।
মোটর বাইক পেয়ে শালাবাবু খুশি হলেন বটে, কিন্তু মাঝে মধ্যে সকালে বাইক নিয়ে বের হলে, ফেরেন গভীর রাতে। এতকি কাজ, অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন।
অনুসন্ধানের পর জানা গেল ,শালাবাবু ৯০/১০০ কি মি পথ বাইক চালিয়ে ইতির দর্শনে যান।বিয়ের ভূতটা মাথাতে যুতসই ভাবেই চেপে গেল। ইতি-কে ছাড়া কারো গলে মালা দেয়া তার পক্ষে সম্ভব না। নায়িকা ইতিও নাকি তাকে না পেলে, দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে। সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। এ যূগের লাইলী মজনু।
অগত্য শালাবাবুর বাড়ীর পরামর্শে দুলাভাই কে ছুটতে হলো, নায়িকা ইতিকে স্বচক্ষে দেখতে ও পরিবারের সাথে আলাপ করার জন্য।
দেখা সাক্ষাৎ হলো,পরিবারের সাথে কথা বার্তা হলো। নায়িকা ইতি তৎক্ষণাৎ আম গাছে উঠে আম পেড়ে, নতুন অতিথিদের আপ্যায়ন করালেন। আম গাছটা বাড়ীর উঠানেই। মেয়ের আম গাছে উঠাতে,মেয়ের বাবা বললেন, মেয়েটা আমার কেমন করে যেন গাছে উঠা রপ্ত করে ফেলেছে।ও আছে বলেই যখন তখন গাছপাকা আম খেতে পাই।
মনে মনে বললাম,তাতো ঠিকই মেয়ের হাতের আম, আসলেই মিষ্টি। যার গলায় ঝুলবে সে ভাল করে খেলেই হবে।
পাত্রী তো পছন্দ হলো, কিন্তু গাছুড়ে ... পোষ মানবে কিনা। পরে আবার আমার কাঁধে ঝুলে পড়ে কিনা।
অভিভাবক মহলকে বিস্তারিত জানানো পর,নিমরাজির মাঝেই বাকি কাজ শেষ হলো। যথারীতি বিয়ে হলো, ইতি এখন একটা গাছেই ঝূলে আছে।
শালাবাবু বাইক চলিয়ে প্রায় ১০০কিমি পড়ি দিয়ে শুধুই কি দর্শনে যেত নাকি সেলামি ও পেত।ইতি আজো দুলা ভাইকে এই ছোট্ট কথাটার উত্তর দেইনি। হয়ত কোন দিনও এর জবাব পাওয়া যাবে না।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
-----------------------------------------------
দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, বাঙলাদেশ।