ইতিহাসের আয়নায়
সুদীপ ঘোষাল
আমরা চারবন্ধু গরমের ছুটিতে ঘুরতে যাব ঠিক করলাম। আমি, রাজু, শ্যামলী আর সোমা। চারজনই আমরা ইতিহাসের ছাত্র। এক কলেজে পড়ি। সোমা বলল, সাঁচি স্তুপ দেখে আসি চল।
শ্যামলী বলল, মধ্যপ্রদেশের রাজধানী শহর ভূপাল থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাঁচির বিদিশাগিরিতে অবস্থিত বৌদ্ধ স্তূপ। সম্রাট অশোক এই স্তূপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
রাজু বলল, হ্যাঁ ইতিহাসে পাওয়া যায় এইসব কাহিনী।
অশোককের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরও কলিঙ্গবাসী পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষ নরনারী প্রাণ হারায় এবং প্রায় দেড়লক্ষ নরনারী বন্দী হয়। এই যুদ্ধের এই বীভৎসতা সম্রাট অশোককে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। পরে তিনি যুদ্ধের পথ ত্যাগ অহিংসার পথে সাম্রাজ্য পরিচালনার নীতি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ক্রমে ক্রমে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি বিশেষভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন এবং উপগুপ্ত নামক এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে দীক্ষা নিয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর গুরু উপগুপ্তকে সাথে নিয়ে কপিলাবস্তু, লুম্বিনী, কুশীনগর, বুদ্ধগয়া-সহ নানা স্থানে ভ্রমণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেন। এই সময় তিনি নানা স্থানে স্তূপ, স্তম্ভ এবং পাহাড়ের গায়ে বুদ্ধের বাণী লিপিবদ্ধ করে রাখার ব্যবস্থা করেন। এই সূত্রে তিনি বর্তমান সাঁচি থেকে দশ কি.মি দূরে বিদিশাগিরি নামক পাহাড়ে একটি বৌদ্ধ স্তূপ তৈরি করেছিলেন।
আমি জানি, সম্রাট অশোকের তৈরি মূল স্তূপটির ব্যাস প্রায় ৩৬.৬ মিটার ও উচ্চতা প্রায় ১৬.৫ মিটার। কথিত আছে অশোকের কন্যা সঙ্ঘমিত্রা ও পুত্র মহেন্দ্র শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্ম প্রচারে যাওয়ার আগে, সাঁচিতে এই স্তূপ পরিদর্শন করেছিলেন।
বিদিশাগিরির শীর্ষে রয়েছে সম্রাট অশোকের তৈরি মহাস্তূপ। একে এক নম্বর স্তূপ বলা হয়। মনে করা হয় এই এক নম্বর স্তূপের মধ্যে বুদ্ধদেবের ভস্ম আছে। উল্লেখ্য সম্রাট অশোক যে স্তূপ গড়েছিলেন তা এখনকার স্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে। একশ বছর পরে সেই স্তূপের উপর আরো বড় স্তূপ তৈরি হয়। তা ঘিরে তৈরি হয়েছিল পাথরের অলিন্দ। কালক্রমে সে অলিন্দের পাথর অনেকটা ক্ষয়ে গিয়েছিল। এই কারণে পরে স্তূপের পাশে গোল বারান্দার মতন প্রদক্ষিণ পথ তৈরি হয়। এরও প্রায় একশ বছর পর স্তূপের চারদিকে চারটি তোরণ নির্মাণ হয়। এক নম্বর স্তূপের উত্তরমুখী তোরণ এখনও অক্ষত। এতে আছে কাঠ বা হাতির দাঁতের সূক্ষ্ম কারু কাজ। তোরণের স্তম্ভ ও ফলকে বৌদ্ধ জাতকের গল্প খোদাই করা আছে। বুদ্ধের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু দৃশ্য এখানে দেখা যায়। তবে তোরণ বা স্তম্ভে বুদ্ধের কোন মূর্তি নেই। কখনও গাছ, কখনও ধর্মচক্র, কখনও পদচিহ্ন-এসব প্রতীক দিয়ে বুদ্ধের উপস্থিতি বোঝান হয়েছে। এর কারণ সম্ভবত এই যে সে সময় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ভিতর বুদ্ধমূর্তি পূজোর নিয়ম ছিল না।
আমরা হাওড়া এসে ট্রেনে চাপলাম। তারপর যখন ভূপাল এলাম তখন রাত্রি। আগে থেকে হলিডে হোম বুক করা ছিল। এখান থেকেই আমরা সাইড সিন ঘুরে কভার করব। প্রয়োজনে ফিরে আসব এখানেই। রাজু বলল, এখান থেকে মাত্র ছেচল্লিশ কিলোমিটার দূরে বিদিশাগিরি। সেখানে ভগবান বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বৌদ্ধ স্তূপ সাঁচিতে অবস্থিত। মালপত্তর রেখে রেডিমেড খাবার খেয়ে আমরা বিশ্রাম নিলাম। আমি আসলে সোমার প্রেমে আবদ্ধ আর রাজু, শ্যামলীর প্রেমে হাবুডুবু খায়। পড়াশুনা শেষ হলে চাকরি পেয়ে বা ব্যবসা করে আমরা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হব একথা আমাদের দুই পরিবারই জানে। আমরা শুয়ে পড়লাম রাত একটার সময়।
তারপর সকালে উঠে বাস আসার অপেক্ষা। বাস আমাদের নিয়ে গেল আজ সাঁচী।
আমাদের গাইড বলছেন, বাবু ইতিহাসের কথা একটু মন দিয়ে শুনে লিবেন। তাহলে মজা পাবেন। সোমা বলল, লোকটা তো ভালো বাংলা বলে। আমি বললাম, হ্যাঁ।গাইড বলতে শুরু করলেন, মৌর্য বংশের অবসানের পর, ব্রাহ্মণরা বেশ কয়েকবার সাঁচির স্তূপ আক্রমণ করে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। এই সময় অশোকের স্তূপ ছাড়াও সাঁচির সমস্ত সৌধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও স্থানীয় গৃহী বৌদ্ধরা নতুন উদ্যমে কিছুটা মেরামত শুরু করেন। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক ধাক্কা সাঁচির উপরেও পরে। ফলে নতুন উদ্যমে মঠ স্তম্ভ নির্মাণের কাজেও ভাঁটা পড়ে। এবং শেষে একেবারে থেমে যায়। গুপ্তযুগে দেশে কিছু শান্তি ও সমৃদ্ধি এলে সাঁচিতে কারুশিল্প ও স্থাপত্যের কাজ নতুন ভাবে শুরু হয়। এ সময়ই মূর্তির দেখা মেলে। এসময়ে সতেরো নম্বর মন্দিরটি নির্মিত হয়। এভাবে দুশো বছর কাজ চলতে থাকে। তারপর হুনেরা ভারত আক্রমণ করে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ফলে এই স্তূপের নিয়মিত সংস্কার বন্ধ হয়ে যায়।৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজা হর্ষবর্ধনের শাসনকালে বৌদ্ধধর্ম বিস্তার লাভ করে। এই সময় সাঁচিতে বেশ কিছু মঠ ও মন্দির বানানো হয়। এই ধারা প্রায় ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরপর হিন্দু আধিপত্যের কারণে সাঁচিতে বৌদ্ধ-ধর্মাবলম্বীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ক্রমে স্তূপে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ফলক স্থাপিত হতে থাকে। একসময় সাঁচি বৌদ্ধশূন্য এলাকায় পরিণত হয়। উনবিংশ শতাব্দীর দিকে সাঁচির বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকা একটি পরিত্যাক্ত এলাকায় পরিণত হয়। কালক্রমে স্তূপটি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়।১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ জেনারেল টেলার সাঁচির ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করেন। এই সময় গুপ্তধনের আশায় লোকজন শেষবারের মতো স্তূপটির ক্ষতি করে। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাপটেন জনসন এক নম্বর স্তূপটি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলে। ফলে স্তূপের গায়ে প্রকাণ্ড ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং পশ্চিমের তোরণ ভেঙ্গে পড়ে। একইভাবে দু নম্বর স্তূপও ধ্বংস হয়। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে আবার দুই ও তিন নম্বর স্তূপ খোঁড়া হয়। এক নম্বর স্তূপের মধ্যে রত্নরাজির সন্ধানে লোহার রড ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এই সময় স্থানীয় এক হিন্দু জমিদার অশোক স্তম্ভটি তিন টুকরো করে বাড়ি নিয়ে যান।১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের পরে স্তূপটি সংরক্ষণের চেষ্টা করেন মেজর কোল। পরের তিন বছর তিনি এই উদ্যম সচল রাখেন। এর বেশ পরে পরে ভারতের আর্কিওলজিকাল সার্ভের ডিরেক্টর এ কাজে এগিয়ে আসেন। মেজর কোল বিদিশাগিরির জঙ্গল কেটে গোটা পাহাড় পরিষ্কার করান। এক নম্বর স্তূপের ফাটল মেরামত করেন। পশ্চিম ও দক্ষিণদিকের তোরণগুলি তুলে যথাস্থানে স্থাপন করেন। এরপর বাকি কাজ করেন স্যার জন মার্শাল। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এই স্তূপের যে সংস্কার করা হয়, বর্তমানে তাই পুরাকীর্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
আমরা বাসের সকলে হোটেলে খাওয়াদাওয়া সেরে নিলাম। এখানে দেওয়ালের কারুকাজ দেখলেই সমগ্র ইতিহাস দেখা যায় চোখে। সোমা বলল মহামতি জীবকের কথা দেওয়ালে খচিত আছে।আমরা পড়েছি, জীবক অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ভেষজ বিজ্ঞান অধ্যায় পর চিকিৎসক হিসেবে বিম্বিসারের সভায় যোগদান করেন এবং ভগবান বুদ্ধের শিষ্য গ্রহণ করেন। কিন্তু অজাতশত্রু রাজা হওয়ার পরে বৌদ্ধবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন।
রাজু পুরোনো অট্টালিকায় দাঁড়িয়ে বলল, আমি অজাতশত্রুর অভিনয় করছি আর তুই হয়ে যা মহামতি জীবক। আমি বললাম, তাই হোক। তারপর আমি বললাম, আজ রাজসভায় অজাতশত্রু কথা বলছেন, রাজু শুরু করল অভিনয়। সেনাপতি সোমা আর রাজপুরোহিত শ্যামলী। সবাই এক্সপার্ট। কলেজের সোশালে ওরা নাটকে অভিনয় করে।
- শোন হে পারিষদ বর্গ। আমার রাজ্যে বৌদ্ধগান বন্ধ করতে হবে। সেনাপতি কোথায়?
- আজ্ঞে আমি, হাজির। আদেশ করুন।
- আমার রাজ্যে আমিই এক এবং একক। আর কেউ ধর্ম প্রচার করে বড় হবে এ আমি কিছুতেই সহ্য করব না।
- তাই হবে রাজন। আজ থেকে আমি দেখব। আপনার আদেশ শিরোধার্য।
- না খুব কড়াকড়ি করার প্রয়োজন নেই। রাজার আদেশ তারা যেন পালন করেন এবং কর ঠিকমত দেয় তার ব্যবস্থা করুন। শুধু ধর্ম নিয়ে পেট ভরে না।
রাজা অজাতশত্রু আদেশ দিলেন। তারপরও তিনি ভাবছেন বুদ্ধদেবকে সকলে ভগবান বলে মানে। কেন? তার মধ্যে কি এমন আছে যে রাজার থেকেও সাধু বড় হয়ে যায়।
তিনি রাজপুরোহিতের কাছে যান। রাজপুরোহিত বলেন, বুদ্ধদেব বাল্যকালে রাজপাট ছেড়ে কঠোর সাধনায় ব্রতী হয়েছেন। দীর্ঘ সময় সাধনা করে তিনি সিদ্ধিলাভ করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষ নন। তিনি তাঁর ভক্তদের কাছে ভগবানস্বরূপ।
রাজা বলেন, হ্যাঁ শুনেছি। রাজপুত্র বাইরে বেরিয়েছিলেন চারদিন। চারদিন তিনি মানুষের যৌবন, জ্বরা, ব্যাধি ও মৃত্যু দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে মানুষের যদি শেষ পরিণতি মৃত্যু হয়, তাহলে এই যে সংসার জীবন,এর কোন অর্থ হয় না ।
রাজপুরোহিত বললেন, হ্যাঁ ঠিক বলেছেন তারপর তিনি এক গভীর রাতে রাজ্যপাট ছেড়ে মাকে ছেড়ে, বাবাকে ছেড়ে, রাজ্যের লোভ ছেড়ে তিনি বাইরে ফিরছিলেন সন্ন্যাসী হবেন বলে। তারপর বটবৃক্ষের তলায় কঠিন সাধনা শুরু করেছিলেন। সেই সাধনায় তিনি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তারপর সুজাতা নামে এক মহিলার পায়েস খেয়ে তিনি সেই সাধনা ভঙ্গ করেন। তিনি বুঝেছিলেন শরীরকে কষ্ট দিয়ে সাধনা করা যায়না। সাধনা করতে গেলে শরীরকে কষ্ট দিতে নেই।
নাটকশেষে, গাইড আবার বললেন, ইতিহাসের কথা, এখন তিনি ভগবান বুদ্ধ নামে পরিচিত। তার কাছে অনেক মানুষ মনের অশান্তি, যন্ত্রণা নিয়ে আসেন এবং মনে সুন্দর এক ভাবনা নিয়ে ফিরে যান। একজন এসে তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন আমার ঘরে মৃত্যু বারবার প্রবেশ করছে? আমি মরতে চাই না।
তিনি বলেছিলেন, ঠিক আছে তুমি এমন কোন বাড়ি থেকে আমাকে একমুঠো সরিষা এনে দাও যার ঘরে মৃত্যু প্রবেশ করেনি। সেই সরিষা খেলে তুমি অমর হয়ে যাবে।
সেই ব্যক্তি বক্তব্যের সারাংশ বুঝে চলে গিয়েছিলেন খুশিমনে।
রাজপুরোহিত বলেছিলেন, কিন্তু বুদ্ধদেবের চিকিৎসা করেন এক চিকিৎসাবিজ্ঞানী, সে মস্ত বড় চিকিৎসক তার নাম জীবক।আমাদের রাজপরিবারের চিকিৎসক তিনি রাজা বিম্বিসারের আমল থেকে। তুমি এই জীবককে প্রাসাদে এনে রাখতে পারো। সে তোমার চিকিৎসা করবে। রাজপরিবারের চিকিৎসা করবে।অজাতশত্রুর আগে মহারাজ বিম্বিসার সবরকম খোঁজখবর নিয়ে জীবককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তার রাজসভায় জীবক এসেছিলেন। জীবক রাজি হয়েছিলেন রাজসভায় যোগদান করার জন্য। আবার বুদ্ধদেবের প্রধান শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জীবক। অজাতশত্রু বৌদ্ধ বিদ্বেষী হয়েও জীবককে মর্যাদার আসনে রেখেছিলেন। মহামতি জীবক রাজপরিবারের চিকিৎসা করতেন। আর যেখানে খবর পেতেন সেখানেই চিকিৎসা করতে চলে যেতেন পায়ে হেঁটে।একবার এক গরীব মানুষ সপ্তপর্ণী গুহাপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজসভায় মহামতি জীবকের সন্ধান করেছিলেন।
সেই দরিদ্র রাজপ্রাসাদের গেটের বাইরে অধীর আগ্রহে আশাবাদী হয়ে উঠলেন মহামতির দর্শন পাওয়ার জন্য।
তিনি প্রহরীকে বললেন, একবার মহামতি জীবকের কাছে যেতে চাই।
প্রহরী বলল,তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। তুই সামন্য এক কৃষক হয়ে রাজার চিকিৎসকের সাহায্য চাইছিস? যা পালা। তার সঙ্গে দেখা হবে না। তিনিমএখন চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করছেন।
লোকটি বলল, আমাকে বাঁচান। আমার স্ত্রী মরে যাবে।
প্রহরী বলল, তোর মরে যাওয়াই ভালো।
গরীব কৃষক কান্নাকাটি শুরু করলেন।
গোলমাল শুনে মহামতি জীবক জানালা থেকে গোলমালের কারণ অনুধাবন করলেন। তারপর তার চিকিৎসার থলে নিয়ে হাজির হলেন গেটের সামনে।
মহামতি প্রহরীকে বললেন, দরজা খোলো। আর কোনো লোকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে না। জীবনে কষ্ট পাবে খারাপ আচরণের ফলে।
প্রহরী লজ্জিত হয়ে গেট খুলে দিল।
জীবক গরীব কৃষকের হাত ধরে চলে গেলেন পায়ে হেঁটে দশ মাইল পথ।
তার চিকিৎসায় সেরে উঠেছিল কৃষকের স্ত্রী।
কোনদিন কোন গরিব মানুষ তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়নি। তিনি অর্থের বিনিময় চিকিৎসা করতেন না। তিনি চিকিৎসা করতেন মানুষকে ভালোবেসে। ভগবান বুদ্ধের বাণী তার জীবনকে প্রভাবিত করেছিল অনেকখানি।রাজা অজাতশত্রু জীবকের কাছে ভগবান বুদ্ধের বাণী সম্পর্কে অনেককথা শুনেছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন এবং জীবককে অবসর সময়ে রাজা নিভৃতকক্ষে ডেকে পাঠাতেন। তন্ময় হয়ে শুনতেন জীবকের কথা। জীবক বলতেন, জীবে দয়া, ভালোবাসা আর শান্তি তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। জীবক সময়
কাটাচ্ছেন রাজার কক্ষে এবং বুদ্ধের বাণী শোনাতেন রাজাকে।
জীবন শান্তি ধর্ম আর ভালোবাসার জন্য। বৌদ্ধ ধর্মের মূলকথা, যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।
শান্তিই একমাত্র সমস্ত কিছুর সমাধান করতে পারে। ভালোবাসা আর শান্তি, এই হল বুদ্ধদেবের বাণীর মূলকথা।অজাতশত্রু তার বাবার কাছেও শুনেছিলেন জীবকের কথা। বিম্বিসার জানতেন বৌদ্ধ যুগের ভারতবর্ষে বিজ্ঞানে, চিত্রকলায়, দর্শনে সর্বত্র নিয়োজিত হয়েছিল এক প্রতিবাদ এবং সেগুলি জগতের কাছে একটি বিস্ময়।
মহারাজ বিম্বিসার বলতেন, মহামতি জীবককে পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম সেরা চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী বলা যেতে পারে কথিত আছে ইনি বারবনিতার সন্তানরূপে জন্ম নিয়েছিলেন আবর্জনার স্তুপে। পরিণত করেছিলেন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। চিকিৎসা শাস্ত্র এবং বিজ্ঞান চিকিৎসক মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন এবং ভগবান বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।অজাতশত্রু প্রচন্ড বুদ্ধবিরোধী হলেও এবং পিতাকে বন্দি করলেও জীবকেকে চিকিৎসক পদে বহাল রেখেছিলেন। জীবকের অসাধারণ চিকিৎসা নৈপূণ্যের জন্য। সাধারণ জীবন যাপন করছেন জীবক। ধর্মপ্রচারের পরিবর্তে তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন শেষে তার আচরণ অজাতশত্রু কে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে শত্রুতা করেও তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন এবং তাদের পরামর্শে অজাতশত্রু প্রথম বৌদ্ধ সম্মেলন আহ্বান জানিয়েছিলেন। পর্বতের গুহায় সম্মেলন হয়েছিল এবং ভগবান বুদ্ধের বাণী গুলিকে একত্রিত করা হয়েছিল।অজাতশত্রু একদিন জীবককে বললেন, আমি ভগবান বুদ্ধের শরণাপন্ন হতে চাই।
জীবক বললেন, চলুন আমি আপনাকে ভগবানের কাছে নিয়ে যাই।
ভগবান বুদ্ধের কথা শুনে অজাতশত্রুর জীবনে বিরাট এক পরিবর্তন আসে। তিনি বৌদ্ধ মহাসম্মেলনের ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, ভগবান বুদ্ধের বাণীগুলি সংরক্ষণ করে রাখা হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য। বৌদ্ধ গ্রন্থগুলি যুবকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গ্রন্থগুলি থেকে জানা গেছে তিনি দু-দুবার বুদ্ধকে কঠিন রোগ থেকে মুক্ত করেছিলেন। সংসার থেকে বৌদ্ধভিক্ষু 100 বছর বয়সে পদব্রজে বৌদ্ধবিহার গুলিতে যাওয়া আসা করতেন কেবলমাত্র চিকিৎসার কারণে। বহুদূর থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে আসতেন চিকিৎসার জন্য। কাউকে বিমুখ করতেন না। জীবককে বলা হয় বেদোক্ত যুগের ধন্বন্তরি। রোগীকে না দেখেও কিরকম চিকিৎসা করতেন তা শুনলে চমকিত হতে হয়। কথিত আছে ভগবান বুদ্ধ একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওষুধগুলো পদ্মফুলে মিশিয়ে রেখেছিলেন। বুদ্ধদেব গ্রহণ না করায় যুবকদের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। ঘ্রাণ গ্রহণ করেই তাঁর রোগ ভালো হয়েছিল।
সেবার কাজে নিজেকে শতত নিয়োজিত রাখলেও বিজ্ঞানকে বঞ্চিত করেননি জীবক চিকিৎসা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেগুলো পরের দিকে হারিয়ে গেলেও পরবর্তীকালে ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট সাহায্য করেছিল তার শেষ বয়সে শ্রেষ্ঠ রচনা শিশু রোগ চিকিৎসা গ্রন্থ পৃথিবীর প্রথম শিশু চিকিৎসা সংক্রান্ত বই অতি মূল্যবান গ্রন্থ যা পরবর্তীকালে ভারতীয় চিকিৎসকদের শিশুরোগ সংক্রান্ত গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছিল।জীবক বলতেন শুধু ধর্মপ্রচার নয় গরীব রোগীদের সেবা করতে হবে তাদের সেবায় নিয়োজিত হতে চাই।
ধর্ম প্রচার এর পরিবর্তে দীনদরিদ্র, রোগগ্রস্তদের সেবায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। শেষে তার আচরণ অজাত শত্রুকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে শত্রুতা ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেও অজাতশত্রু প্রথম বৌদ্ধ সম্মেলন আহ্বান জানিয়েছিলেন।
অজাত শত্রু বললেন আমি এক বড় বৌদ্ধ মহাসম্মেলন করতে চাই।
জীবক বললেন কিন্তু এত বড় মহাসম্মেলন আপনি করবেন কোথায়? ভারতবর্ষের প্রত্যেক প্রদেশ থেকে বহু লোকের সমাগম হবে। অজাতশত্রু বললেন আমি স্থান নির্বাচন করেই রেখেছি গৃধ্রকুট পর্বতে সপ্তপর্ণী গুহায় সম্মেলন করা হবে।রাজপুরোহিত বললেন তার সমস্ত বাণী সংরক্ষণ করতে হবে। তারপর সমস্ত সেনাপতিদের সাহায্যে, সমস্ত নাগরিকদের সাহায্য নিয়ে সেই গৃধ্রকুট পর্বতে বিরাট বড় মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। সপ্ততপর্ণী পর্বতের গুহায় সম্মেলন হয়েছিল এবং ভগবান বুদ্ধের বাণী গুলো কে একত্রিত করা হয়েছিল রাজার কথামত।একবার ভগবান বুদ্ধের শরীর অসুস্থ হয়ে উঠল চরম।
জীবক বললেন, আপনি ঔষধ সেবন করুন। তাহলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ভগবান বললেন, আমি ঔষধ সেবন করব না। এবার তো বয়স হয়েছে। তোমরা বেশি চিন্তা কোরো না।
তাঁকে কেউ রাজী করাতে পারল না।শেষে জীবক এক ফন্দি আঁটলেন। তিনি তার এক বন্ধুকে বললেন তুমি আমার বাড়ি যাবে গোপনে কেউ যেন জানতে না পারে ওখানে আমি ভগবানের ওষুধ দিয়ে দেবো এবং ভগবান সেই ওষুধ ওষুধ ঠিক হয়ে যাবে।যুবকের বন্ধু জীবনের বাড়ি এলেন এবং বললেন আমি এসে গেছি তুমি কি দেবে বলেছিলে দাও। তারপর জীবক করলেন কি ভগবান বুদ্ধের প্রিয় শ্বেত পদ্ম ফুলের ভিতর ওষুধ দিলেন এবং তার মধ্যেই ওষুধের বিভিন্ন রকম পদ্ধতিতে ঔষধ মিশ্রিত করলেন এবং বন্ধুর হাতে তুলে দিলেন।তারপর মহামতি যুবকের বন্ধু ভগবান বুদ্ধের কাছে গেলেন।
তিনি ভগবান বুদ্ধকে বললেন আপনার প্রিয় শ্বেতপদ্ম এনেছি।
ভগবান বুদ্ধ প্রসন্ন চিত্তে তারপর শ্বেতপদ্ম গ্রহণ করলেন । তারপর নাকের কাছে নিয়ে সুগন্ধি পুষ্পের ঘ্রাণ গ্রহণ করলেন।
কিছুদিন পরে ভগবান বুদ্ধ সুস্থ হয়ে উঠলেন।সাধারণে এক ভিক্ষুক মত জীবন যাপন করতেন মহামতি জীবক ধর্মপ্রচারে পরিবর্তে দুঃখিত রোগগ্রস্ত সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন শেষে তার আচরন অজাতশত্রু কে খুব মুগ্ধ করেছিল এবং তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন।তুই মহামতি যুবক 100 বছর বয়সেও পায়ে হেঁটে চিকিৎসা করে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। এবার অজাতশত্রু তাঁকে ডেকে বললেন, আপনি চিকিৎসা শাস্ত্র রচনা করুন ভবিষ্যৎ দুনিয়ার জন্য। জীবনটা শেষ বয়সে শ্রেষ্ঠ রচনা শিশু রোগ চিকিৎসা গ্রন্থ রচনা করেন। পৃথিবীর প্রথম শিশু চিকিৎসা সংক্রান্ত বই, অতি মূল্যবান গ্রন্থ, বৃদ্ধ জীবক তন্ত্র। যা পরবর্তীকালে ভারতীয় চিকিৎসকদের শিশু রোগ সংক্রান্ত গবেষণা যুদ্ধে সাহায্য করেছিল।
রাজা বিম্বিসার বুদ্ধকে ধর্মগুরু হিসেবে মান্য করে প্রাসাদে নিয়ে যান। বুদ্ধ তাঁকে চতুরার্য সত্য সম্বন্ধে উপদেশ প্রদান করেন। এরপর বৌদ্ধ সংঘের সহস্রাধিক ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য বেণুবন নামক তার প্রমোদ উদ্যানটি গৌতম বুদ্ধকে প্রদান করেন। পরে রাজা সেখানে একটি বিহার নির্মাণ করেন। এই বিহারটি 'বেণুবন বিহার' নামে পরিচিতি পেয়েছিল। বিম্বিসারের অনুরোধে বুদ্ধ অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে উপোবাস ব্রত পালনের বিধি প্রচলন করেন। কথিত আছে, বিম্বিসারের অনুরোধেই বুদ্ধ বর্ষাকালে পরিব্রাজন না করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে সাধনার 'বর্ষাবাস' নামক রীতি প্রচলন করেন। ভিক্ষুদের বর্ষাবাসের সুবিধার জন্য কুটীর নির্মাণ এবং বুদ্ধ ও ভিক্ষুদের চিকিৎসার জন্য রাজবৈদ্য জীবককে নিযুক্ত করেন। রাজার পত্নী পরবর্তীকালে ভিক্ষুণী সংঘে যোগদান করে অর্হত্ত্ব লাভ করেন।
এরপর তিনি তাঁর পিতার অনুরোধে কপিলাবাস্তুতে আসেন। এখানে এসে তিনি তাঁর পিতার শত অনুরোধেও প্রথমে গৃহে প্রবেশ করতে রাজী হলেন না। রাজবাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী গোপা পুত্র রাহুলকে ডেকে বললেন -ওই তোমার পিতা মতাকে ডেকে আন। রাহুল নিজের পরিচয় দিয়ে ঘরে যেতে বললেন। গৌতম সে আহ্বান অগ্রাহ্য করলেন। এরপর সকলের কাতর অনুরোধে ইনি বাড়িতে প্রবেশ করলেন কিন্তু কোথাও দাঁড়ালেন না। রাজবাড়ি থেকে শেষবারের মতো বের হওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী বুদ্ধের সামনে তাঁর দীর্ঘ চুল বিছিয়ে অপেক্ষা করলেন। গৌতম বিন্দু মাত্র বিচলিত না হয়ে সে চুল মাড়িয়ে রাজবাড়ী থেকে বেরিয়ে এলেন। এই সময় ইনি তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ এবং সাত বৎসরের পুত্র রাহুলকে দীক্ষিত করে রাজধানী ত্যাগ করলেন। এরপর ইনি ১৩ বৎসর ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর ধর্মমত প্রচার করে বেড়ালেন। পিতার অসুস্থাতার কথা শুনে ইনি কপিলাবস্তুতে আসেন এবং পিতার মৃত্যুকালে উপস্থিত হলেন। পিতার মৃত্যুর পর ইনি পুরনারীদের ভিক্ষু বানালেন। এই ভিক্ষুদলের নেত্রী বানালেন তাঁর স্ত্রী গোপাকে। এরপর ইনি তাঁর ধর্মমত প্রচারের জন্য আবার পথে বেড়িয়ে পড়েন। ৮০ বছর বয়সে নেপালের কুশী নগরে ইনি দেহত্যাগ করেন। কথিত আছে তাঁর জন্ম বোধিত্ব লাভ ও মৃত্যু- একই তারিখ ও সময়ে হয়েছিল।বুদ্ধ বেণুবনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ উদ্যাপন করেন।শেষ বছরে সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন বুদ্ধের শিষ্য হন।
গাইড আবার বলতে লাগলেন ইতিহাসের কথা, এই সময় রাজবৈদ্য জীবক তাঁর আম্রকাননে বুদ্ধ সংঘের জন্য একটি বিহার নির্মাণ করে দেন। বর্তমানে এই বিহারটি 'জীবকাম্রবন' বামে পরিচিত।কাছে হিন্দু দর্শনে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। কিন্তু এই জ্ঞানে পরিতৃপ্ত হতে পারেন নি। তাই এখান থেকে তিনি উদ্দক রামপুত্তের কাছে শিক্ষাগ্রহণের জন্য আসেন। এই গুরুর কাছে তিনি সাংখ্য এবং যোগবিদ্যা শেখেন। এই নতুন জ্ঞানও তাঁকে শান্ত করতে পারলো না। এরপর তিনি মগধের রাজধানী রাজগিরীতে আসেন। লোকমুখে নতুন সন্ন্যাসীর প্রশংসা শুনে বিম্বিসার তাঁর সাথে দেখা করেন এবং রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু বুদ্ধ এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে জানান যে, যদি কখনও সত্যের সন্ধান পান, তাহলে তিনি রাজার আমন্ত্রণ রক্ষা করবেন। এর কিছুদিন পর, রাজা এক যজ্ঞানুষ্ঠানের জন্য ১০০০ মেষ বলির উদ্যোগ নেন। এই কথা জানতে পেরে বুদ্ধ রাজার সাথে দেখা করেন এবং মেষ বলি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। রাজা এই অনুরোধে বলি বন্ধ করে দেন। এরপর বুদ্ধ উরুবিল্ব গ্রামের নিকটবর্তী এক উপবনে এসে তপস্যা শুরু করেন। এখানে তিনি কঠোর তপস্যা শুরু করেন। সে সময় পাঁচজন সন্ন্যাসীও তাঁর সাথে ধ্যান শুরু করেন। বুদ্ধের কঠোর তপস্যা দেখে এই পাঁচ সন্ন্যাসী তাঁর ভক্ত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি ভারতের বর্তমান বিহার প্রদেশের গয়া জেলার একটি গভীর অরণ্যের ভিতর, নিরাঞ্জনা নদীর তীরস্থ একটি অশ্বত্থ গাছের নিচে কঠোর তপস্যা শুরু করেন। এই সময় অনাহারে অনিদ্রায় তাঁর শরীরের মেদ-মাংস ক্ষয়ে কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছিলেন। এই সময় তাঁর শারীরীক অক্ষমতার কারণে ধ্যানে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। তাই তিনি অল্প কিছু আহার করতে থাকেন। এই সময় সুজাতা নামক এক গৃহবধু প্রথম পুত্র সন্তান লাভের পর বনদেবতার পূজা দিতে আসতেন। তিনি সেখানে বুদ্ধকে দেবতা ভেবে পূজা দিতে গেলে, বুদ্ধ তাঁর ভুল ভেঙে দিয়ে বলেন যে, তিনি দেবতা নন। তিনি সুজাতার নিবেদিত পায়েস গ্রহণ করে বলেন যে, তোমার মনস্কাম যেমন পূর্ণ হয়েছে, এই পায়েস গ্রহণের পর আমার মনস্কামও যেন পূর্ণ হয়। বুদ্ধের এই খাদ্যগ্রহণ দেখে, বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে, তাঁর সাথের সন্ন্যাসীরা তাঁকে ত্যাগ করেন। এরপর তিনি একাই ধ্যান করতে থাকেন। প্রায় ৪৯ দিন ধ্যান করার পর, তিনি বৈশাখী পূর্ণিমায় গৌতম বুদ্ধত্ব লাভ করেন। এই সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৫ বৎসর। বোধিপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর নাম হল তাঁর বুদ্ধ। কথিত আছে তিনি এই রাতের প্রথম যামে পূর্বজন্মের জ্ঞান লাভ হয়, দ্বিতীয় যামে তাঁর দিব্যচক্ষু বিশুদ্ধ হয়, অন্তিম যামে দ্বাদশ প্রতীত্যসমুৎপাদ এবং অরুণোদয়ে সর্বজ্ঞাতা প্রত্যক্ষ করেন। বর্তমানে নিরঞ্জনা নদীকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ফল্গু। আর উরুবিল্ব গ্রামের নাম বুদ্ধগয়া এবং তিনি যে গাছের নিচে বসে বোধিত্ব লাভ করেছিলেন, সেই অশ্বত্থগাছের নামকরণ করা হয়েছে বোধিবৃক্ষ। বোধিবৃক্ষ এবং মন্দির ছাড়া এখানে একটি দীঘির নাম সুজাতা দিঘি। কথিত আছে। এই দিঘির জলে স্নান করে বুদ্ধদেবকে পায়েস নিবেদন করেছিলেন। শরীরকে কষ্ট দিয়ে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করা অসম্ভব একথা তিনি বলতেন।
আমাদের গাইড ঘুরে ঘুরে সমস্ত স্থান দেখালেন এবং ঐতিহাসিক বিবরণ দিলেন। আমরা চুপ করে গোগ্রাসে গিললাম ইতিহাসের কথা।
লজে ফিরে সোমা বলল, স্ত্রী চুল বিছিয়ে দিয়েছিলেন ৃমায়ার শেকল।
আমি বললাম, ভগবান মায়ার শেকল ছিন্ন করে সংসার ছাড়লেন। তাই তো মানুষের জন্য কাজ করতে পারলেন।
শ্যামলী বলল, তাহলে।স্ত্রী র কথাটাও ভাবুন...
আমি আর রাজু নিরুত্তর হয়ে রইলাম।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
----------------------
সুদীপ ঘোষাল নন্দনপাড়া খাজুরডিহি পূর্ববর্ধমান ৭১৩১৫০,
মো ৮৩৯১৮৩৫৯০০.