গল্প।। প্রিয় পাত্র ।। আবদুস সালাম
প্রিয় পাত্র
আবদুস সালাম
আচ্ছা বলতো আব্বু, দাদু আমাকে সবসময়ই শালা বলে গাল দেয় কেন ? আমাকে দুচোখে দেখতে পারেনা। আর যখন কিছু খাবার খায় তখন আমাকে দিতে চাই না ।কাছ দিয়ে গেলে কেমন যেন লুকানোর চেষ্টা করে। সাব্বির ভাই ওদিকে গেলেই আবার ডেকে ডেকে দেয় । কথাগুলো কিছুতেই ভেবে পায় না সিরাজ কেন এমন হয় ।
মনে মনে ভাবে সে তো পড়াশোনাতেও ভালো , তার ব্যবহার খানা ও সুন্দর। পাড়ার প্রতিটি ছেলের সাথে তার স্বভাব ।সে নিজেও জানে সাব্বির ভাইয়ের চাইতে সে অনেক ভালো ।ক্লাসের ফার্স্ট বয় । কোন দিন ক্লাসে ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয়নি। পাড়ার ছেলেরা ও তাকে খুব ভালোবাসে। অন্যান্য অভিভাবকরাও তাকে স্নেহ করে। পাড়ার প্রতিটি অভিভাবক তাকে নিয়ে গর্ব করে । কিছুতেই যেন হিসেব মেলাতে পারে না সে । এদিকে আবার সাব্বির সিগারেট খায় ,থাম্স আপ এর বোতলে ভরে সুমনের সাথে মদ খায়। । পাড়ার বখাটে ছেলেদের সাথে তার অবাধ মেলামেশা । সাবিরের কীর্তিকলাপ কিন্তু দাদু সবই জানে । সবসময় একটা জিজ্ঞাসা চিহ্ণ তাড়িয়ে বেড়ায়। কিছুতেই সিরাজ দুই এ, দু এ চার হয় এই সহজ অঙ্ক টা যেন মেলাতেই পারছে না ।
শবনম বলে"বেটা , তোমার দাদুকে গোস্তটুকু দিয়ে এসো তো। "
সিরাজ বলে '--না যাবো না। ওই বুড়োর বাড়ির দিকেই যাবো না। যেতে হলে তুমি যাও। দাদু যা হারামি'।
ও কথা বুলতে হয় না বাবা !"তুমার দাদু হাজী মানুষ, মক্কা থেকে এস্যাছে। তুমি যুতি ব্যাটা তাকে হারামি বলো তবে পাড়ার লোক গুলান তুমাকে কি বুলবে? "
প্রথম রোজার আজ প্রথম ইফতার হবে । ইফতারের আধ ঘন্টা আগে শবনম বলে " বাবা সিরাজ এই নাস্তা গুলান তোমার দাদুকে দিয়ে এসো তো" । প্রথম রোজার দিন। গররাজি হয়েও নাস্তা নিয়ে সিরাজ দিতে গেলো দাদুর বাড়ি । ওজু করে দাদু বসে আছে । দাদুর জানা আছে আজ সবাই নাস্তা দিতে আসবে।
দাদুর চার ছেলে চার মেয়ে ।সবাই তারা মোটামুটি স্বচ্ছল । খাবার দাবার একটু তো ভালো আসবে এটা তার জানা । দাদু ও তেমনি অধীর আগ্রহের নাস্তার থালার দিকে পথ চেয়ে বসে আছে । সিরাজ এনেছিল প্রথম । সিরাজের দেওয়া নাস্তা ঢেলে নিয়ে খালি থালা ফেরত দিলো। খালি থালা হাতে সিরাজ আস্তে আস্তে দরজার দিকে পা বাড়ায় । অন্য দরজা দিয়ে সাব্বির ভাই আসে নাস্তা নিয়ে। নাস্তা ঢেলে নিয়ে আমাদের দেওয়া নাস্তা থেকে কয়খানা পুরি আর ডিমের হালুয়া তুলে দিল তার থালায় । আড় চোখে সব দেখে দৌড়ে এসে মায়ের সামনে থালা ফেলে দিলো সিরাজ । "আমাকে কখনোই কিছু দিতে যেতে বলবে না বদমাশ বুড়োকে। বুড়ো আমাকে শুধু থালা ফেরত দিলে । সাব্বির ভাই কে আধ থালা নাস্তা দিলো অথচ আমাকে আধ খানা পুরি ও ছিঁড়ে দিলে না "-----।
শবনম সিরাজকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে--" না- না দেকগে বাবা ,তোমরা মেলায় খেছ্যো । আল্লাহ তোমাদেরকে খুব খাওয়েছ্যে । কাল তুমাকে হামি পুরি আর আন্ডার হালুয়া করে দিবো ।" ছোট্ট সিরাজের মনে অদ্ভুত একটা প্রশ্ন সব সময় খোঁচা মারে । কিছুতেই 2 এর সঙ্গে 2 মিলে যে 4 হয় এই সহজ অংকটা কিছুতেই মেলাতে পারে না ছোট্ট সিরাজ ।
স্কুল থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া করে দাদুর বাড়ির দিকে বেড়াতে যায় রোজ। একটু মনকে হালকা করে নেওয়ার প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। সাব্বির ভাইকে কাছে নিয়ে দাদু দাদি এবং পিসিরা সব মিলে বসে কি যেন জিজ্ঞাসা করছে । আর মজা করে হাসছে । কাছে গিয়ে শুনতে পেল সাব্বির ভাই তার মা-বাবার ঝগড়ার কথা ফলাও করে প্রচার করছে । কালকে ঝগড়া করতে গিয়ে বড়ো চাচীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে বড় চাচা। বড় চাচীকে মারার জন্য দাদু দাদি বেজায় খুশি। দাদু দাদির কথায় বেশ বুঝতে পারে সিরাজ আমার বাবা মাকে কোনদিন বলে তারা অসন্তুষ্ট। ছোট্ট সিরাজ সেদিন বুঝেছিলো সেই ছেলে বাবা-মায়ের খুব প্রিয় যে তার বউকে কথায় কথায় হেনস্থা করে আর দুবেলা ঠেঙায়।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
-------------------------