Click the image to explore all Offers

গল্প।। ঠান্ডা ভয় ।। প্রদীপ দে

ভৌতিক রহস্য গল্পঃ
 




      ঠান্ডা ভয়

         প্রদীপ দে



-- হ্যালো --
-- হ্যালো, হ্যাঁ  কে বলছেন?
-- ওঃ সুখময় বলছো?
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ,সুখময়ই বলছি --
-- আরে, আমি সাহস রায় বলছি --
-- ওঃ ওঃ দাদা আপনি? গলাটা চেনা লাগছে, তবে আমার কাছে আপনার নম্বরটা সেভ করা নেই, তাই বুঝতে পারি নি।
--  ওঃ আচ্ছা, কোনো ব্যাপার নয়। অনেকদিন তোমায় আর বাইরে দেখতেও তো পাই না।
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি এখন খুব কম বের হই। কাজ ও তেমন আর করি না।
-- সে কি? এতো ভালো কাজের লোক?  আমি যে তোমায় কাজের জন্যই ফোন করেছিলাম। আমার কাজটা যে তোমায় করে দিতেই হবে। অন্য কাউকে দিয়ে আমি করাবো না - তুমি ছাড়া এই কাজ কেউ করলে মেশিন বিগড়ে দেবে।
--  আরে দাদা কি যে বলেন?  কত ভালো ভালো মেকানিক্স রয়েছে। আপনি আমায় স্নেহ করেন তাই। যা হোক আমি যাবো, এখন কি হয়েছে বলুন,  তাই একটিবার শুনি।
-- এসি মেশিনটা বিগড়েছে , গরম হাওয়া বেড়োচ্ছে। তুমি যে সেই শেষ গতবছর সার্ভিসিং করে দিয়েছিলে তারপর আমি রিটেয়ার করলাম, একে পয়সার অভাব অন্যদিকে করোনার প্রভাব দুয়ে মিলে আমি কাত,  তাই হে ভায়া, আমার আর একবছরে কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি, তোমাকেও ডাকতে পারি নি। কিছু মনে করো না।
--  না না ওতে কি আছে? সেটা আর কি?  যাক আমি কাল সকালেই যাবো, দেখে দেবো। কোনো চিন্তা করবেন না।
-- ঠিক। তুমি কখন আসবে?
-- ওই ন টার মধ্যেই।
-- ব্যাস। আর কোন চিন্তা নেই তুমি হাত দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে একবার এসো কিন্তু ভাই সুখময়।
-- আর কোন চিন্তা নেই সাহস বাবু, চুপ করে ঘুমান, আমায় যখন ডেকেছেন, তখন ধরুন আপনার মেশিন ঠিকই হয়ে গেছে --আর গরম নয় এবার শুধুই ঠান্ডা হাওয়া বেড়োবে ।
-- আচ্ছা, তাহলে ছাড়ি, ভালো থেকো।
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ  বাই!
লাইন কেটে দিলাম।

পরের দিন সক্কাল সক্কাল উঠে সব কাজ গুছিয়ে, স্নান সেরে,আহ্নিক করে রেডি হয়ে গেলাম, মিস্ত্রি আসলে অনেক ঝক্কিঝামেলা, এটা দাও ওটা দাও হাতে -হাতে আবার থাকতেও হবে সাথে সাথে। আর কাজটা বেশ ঝামেলার হবে আমি জানি। কারণ মেশিনের কন্ডেন্সর খারাপ হয়ে গেছে, বলে গেছে পাড়ার বিপুল নামের এক মিস্ত্রি।গ্যাস ও নেই, ভর্তি করতে হবে। অনেক টাকার ব্যাপার, প্রায় দশ হাজারের ওপর। মিস্ত্রিটাকে ভাগিয়ে দিয়েছি, পরে করবো বলে। আসলে চেষ্টা চালাচ্ছিলাম অন্যত্র যাচাই করে যদি কমে হয়। এসব কথা সুখময় কে বলিনি, ওকে বলার দরকারই বা কি? যাচাই করেই কাজ করাতে হয় সব কথা সবাইকে জানাতে নেই।

নটা, দশটা করে সূর্যিমামা মাথায় চড়ে বসলেন, কিন্তু সুখময় এলো না। ঘরদোর বার এক করে গেলাম এই আসে ওই আসে করে সে আর এলো না। ভাবলাম আটকে গেছে।  ফোন করবে বা বিকালে আসবে। বিকালে না আসায় আমিই ফোন লাগালাম । অবাক কান্ড পাঁচবার ফোন করেও ধরলো না। চিন্তায় পড়ে গেলাম। কেন আসলো না?  কম পয়সায় কাজটা করিয়ে নেওয়া যেতো। রাতে ফোন মারলাম তো ধরলো ,ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।
--    হ্যাঁ, সাহসদা আজ আমি একটু অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম, ফোনেও চার্জ ছিলো না তাই করতে পারিনি। কোনো চিন্তা করছেন না,কাল সকালবেলাতেই আপনার ওখানে যাবো। মনটা শান্তিতে ভরে গেলো।

পরের দিনও শেষ হয়ে গেল। সুখময় সুখ দিলো না, তার মুখ দেখিয়ে। বিকালে চিন্তা করছি কি হলো ব্যাপারখানা? ও যদি নাই আসতে চায় তাহলে ওর ফোন করার দরকার হতো না। আর ওর গলার ভয়েস বলে দিচ্ছে ও আসতে ইচ্ছা করছে। গিন্নীর সঙ্গে আলোচনা করলাম। ও সন্দেহ করতে শুরু করে দিয়েছে। 
 
রাতে আবার যথারীতি সুখময়ের ফোন এলো - মাফ করুন -- কিছুতেই সময় পাই নি আজ। কাল অবশ্যই যাবো।

গিন্নীই বুদ্ধি দিলো --ওকে সময় দিও না। কাল সকাল বেলায় চলো আমরা ওর বাড়ি চলে যাই, ও কাজে বেরোবার আগেই ওকে ধরে ফেলি। ও মনে হয় খুব ব্যস্ত।

একদম ঠিক কথা। দুজনেই চা খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। তখন সাতটা হবে। ওর বাড়িতে গিয়ে দরজায় আঘাত করলাম -- সুখময়, সুখময় আছো নাকি?

খচমচ করে মরচে ধরে কব্জার আওয়াজ করে দরজা খুলে গেলো। সামনে এলো ওর মা। বহুদিন পরে দেখছি, কেমন যেন বিব্রত লাগলো দেখতে। ওনার পক্ষে চেনা সম্ভব ছিলো না। আমিই বললাম -- ভালো আছেন মাসিমা? সুখময়ের সংগে একটু দরকার ছিলো। ও বাড়িতে আছে তো?

নিমেষে মহিলার চোখ দুটি বড় হয়ে উঠলো, করুণ ভাবের উদ্বেগ লক্ষ্য করলাম ওনার চোখে মুখে। চোখ মুছলেন আঁচল দিয়ে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কি করবো ভেবে উঠতে পারলাম না।

এবার আমার গিন্নিই বলে ফেললো -- কি হয়েছে মাসিমা?  কোন কষ্ট হচ্ছে?

মাসিমা কোন উত্তর দিলেন না, ইশারায় ভিতরে ডাকলেন, আমরা ওনাকে অনুসরণ করে ভিতরে গেলাম। অবিনস্ত ঘর, যেন বহুদিন অব্যবহৃত হয়ে রয়েছে। উনি দেওয়ালে টাঙানো ছবির দিকে আঙুল তুললেন, অবাক চোখে ধাক্কা খেলাম , বুঝতে অসুবিধা হলো না -- সুখময় ছবি হয়ে গেছে!

মাসিমাকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা পাইনি। তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এলাম। গিন্নি আমায় দেখে- তো আমি গিন্নিকে।  তাহলে এতদিন ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিলাম?  আর ও আসবে আসবে কেন বলছিলো? ভয় পেতে শুরু করলাম। হাত পা যেন আঁটকে গেলো পথে। এখন কি করবো? আর জলজ্যান্ত ছেলেটা মরে গেল?

গিন্নির কথা মত সব ভুলে তক্ষনাৎ আমাদের আগের বিপুল মিস্ত্রীর কাছেই গেলাম। ও দোকান খুলে বসেই ছিলো ,আমরা বলতেই আমাদের সঙ্গে আমাদের বাড়ি চলে এল। টাকার ব্যাপারখানা একইরকম আগের মতোই। ও আগেই রেট দিয়েছিল।

বাড়ি এসে যথারীতি কাজ শুরু হলো। ছাদের বক্স খুলতেই। অবাক কাণ্ড! মেশিনে নতুন কন্ডেন্সার লাগানো। মিস্ত্রি তো রেগে লাল -- ন্যাকাপনা করছেন? অন্যকে দিয়ে মেশিন সারিয়ে আমার সাথে চালাকি করছেন?

ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা চালালাম। ও কি বুজলো জানি না, কিন্তু পাঁচশো টাকা ওর হাতে গুঁজে দিতেই ও ভিজে বেড়াল হয়ে চুপসে গেল।
নিচে এসে সব বন্ধ করে এসির সুইচ দিতেই ঠান্ডা হাওয়ায় মন -প্রান সব জুঁড়ে গেল !

ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।

 
--------------------------

#অমাদীপ_প্রদীপদে

প্রদীপ কুমার দে
বিরাটী আবাসন
এল আই জি -৯
এম বি রোড
নিমতা



   

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.