সাধ
রুবি সেনগুপ্ত
পর্ব-১
সেনভিলা ফুল এবং আলোর সজ্জায় সুসজ্জিত হয়ে উঠেছে।কারন আজ এই বাড়ির ছোটোবৌমা পূরবীর সাধের অনুষ্ঠান পালন করা হবে।
ড্রইংরুমের মেঝেতে একটি নতুন আসন বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।স্নান সেরে পূরবী তার শাশুড়ি মায়ের দেওয়া নতুন শাড়ি এবং গয়না পরে সেই আসনে বসে রয়েছে।
পুরোহিত মশাইয়ের নির্দেশ অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বাড়ির বড়রা পূরবীর মাথায় ধানদূর্বা এবং প্রদীপের শিখার তাপ ছুঁয়ে আশীর্বাদ সম্পন্ন করেছেন।
এরপর পূরবীর বড় দুইজা অঞ্জলি এবং শ্রীতমা কাঁসার থালার মধ্যে ভাত, সাতরকমের ভাজা এবং অনেকগুলো
বাটিতে মসুর ডাল,শুক্তো,ডিমেরকারি,তিন রকমের মাছের পদ,মাছের মাথার তরকারি,ধোঁকার ডালনা,আলুপোস্ত,মিষ্টি দই,আমের চাটনি এবং একটি প্লেটের মধ্যে দশখানা মিষ্টি সাজিয়ে পরিবেশন করলেন।পূরবীর পিসি শাশুড়ি তাকে খাওয়া আরম্ভ করতে বললেন।
পূরবী তার দিকে তাকিয়ে বললো "পিসিমণি,আজ আমার এবং আমার গর্ভের সন্তানের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন।বাড়ির সকলে আমায় আশীর্বাদ করেছে।কিন্তু
ছোড়দি আমায় এবং আমার হবু সন্তানকে আশীর্বাদ না করলে একটাদানাও আমি মুখে তুলবো না"।
পূরবীর মুখে এইকথা শোনার পরে বাড়ির প্রত্যেকে অবাকদৃষ্টিতে তারদিকে তাকিয়ে রইলো।
একটু আগে পূরবী যাকে ছোড়দি বলে সম্বোধন করলো সে হল পূরবীর ছোটো ননদ গীতালি।এক বছর আগে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর সে দুই যমজ মেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছে।
♦♦♦♦♦♦ পর্ব-২ ♦♦♦♦♦
এবার পূরবীর পিসি শাশুড়ি তাকে বললেন " গীতু বিধবা।কোনো শুভকাজে বিধবাদের থাকতে নেই বউমা।তাই তোমার সাধের অনুষ্ঠানে আসতে বারণ করেছি তাকে"।
পূরবী বলে উঠলো "পিসিমণি আপনি আজকের যুগে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঠিক ই,কিন্তু আপনার চিন্তাভাবনা সেই আদ্যিকালেই আটকে রয়েছে।তাই তো বললেন বিধবাদের শুভভাজে আসতে বারন করেছেন।মেয়েদের জন্য সমাজ নিয়ম তৈরি করেছে কিন্তু এই একই নিয়ম কোনো পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কেন?একজন মেয়ের স্বামী মারা যাওয়ার পরে সে যদি বিধবা হয় তাহলে তো একজন পুরুষের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সেই পুরুষটিকেও তো বিধবা আখ্যা দেওয়া উচিত।তাই না?কিন্তু তা করা হয় না।বরং স্বামীর মৃত্যুর জন্য স্ত্রীকে দোষ দেওয়া হয়।তার উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়।অবশেষে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার পর তার শ্রাদ্ধের জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়।অথচ বেঁচে থাকাকালীন তাকে উপযুক্ত সম্মান না দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়।হাই রে আমাদের সমাজ।আমি ধিক্কার জানাই।আর একটা কথা বলছি,সাধের অনুষ্ঠান তো আমার এবং আমার সন্তানের মঙ্গলের জন্য ই আয়োজিত হচ্ছে। তাই কারা এই অনুষ্ঠানে থাকবে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র আমার ই রয়েছে।আপনি কিম্বা সেন বাড়ির কোনো সদস্য ই আমার উপরে নিজেদের নিয়ম চাপানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না।তাহলে আমি আজকের অনুষ্ঠান হতেই দেবো না"।
এরপর পূরবী তার বড়জায়ের দিকে তাকিয়ে বললো "বড়দিভাই,এবার যাও তো ছোড়দিকে নিয়ে এসো।তার ভালোবাসা এবং আশীর্বাদ না পেলে আজকের অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে"।
এতক্ষন গীতালি নিজের রুমে বসেই পূরবীর বলা কথাগুলো শুনছিলো এবং পূরবীর জন্য গর্ব অনুভব করছিল।কিছুক্ষণ পরে সে তার বড়বৌদি অঞ্জলির সাথে ড্রইংরুমে উপস্থিত হয় এবং পূরবীর ইচ্ছে অনুসারে তাকে এবং তার হবু সন্তানকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করে।এরপর পূরবী গীতালির পা ছুঁয়ে প্রনাম করে বলে "এইভাবেই তোমার আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় রেখো ছোড়দি।তাহলেই আমি এবং আমার সন্তান সারাজীবন ভালো থাকবো"।
মুখে একরাশ হাসি এবং চোখ ভরা জল নিয়ে গীতালি পূরবীর মাথায় হাত রেখে বলে উঠে " তাই যেন হয় পূরবী"।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
—————————————————————
✍️কলমে ------ রুবি সেনগুপ্ত
—————————————————————
পুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গ
প্রতিবাদী লেখা সন্দেহ নেই, এগিয়ে চলো ❤️🌹
উত্তরমুছুন