Click the image to explore all Offers

গল্প ।। অলকার বারোমাস ।। গৌতম কুমার গুপ্ত






অলকার বারোমাস 

 গৌতম কুমার গুপ্ত




অলকা সারাদিন মনমরা হয়ে থাকেন।যখনই দেখা যায় মুখ শুকনো হয়ে আছে।সারাদিন গৃহকর্মে ব্যস্ত থাকেন।তার সঙ্গে আছে ছেলে স্বামীর ফাইফরমাস।তিন ছেলে এক মেয়ে।ছেলেরা নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত।দুই ছেলের এবং মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।ছেলে বউদের আলাদাই করে দিয়েছে অলকার স্বামী কুটূর চক্রবর্তী।নিজের একটা গোলদারী দোকান আছে।ভালই চলে।

অলকার সঙ্গে বনিবনা প্রথম থেকেই নেই।নিজের জেদটা বরাবর চাপিয়ে দিয়ে এসেছেন কুটূর চক্কোত্তি।অলকার ইচ্ছে অনিচ্ছের কোনদিন দাম দেন নি।সারাবছর একজোড়া ছাপা শাড়ি ব্লাউজেই পার হয়ে যায়।কোনদিন পোশাকী শাড়ি গায়ে ওঠে নি।অলকা বিয়ের বেনারসীটি একবার করে উল্টেপাল্টে দেখেন আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কুটুর চক্কোত্তি কথায় কথায় চিৎকার চেঁচামেচি করেন।রান্না পছন্দ না হলে ভাতের থালা ধাঁই করে উঠোনে গড়াগড়ি খায়।আগে তো গায়েও হাত উঠতো,এখন ছেলেমেয়েরা বড়ো হওয়াতে সেই নির্যাতনটা কমেছে।কিন্তু কথার ধার কমে নি।উঠতে বসতে বাপ বাপান্ত।গালাগাল ছোটে ব্যাপক।

একদিন কুটূর চক্রবর্তী নাতির অন্নপ্রাশনে মেয়ের বাড়ি বাঁকুড়ার পছন্দপুরে একাই গেলেন।তাকে একাই ঢুকতে দেখে মেয়ে সুলেখার স্বশুরমশাই সুভাষবাবু বলে উঠলেন, বেয়াইমশাই, আপনি এলেন কিন্তু ছেলে বৌমারা কই? বেয়ানকে তো সঙ্গে আনতে পারতেন।এটাই তো আপনার ঠিক নয় বেয়াই মশাই,নিজের কাছের লোকটাকেই দূরে সরিয়ে রেখেছেন।

কুটুর চক্কোত্তি দুদিন ওখানে ভালই চব্যচোষ্য খেয়ে আনন্দে কাটালেন।মেয়ের শাশুড়ির বন্দনাদেবীর যত্নআত্তি তার ভালই লেগেছে।সেই সঙ্গে তিনি লক্ষ্য করেছেন সংসারে বন্দনাদেবীর গুরুত্ব অনেকখানি।মেয়েও খুব খুশি।সুখে সংসার করছে।

বাড়িতে এসে কুটুর চক্রবর্তী চুপচাপ থাকলেন দু দিন।তারপর একদিন ভোরবেলায় উঠে গিয়ে অলকার শোবার ঘরে ঢুকে দেখলেন তার সারা জীবনের সঙ্গীর মুখ।তাঁরই নির্যাতনের প্রলেপ যেন লেগে রয়েছে প্রৌঢ়ার মুখে।তাঁর হাতের আঘাতে কপালে সেই কাটা দাগটা জ্বলজ্বল করছে।মায়া হল তাঁর।সেই দাগে হাত ছুঁয়ে হঠাৎ অঝোর ধারায় কেঁদে ফেললেন।

অলকা কান্নার আওয়াজ পেয়ে ধড়মড় করে উঠে বসলেন।একি হল মানুষটার?মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি।
কুটূর চক্কোত্তি কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলেন স্ত্রীকে।কান্নাভেজা গলায় বললেন,অলকা আমি অনেক অন্যায় করেছি। ভুল করেছি অনেক।আর কোনদিন ভুল হবে না আমার।সুভাষবাবু আমার চোখ খুলে দিয়েছেন।

পরের দিন অলকাকে সঙ্গে নিয়ে কুটূর চক্কোত্তি আরো একবার পছন্দপুরে বেড়াতে গেলেন।

ছেলেবউরা অবাক!

ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।

 

..........................


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.