Click the image to explore all Offers

দোষেগুণে ভরা একজন মানুষ ছোটগল্পকার ও'হেনরি ।। ঋভু চট্টোপাধ্যায়

     

ছবিঋণ- ইন্টারনেট

 

অদ্ভুত "ও হেনরি"

ঋভু চট্টোপাধ্যায়


 বলা হয়  তাঁর মাত্র ষোল বছরেরও কম সাহিত্য জীবনে প্রায় তিনশ একাশিটি ছোট গল্প প্রকাশিত হয়কেউ কেউ বলেন তাঁর লেখা গল্পের সংখ্যা নাকি ছ'শর বেশি শুধু নিজের nom-de-plume ছাড়াও আরেক লেখক বালজাকের মত যে কোন প্রকাশককে পাণ্ডুলিপি দেবার অনেক আগেই সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে খরচ করে ফেলতেন পরে প্রকাশকের তাড়া খেয়ে অন্য নামেও লেখা দিতে বাধ্য হতেনএত বেশি গল্প লেখার জন্য তিনি অনেকের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে গল্প বা প্লট শুনতেনও পরে নিজস্ব শৈলিতে অনন্য স্বাদের গল্প লিখে পাঠকদের জন্য উপহার দিতেন জনশ্রুতি আছে তার অধীনে তিন চার জন কাজ করতেন, যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গল্পের প্লট সংগ্রহ করালিখে প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও সব টাকাই মহিলা ও মদের পিছনে খরচ করে দিতেন ১৯১০ সালের ৫ই জুন লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস ও এনলার্জমেন্ট অফ হার্টের রোগে মারা যান, এবং মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী [যদিও বিয়েটি অল্প কয়েকদিনই টিকে ছিল সারা লিনসে কোলেমন (Sarah Lindsey Coleman) যিনি উইলিয়ামের মৃত্যুর মাত্র কয়েক মাস আগে ১৯০৯ সালে তাকে ছেড়ে চলে যান] দাবি করেন এই মহান লেখকের মৃত্যু মদে নয়, ডায়াবেটিস রোগে হয়েছে ঠিক ধরেছেন, ইনি উইলিয়াম সিডনি পোর্টার, যার 'নম দে প্লিউম ও'হেনরী' 

    তাঁর এই 'হেনরী নাম নেওয়ার পিছনে অনেক বিতর্ক আছেকেউ কেউ বলেন, ওহিও স্টেট পেনিটেনসিয়ারির (Ohio State Penitentiary) এক গার্ড ওরিন হেনরী (Orrin Henry) নাম থেকেই 'হেনরী কেউ কেউ বলেন তাঁর নিজের ( মতান্তরে প্রেমিকা) পোষা বিড়াল 'হেনরী' থেকেই নিজের নাম গ্রহণ করেন এই প্রসঙ্গে  পোর্টারকে প্রশ্ন করা হলে উনি উত্তরে বলেন, 'শব্দটি খুব সহজে উচ্চারণ করা যায়সম্ভবত ফরাসি Oliver থেকে তিনি নিজে Olivier নামটি নেনপ্রথম দিকে তাঁর কয়েকটি গল্প অলিভিয়ার হেনরী নামেও প্রকাশিত হয় তবে নিজের পরিচয় গোপন করতেই যে ছদ্ম নাম গ্রহন করেন এটা এক্কেবারে নিশ্চিত 'হেনরী নাম ছাড়াও, এস.এইচ পিটার, জেমস এল ব্লিস, টি.ভি. দৌদ, এবং হাওয়ার্ড ক্লাক নামেও তিনি লিখেছেন। 

     মাত্র তিন বছর বয়সে মাকে হারানোর পর, ডাক্তার বাবা এক আন্টির কাছে ছোট্ট উইলিয়ামকে পাঠালে মাত্র ষোল বছর বয়সেই ওষুধের দোকানে কাজ আরম্ভ করে দেনকয়েক বছরের মধ্যে ফার্মাসিস্টের লাইসেন্সও পেয়ে যান। সর্দি কাশি সারানোর জন্য একসময় টেক্সাস চলে যান। সেখান  থেকে আসেন অস্টিনে। অস্টিনে থাকাকালীন ঘন ঘন পেশা পরিবর্তন করতেন। ডাফ্টম্যান, ফার্মাসিস্ট, সাংবাদিক এমনকি পরে এক রাজনৈতিক দলের মুখপত্র লিখিয়ে হিসাবেও কাজ করেন। আবার জেলে থাকবার সময় জেলের হাসপাতালেও কাজ করেন। এমনকি হণ্ডুরাসে থাককালীন এক ভয়ঙ্কর ট্রেন ডাকাতের সাথেও আলাপ হয়। অস্টিনে থাকবার সময় লেখালেখিতে হাতেখড়ি হবার পাশে গিটার, ম্যাণ্ডোলিন প্রভৃতি কয়েকটি যন্ত্র বাজাতে শেখেন, নাটকে অভিনয়ও করেছেন। 'সিটি কোয়াটেট গ্রুপে' গানও করতেন, এই গ্রুপটি যদিও মূলত মহিলাদের গ্রুপ ছিল। টিবি রুগী জেনেও প্রেম করতে শুরু করেন আথেল এস্টেস নামে এক ধনীর কন্যার সাথে। তাদের পরিবারের আপত্তিতে পালিয়ে বিয়েও করেন। তাদের প্রথম সন্তানও বাঁচেনি। 

    তেত্রিশ বছর বয়সে একটি ব্যাঙ্কে কাজ করবার সময় 'দ্যা রোলিং স্টোন' নামে একটি রম্য সাপ্তাহিক প্রকাশ করতে আরম্ভ করেনযদিও পত্রিকাটি সাধারন পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পারেনি এবং পোর্টারকে এই ম্যাগাজিনটিকে রক্ষা করতে তার নিজের কর্ম ক্ষেত্রের ব্যাঙ্ক থেকেই পাঁচ হাজার ডলার জালিয়াতি করতে হয়ম্যাগাজিনটির আয়ু ছিল মাত্র একবছর অদ্ভুত ব্যাপার হল প্রথমে ব্যাঙ্কের কেউ এই জালিয়াতির কথা ধরতেই পারেননি, এমনকি ব্যাঙ্ক প্রথমে তাদের রিপোর্টে 'নো বিল ফাইণ্ডিং' বা কোন বিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে রিপোর্ট দেয় প্রায় এক বছর পর যখন পুরো বিষয়টি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তখন পোর্টার ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে প্রথমে নিউঅরলিয়ানস ও পরে হনডুরাসে পালিয়ে যান শ্বশুরমশাই যদিও খবর পেয়েই আগাম জামিনের ব্যবস্থা করে রাখেন। এই হনডুরাসে প্রায় এগারো মাস থাকার পর অসুস্থ প্রথম স্ত্রী আতোলকে দেখতে আবার অস্টিনে ফেরত আসতে, যদিও তিনি মারা যান। (১৮৯৭ সালের ২৫শে জুলাই) পোর্টারও ধরা পরে যান, মতান্তরে আত্মসমর্পণ করেন বিচারে প্রথমে তার পাঁচ বছরের জেল হয়, পরে তার ভালো ব্যবহারের জন্য সাজা কমে তিন বছরের হয়ে যায়। জেল থেকে বের হবার পরেই তাঁর এগারো বছরের মেয়ের সাথে দেখা করতে পান, এরপর নিউইয়র্কে চলে আসেন, এবং প্রতি সপ্তাহে একটি করে গল্প প্রকাশিত হতে থাকে। দ্বিতীয় স্ত্রী লিণ্ডসে কোলম্যানও একজন লেখিকা ছিলেন। 'উইণ্ড অব ডেসটিনি' নামে তার লেখা একটি উপন্যাস আছে। অবশ্য ও'হেনরীর শরীর খারাপের মাঝে তিনি ছেড়ে চলে যান 

    শেষ গল্প 'ড্রিম' অসমাপ্ত রেখেই মারা যান ও'হেনরী। ছোটগল্পকার ও'হেনরীর গল্পকার হিসাবে মূল্যায়নে এই তথ্যগুলির আপাত ভাবে কোন ভূমিকাই নেই, কারণ কোন লেখককেই তার জীবনের মধ্যে খুঁজতে নেই, আবার লেখক মানে শুধু খাতা পেন নিয়ে বসে থাকা কোন ঐশ্বরিক শক্তি নয়, রক্ত মাংস, দোষগুনে ভরা একজন মানুষ। তাঁর লেখা পড়তে গেলে আগে তাঁর জীবন জানতে হবে বলে বর্তমান সময়ের অনেক সমালোচক মনে করেন। (হিস্টোরিসিজিম)


নবপ্রভাতের স্বাধীনতা সংখ্যার জন্য লেখা পাঠান। বিস্তারিত জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

***************************

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.