Click the image to explore all Offers

অণুগল্প।। সৃষ্টি ।। অশোক দাশ

 

  ছবিঋণ- ইন্টারনেট 

সৃষ্টি 

    অশোক দাশ 


অমল শিক্ষিত মার্জিত যুবক ।অমায়িক ব্যবহারে গ্রামের সকলেই তাঁকে ভালোবাসে । ছাত্র অবস্থা থেকেই তাঁর গল্প, কবিতার প্রতি টান ।সে মাঝে মাঝে কবিতা লেখে আর সহপাঠী বন্ধুদের শোনায় ।কেহ কেহ প্রশংসা করে উত্সাহ দেয়, কেউ  আবার তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে ।
         স্কুলের গন্ডি পার হয়ে অমল কলেজে ভর্তি হয় ।কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য পরীক্ষা দেওয়া হয়নি ।
          টিউশনি করে দিনাদিপাত করে।বাবা ঢালাই কারখানার শ্রমিক।দাদু, ঠাকুমা, ভাই- বোন করে ন'জনের বিরাট সংসার ।
        এই সময়ে ব্রিগেড জনসমুদ্রে পরিচয় হয় সুনীতার সাথে ।পাশের গ্রামের  শিক্ষিত মেয়ে ।
একই মতের পথিক হওয়ায় দুজনের মধ্যে অন্তরঙ্গতার কোন ঘাটতি ছিল না। দু'জনে দুজনকে ভালোবেসে  ফেলে ।ইতিমধ্যে অমলের দাদু-ঠাকুমা মারা গেছেন ।
       অমল চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছে ।চাকরি পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে।এই অবস্থায়  দু'পক্ষের  সম্মতিতে অমল- সুনীতার বিবাহ পর্ব মিটে যায় ।
     সুখে- দুখে অমল- সুনীতার এখন সুখের সংসার ।সুনীতা সংসারের সকলকে আপন করে নিয়েছে কোন যাদুমন্ত্রে সেই জানে ।
       ইতিমধ্যে  সুনীতার  মা হওয়ার খবর রটে যায় ।সে দিন অমলের এত আনন্দ হয়েছিল যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনি ।খুশিতে সে কবিতা লিখে সুনীতাকে শুনিয়ে ছিল ।কবিতার বর্ণে  বর্ণে  নতুন প্রজন্মের জয় গাঁথা ।সুনীতা অমলের  বুকে মাথা রেখে বলেছিল ' জানো ছেলে হলে নাম রেখো অনির্বাণ আর মেয়ে হলে অরুন্ধতী '।
       নির্দ্ধারিত সময়ে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে সুনীতা । এদিকে শুরু হয়েছে  অবিরাম  বর্ষণ , বন্যার  তান্ডব, মাঠ- ঘাট জলে থই - থই  করছে, হসপিটালে যাওয়ার সব পথ জলে পরিপূর্ণ ।এই অবস্থায়  বাড়িতেই  সন্তানের জন্ম দিয়ে সুনীতা  সকলকে  কাঁদিয়ে  চির ঘুমের দেশে চলে গেল । রেখে  গেল তাঁর  নাড়ি ছেড়া সৃষ্টি ।
      হঠাৎ  নদী বাঁধ ভাঙার খবর । অসহায়  মানুষের করুন আর্তনাদ।বাঁধ ভাঙা জলের স্রোতে অমল একহাতে সদ্যজাত শিশুপুত্র আর অন্য হাতে  তার  লেখার  পাণ্ডুলিপি, দুটোই তার প্রানের সৃষ্টি, তার সাধনার ফল । তাদের বাঁচাতে জীবন তুচ্ছ করে নিরাপদ স্থানে পৌচ্ছে স্বস্তির  নিঃশ্বাস ফেলে ।
     সারারাত  অমল নিজের বুকে চেপে শিশু পুত্রকে আগলে রাখে ।
       সকালে প্রথম সূর্যের আলো পড়ে  সদ্যজাত শিশু পুত্র অর্নিবাণ- এর মুখে । পিটপিট করে চোখ মেলে হেসে ওঠে ।
       অমল বলতে থাকে 'সুনীতা আমাদের সৃষ্টিকে বাঁচাতে পেরেছি, ওকে মানুষের মতো মানুষ করবো সুনীতা । অর্নিবাণ  দীপ শিখায় প্রজ্জ্বলিত হবে দশদিক । আমি ওকে শেখাবো জীবন জয়ের গান, উই শ্যাল ওভার কাম, আমরা করবো জয় ।
-----------------------------  
 
 
 

 
অশোক দাশ 
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পঃবঙ্গ ,ভারত 

       
 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.