আজো রোজের মতো নদীর পাড়ে এসে বসল। তবে একটাই পার্থক্য যে, রবি আজ একটু বেশি ক্লান্ত। সকালে আজ মাছ পেতে অনেক বেশি সময় লেগেছে। ফলে পরিশ্রমও বেশি হয়েছে। আসলে পাহাড়ে বৃষ্টি যত বাড়ছে,তোর্সার জলও তত বাড়ছে। ফলে নদীয়ালি মাছগুলো আর তেমন জালে পড়ছে না বিশেষ করে পুঁটি, বোরলি, তিনকাটা কিছুই আসছে না। তবে আজ কিছুটা বোরলি পেয়েছে।
ফলে মাছ ধরতে সময় ও শ্রম- দুটোই বেশি লাগলেও বিক্রি করতে বেগ পেতে হয়নি। বোরলি নিয়ে বাজারে গেলে খুব সহজেই বিক্রি হয়ে যায়। আমদানিও বেশ ভালই হল। এই তোর্সার সাথে রবির সখ্যতা আজন্ম। ওর বাবাও মাছ ধরত। বলতে গেলে ওদের পারিবারিক ব্যবসা। রবিও ছোট বয়স থেকেই বাবার সাথে তোর্সায় মাছ ধরে। নদীটির প্রতিটি কোণ ওর চেনা। কত নতুন ঢেউ আসে। নতুন জলের মতোই যেন প্রতি বছর নবযৌবন আসে। এবছর নদীর গতিপ্রকৃতি একটু আলাদা ঠেকছে। ঘোলা জল প্রতি বর্ষাতেই আসে, তবে এবার জলের রংটা একটু আলাদা। পাহাড়ের গাছ ভেঙে প্রতিবারই আসে, তবে এবার তোর্সা অনেক বেশি পাড় ভাঙছে। যেন কাছে চলে আসতে চাইছে। আরো আরো কাছে। শহরকে ঘিরে নদীর যে বাঁধটা নতুন হয়েছে, তার পাশে অনেক বাড়ি হয়েছে। বসতি বাড়ছে দিন দিন। এভাবে কী নদীকে চটিয়ে দিচ্ছে মানুষ! রবি তো নদীকে কাছ থেকে চেনে। নদীও ওর কথা শোনে, বোঝে। নদীরও যেন কেমন মুখভার, রাগ রাগ যেন! রবি একান্তে বসে তোর্সার পাশে। শান্ত করতে চায় তোর্সাকে। তোর্সা যে ওর খুব প্রিয়।
অভিমান ঠিকরে বেরিয়ে আসতে থাকে গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে।
............