Click the image to explore all Offers

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সাহিত্যচর্চা ।। ইউসুফ মোল্লা

 


     ছবিঋণ- ইন্টারনেট

 

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সাহিত্যচর্চা

ইউসুফ মোল্লা

 

      বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার  সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সেখানে জানতে চেয়েছিলাম, 'আপা, আপনি বর্তমানে কী লিখছেন?'  আমি তাঁকে 'আপা' বলে ডাকি। আপা বলছিলেন, "আমি 'নদীর প্রেমের রঙিন সুতো' নামে একটি উপন্যাস শুরু করেছি। ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে পদ্মা নদীর প্রেম হয়েছে— এভাবে উপন্যাসটি লিখব। পাশাপাশি নদীর দুঃখ-কষ্টও থাকবে।" ঠিক যেন একজন প্রেমিক (নদ) আর একজন প্রেমিকা (নদী) -র আনন্দঘন মুহূর্ত ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা । সাথে সেই প্রেমের মধ্যে নানা বাধা-বিপত্তি আসবে। শেষপর্যন্ত সেইসব দুঃখ-কষ্টকে অতিক্রম করে প্রেমের জয় যেন ফুটিয়ে তুলছেন লেখিকা। এছাড়া ভবিষ্যতে যে লেখা নিয়ে পরিকল্পনা আছে, তা হলো— একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষ যারা ভারতে শরণার্থী ছিলেন তাদের পটভূমিতে উপন্যাস লিখবেন। এই বিষয়ে নানা বই থেকে পড়াশোনা করছেন। আমার কাছ থেকে কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র সহ নানা লেখকের অনেক গ্রন্থ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন। আশা করছি লেখিকার অন্যান্য গ্রন্থের মতো এটিও বিশিষ্ট মহল সহ পাঠকের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলবে। তাঁর নানা গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে ব্যাপক সাড়া ফেললেও তিনি আক্ষেপের সুরে একটি বিষয় জানালেন, "সমস্যা একটাই আমাদের সাহিত্য অনুবাদ হয় না"। যদিও তাঁর 'হাঙর নদী গ্রেনেড' উপন্যাসসহ বেশ কয়েকটি বই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। বিভিন্ন ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। তিনি নতুন যারা লেখালেখিতে আসছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, " লেখক-পাঠক সমবেত হয়ে বাংলা সাহিত্য অনুবাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেবে, এই বার্তা দিতে চাই সবার কাছে। এই সময়ে এটি একটি জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা সাহিত্য বিশ্বের পাঠকের সামনে পৌঁছে যাক।"

 আমি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন'কে চিনেছিলাম কলেজে পড়ার সময়। সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম পড়াই ছিল চর্যাপদ। বাংলা ভাষার প্রথম নির্দশন হিসাবে চর্যাপদ-কেই ধরা হয়ে থাকে। এই চর্যাপদকে অবলম্বন করে বর্তমানে কোন সাহিত্যিক কোন গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেখানেই উঠে আসে  'নীল ময়ূরের যৌবন' উপন্যাসটি। তখন প্রথম সেলিনা হোসেন নামটা শুনি। চর্যাপদে প্রাচীন সমাজের শিকড়ের সাথে যে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ছিল তার সামগ্রিক চিত্র এখানে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এইরকম এক জীবনীভিত্তিক উপন্যাস পড়ার পর আমি আগ্রহী হয়ে উঠি লেখিকা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে। তারপর 'বর্ণিক' পত্রিকা সম্পাদনা করার সুবাদে পরিচয় গড়ে ওঠে তাঁর সঙ্গে। কারণ, তিনিও এই পত্রিকার উপদেষ্টামন্ডলীতে আছেন। বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই 'নীল ময়ূরের যৌবন' উপন্যাসটি পাঠ্য হয়ে আছে। এবং ১৯৮৩ সালে এই উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ হয়। সাহিত্যিক নির্মাণকে ভেঙে নতুন আঙ্গিকে সাহিত্য সৃষ্টির ধারায় সেলিনা হোসেন রেখেছেন প্রাতিস্বিক প্রতিভার স্বাক্ষর। চর্যাপদ ভেঙে যেমন নতুন গ্রন্থ রচনা করেছেন, তেমনি মনসামঙ্গল কাব্য ভেঙে নতুনভাবে গড়ে তোলেন 'চাঁদবেনে'। আবার চণ্ডীমঙ্গলের আদলে নির্মাণ করেছেন 'কালকেতু ও ফুল্লরা'। মূল রচনা ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও লেখিকার কলমে তা এক অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত হয়েছে এই ত্রয়ী উপন্যাস। তিনটি উপন্যাসের মাঝেই শোনা যায় শ্রেণিসংগ্রাম-চেতনার অভিন্ন এক সুর।

 স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স যখন সবেমাত্র দুই দশক, তখন সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন লিখেছিলেন, 'সমাজ আজ এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, শুধু একজন বেগম রোকেয়ায় হবে না, হাজার হাজার রোকেয়া চাই।' ব্যতিক্রমী কাহিনি বিছিয়ে বিছিয়ে সমাজের অগ্রগমন আর আলোকপ্রাপ্তিতে মাপতে চাওয়ার ভিতরে যে গলদগুলো আছে, তা হয়তো লেখিকা পরোক্ষে ধরিয়ে দিতে চান। ১৯৯৩ সালে সেলিনা হোসেন লিখেছেন— 'একাডেমিক রিসার্চ থেকে যোগাযোগের জায়গায় আসছি... সেখান থেকে উপন্যাস নিচ্ছি, আবার সাহিত্য থেকে রিসার্চের জায়গায় যাচ্ছি। অধ্যাপক পাস্কাল জিঙ্কের গবেষণার বিষয় ছিল সাউথ এশিয়ার লিটারেচারে প্রতিফলিত ভায়োলেন্স। আমার উপন্যাসকে এই গোত্রে ফেলব কিনা এই চিন্তা থেকে তাকে বলি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভায়োলেন্স নয়। তা লিবারেশন ওয়ার।' ওপার বাংলার সাহিত্যের সবুজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধ সোনালি ধানের মতোই উজ্জ্বল হয়ে আছে।

   ২০০৫ সাল থেকে শিকাগোর ওকটন কলেজের সাহিত্য বিভাগ দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য কোর্সে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের 'হাঙ্গর নদী গ্রেনেড' উপন্যাসটি পাঠ্যসূচিভুক্ত হয়। এই হাঙ্গর নদী গ্রেনেড উপন্যাসের শেষ ঘটনাটি এইরকম, যেখানে সে তার ছেলেকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন । যেটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি সত্যি ঘটনা। ঘটনাটি লেখিকাকে বলেছিলেন, তাঁর শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল হাফিজ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনে সাংবাদিকতার কাজ করেছেন। সেই সূত্রে যশোরের কালীগঞ্জের এই ঘটনাটি জানতে পারেন। ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সঙ্গে প্রথম ঢাকায় ঢোকার পরে লেখিকার বাড়িতে এসেছিলেন সেই শিক্ষক। এই ঘটনাটি বলে তাঁকে বলেছিলেন, এর উপরে একটি গল্প লিখতে। তবে উপন্যাসের বাকি চরিত্র এবং অন্যান্য ঘটনা লেখিকার বানানো বলে জানিয়েছেন। লেখিকা সেলিনা হোসেন শৈশব থেকে বুড়ি চরিত্রটি সৃষ্টি করেন এমনভাবে, যার সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। যার ফলে স্বাধীনতার জন্য এমন একটি সিদ্ধান্ত সে নিতে পেরেছিল। আমাদের চারপাশের মানুষের মধ্য থেকেই লেখিকা উপন্যাসের চরিত্র খুঁজে নেন। তারপর তাকে কল্পনার আলোকে পূর্ণ করে দেন। হাঙর নদী গ্রেনেড পড়ে মুগ্ধ হন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তারপর ১৯৭৫ সালের ১৩ আগস্ট এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি চেয়ে তিনটি চিঠি লেখেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যা করা হলে, ১৯৭৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তাজনিত কারণে ছবিটি নির্মাণ করতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম হাঙর নদী গ্রেনেড চলচ্চিত্রটি নির্মিত করেছিলেন।

  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে  'পূর্ণ ছবির মগ্নতা' নামে আর একটি জনপ্রিয় উপন্যাস লিখেছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, 'রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভূখন্ডে যে কয় বছর স্থায়ীভাবে বাস করেছিলেন, সেই পটভূমিতে লিখেছি পূর্ণ ছবির মগ্নতা। রবীন্দ্রনাথের জীবনের পূর্ণতায় আমি দেখাতে চেয়েছি এখনকার পূর্ববঙ্গের নদী ও দরিদ্র মানুষের জীবন। আমাদের ভূখন্ডে না এলে জনজীবন দেখার অভিজ্ঞতা তিনি পেতেন না। এখানে বসে তিনি যে গল্পগুলো লিখেছিলেন আমি সেই গল্পের কাহিনি জড়িয়েই গল্পের চরিত্রের নামও নিয়েছি। এভাবে আমি রবীন্দ্রনাথের সময় ও জীবনকে নতুন আঙ্গিকে দেখার চেষ্টা করেছি।' এইভাবে যে বাংলা সাহিত্যের নোবেল বিজয়ীকে তুলে ধরা সম্ভব, তা একমাত্র সেলিনা হোসেনেই পারেন। এছাড়াও 'যমুনা নদীর মুশায়রা' উপন্যাসে কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন ইতিহাসের সঙ্গে সাহিত্যের যথার্থ মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। 'গালিব উর্দু ভাষার দুরূহতম কবি' (আবু সায়ীদ আইয়ুব)। মির্জা গালিবকে নিয়ে নানা ধরনের বই রচিত হয়েছে। কারণ তাঁর জীবনদর্শনের নানা দিকগুলি নানাজনকে নানাভাবে আকৃষ্ট করেছে। সেই গালিবকে অনুপুঙ্খ নানা বিবরণে একজন অসাধারণ শক্তিশালী কবির মানসদর্শন ফুটিয়ে তুলেছেন এই উপন্যাসে।

 প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ছোট মেয়ে লারা মারা যাওয়ার পর ২০০০ সালে একটি উপন্যাস লেখেন তাঁর উপর। লারা স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার। হয়েও ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট ছিলেন সে। এমনকি পাইলট হওয়ার পর মাকে নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর উপর বেশ কিছুক্ষণ ঘুরিয়েছিলেন। ইচ্ছে ছিল মাকে আকাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ দেখানোর, কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না। বরিশাল থেকে ঢাকা আসার সময় ল্যান্ডিংয়ের মাত্র তিন মিনিট আগে প্লেনে আগুন ধরে যায়, লারার মৃত্যু হয়। লেখিকার জীবন অনেকটাই খরস্রোতা নদীর মতো। তাই তাঁর লেখাতে বারবার উঠে এসেছে নিজের যাপিত জীবনের গল্প।

  ছোটবেলা থেকেই আদর্শ কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ছিলেন দুরন্ত স্বভাবের। মাঠে-ঘাটে, জেলেদের সঙ্গে মাছের ভেড়িতে ঘুরে বেড়াতেন। তবে মেয়ে হওয়াতে বাড়িতে বসে থাকতে হবে এমন বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না তাঁর পরিবারে। ছোটবেলায় সব বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নৌকা করে ঘুরে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে অদ্ভুত আনন্দ খুঁজে পেতেন। তিনি মাঝিদের থেকে শিখেছিলেন কীভাবে নতুন প্রজন্মকে যত্ন করে বড়ো করতে হয়। তাই তিনি সবসময় চেয়েছেন তাঁর উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ থেকে যেন নতুন প্রজন্ম কিছু শিখতে পারে। একবার ক্লাস এইটে পড়া একটা মেয়ে এসে সেলিনা হোসেনকে বলেছিলেন, 'আপনার সোমেন চন্দের উপর লেখা উপন্যাসটা সবচেয়ে ভালো।' তিনি অবাক হয়ে যান, কারণ এই বয়সে একজন মেয়ে কোনও হালকা প্রেমের উপন্যাস না পড়ে সোমেন চন্দের জীবনভিত্তিক উপন্যাস পড়ছে। যেখানে শহীদ মুনির চৌধুরীর কথাও আছে। মুনির চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের সময় জেলে গিয়েছিলেন। জেলে বসে একটি নাটক লিখেছিলেন, তার নাম 'পবন'। একাত্তর সালে মুনির চৌধুরী মারা যাওয়ার পরও সারা দেশে কোথাও তাঁর কবর হয়নি। তাঁর মৃতদেহ কোথায় গেল, সেই উত্তর কেউ জানে না। তাই প্রবল রাগ ও ঘৃণার সাথে বিষয়টি বর্ণনা করেছিলেন। এইসব উপন্যাসের মাধ্যমে সোমেন চন্দ, মুনির চৌধুরীর মতো বিশিষ্ট মানুষদের এই প্রজন্মের সামনে বাঁচিয়ে রাখতে চান তিনি। দেশের অতীত গৌরবের কথা বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার একটি অদৃশ্য দায়ভার সব সময় তিনি বহন করে চলেছেন।

   কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন শুধু বড়োদের জন্য লেখেননি। শিশুদের জন্যও বহু বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছেন। যদিও অনেক পরে তিনি ছোটোদের জন্য লেখা শুরু করেছিলেন। প্রথমে ভেবেছিলেন শিশুদের জন্য তিনি লিখতে পারবেন না। তাই দীর্ঘদিন চেষ্টাও করেননি। কিন্তু ১৯৯২ সালে 'সাগর' উপন্যাসটি দিয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখার সূত্রপাত করে বুঝিয়ে দেন এখানেও তিনিই সেরা। এই সাগর উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি জীবনযুদ্ধকেও তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধা আরিফ ও হারুনের প্রস্তাব শুনে 'অসম্ভব' বললেও শেষ পর্যন্ত কনভয়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আত্মাহুতি দেন। এই ঘটনা যুদ্ধকালীন সময়ের একটি নির্মম সত্য। সেই সত্যকে সেলিনা হোসেন প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন। কিশোর পাঠকদের মনে দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো সম্পর্কে নিঃসন্দেহে একটি ধারণা জন্মাবে। আরেকটি উপন্যাস 'জ্যোৎস্নার রঙে আঁকা ছবি' -তে ঘরের জড় পদার্থের জীবজন্তু বা আসবাবপত্রের সাথে কথোপকথন। শিশুদের মনের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলি যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেলিনা হোসেনের শিশুসাহিত্যের ভান্ডার অনেক বড়ো, ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময়। সবগুলো লেখার উদাহরণ দেওয়া সম্ভব নয় এই ছোট্ট পরিসরে।

  লেখিকা সেলিনা হোসেন লেখিকা হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সাহিত্য জগতে আসেননি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল একটা চাকরি। তাঁর শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল হাফিজ একদিন তাঁকে বললেন, 'তোমার যত গল্প আছে সেগুলো নিয়ে একটি বই বের করো। তাতে তোমার চাকরি পেতে সুবিধা হবে।' তারপর টাকার জন্য বাবার কাছে গেলেন। বাবা-মা দু'জনেই বললেন, চাকরির জন্য বই, তাহলে তো ভালোই। হোক একটা বই। বইটি থাকায় সত্যিই তাঁর চাকরি হয়েছিল। পাবলিক সার্ভিস কমিশনে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে দেখেন বোর্ডে বসে আছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী। তিনি বললেন, 'তোমার স্যার আমাকে তোমার বইটা দিয়েছিলেন। আমি সেটা টেলিভিশনে রিভিউ করেছি।' বইয়ের সুবাদে পরিচিতি পেয়েছিলেন সেদিন। যদিও তিনি প্রথম গল্প লিখেছিলেন একটি সাহিত্য প্রতিযোগিতায়। গল্পটি প্রথম হয়েছিল। বর্তমানে তিনি সারা দেশ থেকে নানা সন্মানে সন্মানিত হয়েছেন। এত প্রাপ্তির পরও তিনি আজও লিখে যাচ্ছেন। আরো একটি ভালো বই পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য। তাই আমরা আজও অপেক্ষায় থাকি তাঁর নতুন বই প্রকাশের অপেক্ষায়।

 -----------------------

ঋণস্বীকার:

১) বেগম রোকেয়াকে আমাদের কেন প্রয়োজন, পৃষ্ঠা-৩৭৩

২) যোগাযোগের মৌলিকত্বে সাহিত্য ও সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা-৪৪

৩) ইমরান মাহফুজের নেওয়া সেলিনা হোসেনের সাক্ষাৎকার

৪) সেলিনা হোসেন ও বাংলা কথাসাহিত্য— শাহনাজ পারভীন

------------------



ইউসুফ মোল্লা

উত্তর অঙ্গদ বেড়িয়া, ট্যাংরাখালী, ক্যানিং, 

দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ৭৪৩৩২৯


Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.